জুমবাংলা ডেস্ক: এবার ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স। পদ্মা সেতুর পাড়ি দিয়ে ঢাকাসহ দেশের দূরবর্তী জেলা থেকে হাজার-হাজার দর্শণার্থী বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে যাচ্ছেন।
আজ সকাল থেকে বিভিন্ন জেলার দর্শনার্থীরা টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতার সমাধিতে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সাথে-সাথে শিশু, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের পদচারণায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ মুখারিত হয়ে ওঠে।
দর্শনার্থীরা সমাধিসৌধে প্রবেশ করে বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা শেখ সায়েরা খাতুনের কবর জিয়ারত করেন। তারপর তারা দোয়া-মোনাজাত করেন। অনেকে বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর দর্শনার্থীরা বঙ্গবন্ধুর আদি পৈতৃক বাড়ি, হিজতলা চত্বর, বঙ্গবন্ধুর বাল্যকালের খেলার মাঠ, বকুলতলা চত্বর, পুকুর চত্বর, পাবলিক প্লাজা, সমাধিসৌধ মসজিদ, বঙ্গবন্ধু সংগ্রহশালা, লাইব্রেরি, ক্যাফেটোরিয়া, খোলামঞ্চ ঘুরে-ঘুরে দেখেন। এছাড়া দর্শনার্থীরা বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের সবুজ বনানীর ছায়তলে বিভিন্ন চত্বরে বসে সময় কাটান।
বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ঈদের ছুটিতে সময় কাটাতে পেরে বিভিন্ন বসসের মানুষ উচ্ছসিত ও উদ্বেলিত।
ঢাকা হলিক্রস স্কুল এ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী পূর্বা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জতিরপিতা। তিনি দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করে আমাদের একটি দেশ দিয়ে গেছেন, তাঁর জন্য আমরা আত্মপরিচয় পেয়েছি। ঈদের ছুটিতে আমি বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে এসে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীরশ্রদ্ধা জানাতে পেরে গর্বিত। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুঁকে ধারণ করে বড় হতে চাই।
ঢাকার মোহাম্মদপুর প্রিপেটারি স্কুল এ্যান্ড কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্রী নিকিতা বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে এই প্রথম এসেছি। পাঠ্যবইতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আজ রোববার টুঙ্গিপাড়া এসে ইতিহাসের কাছাকাছি এসে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নতুন-নতুন তথ্য জানতে পেরেছি। এতে আমি নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারছি। এতে আমি ধন্য মনে করছি।
ঢাকার যাত্রাবাড়ির শামছুল হক খান স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্র আব্দুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে নাড়াইল জেলার বড়নাল গ্রামে নানা বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। সেখান থেকে টুঙ্গিপাড়া এসেছি। বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ ঘুরে দেখেছি। বেশ ভাল লেগেছে। এখানে এসে ঘুরতে-ঘুরতে সময় কেটে যায়।
চট্টগ্রাম শহরের জামালখান রোডের গৃহবধূ রূপালী বড়ুয়া (৫০) বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধেক সময়ের মধ্যে টুঙ্গিপাড়া এসেছি। এখানে ৫ ঘন্টা সবুজ বনানীর ছায়াতলে সময় কাটিয়েছি। ঘুরে সব কিছু দেখেছি। পরিবারের সবাই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ ঘুরে আমরা মুগ্ধ।
ঢাকার মীরপুরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা আমগীর সিরাজী (৭৫) বলেন, অমি ইস্ট পকিস্তান ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলাম। সেই সুবাদে বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার ভাল সম্পর্ক ছিল। তিনি আমাকে জনতা ব্যাংকে চাকরি দিয়েছিলেন। সেই চাকরি দিয়েই আমি আমার ছেলে-মেয়েদের স্টাবিলিশ করেছি। আজ স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, নাতি-নাতনী নিয়ে টুঙ্গিপাড়া এসেছি। বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করেছি। তাঁর জন্য দোয়া-মোনাজাত করেছি। এখানে এসে আমি আবেগে-আপ্লুত।
আমগীর সিরাজীর স্ত্রী শিরিন সিরাজী (৬৮) বলেন, আমি মহিলা আওয়ামী লীগের ঢাকা উত্তরের সিনিয়র সভাপতি। আমরা আওয়ামী পরিবার। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু ঘুমিয়ে আছেন। এটি আমাদের তীর্থ ভূমি। এর আগে ২ বার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে টুঙ্গিপাড়া এসেছি। তখনকার অনুভূতি আরআজকের অনুভূতি আলাদা।
তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে স্বামী, ছেলে, মেয়ে, নাতী, নাতনী নিয়ে এখানে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। তাঁর জন্য দোয়া মোনাজাত করেছি। এটি জীবনের একটি আলাদা অনুভূতি। ভাষায় ব্যক্ত করার নয়।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হয়েছে ঈদের আগে। ঈদে এর প্রভাব পড়েছে। পদ্মা সেতুর বদৌলতে ঢাকাসহ দেশের দূরবর্তী জেলা থেকে হাজার-হাজার দর্শণার্থী বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আসছেন। তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। তাঁর জন্য দোয়া মোনাজাত করছেন। তবে গত ঈদের তুলনায় এই ঈদে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে দর্শণার্থী সমাগম অনেক বেশি।-বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।