অনিল চন্দ্র রায়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: পাঁচ কন্যা সন্তান থাকার পর আবারও একসাথে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কুড়িগ্রামের এক দরিদ্র দম্পত্তি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সদ্য জন্ম নেয়া তিন কন্যাকে দত্তক দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এই দম্পত্তির এক স্বজন।
জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ নওদাপাড়া গ্রামের মৃত্যু আইয়ুব আলীর বড় মেয়ে ফাতেমার ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নগরাজপুর গ্রামের দিনমুজুর সাইফুর রহমানের সাথে ২০ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে এক এক করে ৫টি কন্যার জন্ম হয়। বড় কন্যাকে এক বছর আগে বিয়ে দেন। বাকি চারজনের মধ্যে একজন নবম শ্রেণি, একজন সপ্তম শ্রেণি এবং দুইজন শিশু শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
দরিদ্য পরিবারে এতগুলো সন্তান নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে দিন কাটে ফাতেমা-সাইফুর দম্পত্তির। এর মাঝে পুত্র সন্তানের প্রত্যাশায় আবার গর্ভধারণ করে ফাতেমা।
সন্তান প্রসবের জন্য মায়ের বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদের নওদাপাড়ায় যান ফাতেমা। ফাতেমার মা রহিমা বেগম নিজেও গরীব। বাড়ির পাশের হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। গত সোমবার (১২ অক্টোবর) বিকালে সেখানেই একসাথে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ফাতেমা। এক সাথে তিন কন্যা সন্তান পৃথিবীতে আসার খবরে খুশি হতে পারেনি ফাতেমার পরিবার এবং আত্মীয় স্বজন।
ফাতেমার মামা মেহের আলী জানান, ‘জন্মের পর তিন শিশুর শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলেও ফাতেমার শারীরিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। ছয়দিনেও বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে নাই সে।
তিনি আরও জানান, ‘ফাতেমা এখনো অজ্ঞানের মতো অবস্থায় আছে। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তবে চিকিৎসা চলছে। ফাতেমার স্বামী সাইফুর রহমান এই খবরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন।’
মেহের আলী বলেন, তাদের অভাব অনটনের সংসার এবং আগের পাঁচ কন্যা সন্তান থাকায় সদ্য জন্ম নেয়া তিন কন্যা সন্তানকে দত্তক দেয়ার চিন্তা করে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেয়া হয়েছিলো। তবে এখন সীদ্ধান্ত বদলানো হয়েছে। সন্তানদের মা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দত্তক দেয়া হবে না।
কন্যাদের পিতা সাইফুর রহমান জানান, আল্লাহ যা করেছেন তা ভালোর জন্য করেছেন। কষ্টের সংসার হলেও তাদের মানুষ করতে হবে।
সাইফুরের প্রতিবেশি বাবুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সাইফুরের বাড়ির ভিটে ছাড়া চাষের তেমন জমিজমা নেই। সে কখনো সবজি বিক্রি করে আবার কখনো দিনমুজরি করে সংসার চালায়। এর মধ্যে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ায় তার (সাইফুরের) মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।
ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নে পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাবু জানান, ওই তিন কন্যা শিশুকে দত্তক দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সন্তান মানুষ করার জন্য আগামীকাল ( রবিবার) ওই পরিবারটিকে চাল, ডাল, আটা ও দুধসহ নগদ আর্থিক সহায়তাসহ সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুর রহমান জানান, এ বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। তারপরেও খোঁজ খবর নিয়ে ওই তিন সন্তানকে মানুষ করার জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।