পানামা সেন্ট্রাল আমেরিকার একটি দেশ। মানচিত্রে এই দেশের আকার অনেকটা ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের মতো। পানামা নামের অর্থ অফুরন্ত মাছ, গাছ আর প্রজাপতির দেশ। অন্য অনেক নামের মতো এটি নিয়েও বিভিন্ন মতবাদ চালু আছে। এই যেমন কেউ বলেন অফুরন্ত মাছ পাওয়া যায়, এমন একটি জেলে গ্রামের নামানুসারেই এই নাম। কেউবা বলেন, নামটি এসেছে স্থানীয় প্রজাতির এক গাছের নাম থেকে।
আবার কেউ কেউ বলেন, এখানকার প্রথম আগন্তুকেরা আগস্ট মাসে এসেছিল বলে চারদিকে প্রচুর প্রজাপতি দেখে এই নাম দেয়। যাহোক, শেষ পর্যন্ত সব বিতর্কের অবসান ঘটায় এই দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রচলিত সব মতের সমন্বয় ঘটিয়ে এরা অফুরন্ত মাছ, গাছ আর প্রজাপতি নামটিকেই স্বীকৃতি দেয়।
পানামার পতাকাবাহী কোপা এয়ারলাইনস নিউইয়র্ক থেকে পানামা হয়ে কোস্টারিকা যায়। যেহেতু পানামা সিটি কোপা এয়ারলাইনসের অপারেটিং হাব, তাই এরা এখানে যাত্রাবিরতির সুবিধা দেয়। অর্থাৎ যাত্রীরা চাইলে এক টিকিটে, এক খরচেই বিরতি নিয়ে পানামা সিটিতে থাকতে বা ঘুরতে পারেন। এটা অনেকটা আমাদের দেশে একসময় প্রচলিত ‘এক টিকিটে দুই ছবি’র মতো। অর্থাৎ এক যাত্রাতেই আরেকটি নতুন জায়গা ঘোরা হয়ে যায়।
পানামা নামটি শুনলেই প্রথমেই মনে আসে পানামা খালের কথা। মানুষের তৈরি এ রকম দুটি বড় খালের উদাহরণ পৃথিবীতে আছে। একটি মিসরের সুয়েজ খাল, আরেকটি পানামা খাল। মাত্র ৮২ কিলোমিটার লম্বা এই পানামা খালের সুবাদেই প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আটলান্টিক মহাসাগরে যেতে জাহাজ চলাচলের দূরত্ব অনেক কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু জায়গা থেকে এই দূরত্ব ৮ হাজার থেকে ১৫ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত কমে গেছে।
এটি মানুষের তৈরি একসময়ের এক মেগা প্রজেক্ট। সবাই জানি যে যুক্তরাষ্ট্রের অধীনেই পানামা খাল তৈরি হয়েছে। তবে কাজটি কিন্তু প্রথম শুরু করেছিল ফরাসিরা। ১৮৮১ সালে শুরু করে ১৮৯৪ সালেই কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয় ইয়েলো ফিভার ও ম্যালেরিয়ার কারণে, যাতে আনুমানিক ২২ হাজার শ্রমিকের জীবনও চলে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ১৯০৪ সালে কাজটি আবার শুরু করে এবং ১০ বছর পর, অর্থাৎ ১৯১৪ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।
পানামা নামটি শুনলে অনেকে অবশ্য আর্থিক কেলেঙ্কারির গন্ধও পায়, অর্থাৎ ফাঁস হয়ে যাওয়া বিখ্যাত পানামা পেপারের কথা মনে করে। পৃথিবীর অনেক নামীদামি মানুষের নামই এতে এসেছে। কর ফাঁকি, শেল কোম্পানি, অর্থ পাচার—এসব কেলেঙ্কারি আরকি। আমাদের দেশের কয়েকজন মহাজনের নামও নাকি এই পেপারে এসেছে। এক হিসেবে গরিব দেশের মানুষ হয়ে পানামা পেপারে নিজেদের মানুষদের নাম দেখাটাও হয়তো গর্বেরই বিষয়!
পানামা সিটির এই বিমানবন্দর কোপা এয়ারলাইনসের অপারেটিং হাব হওয়ায় এখানে এদের একটি বড় লাউঞ্জ আছে। প্রায়োরিটি পাস ব্যবহার করে রাতের খাবার খেতে লাউঞ্জে ঢুকি। এখানে বসার ব্যবস্থা ভালো, শান্ত রুম, টিভি রুম, রেস্টরুম, মিটিং রুম, টয়লেট—সবই ঝকঝকে, তকতকে।
খাবার বলতে লাতিন আমেরিকার প্রচলিত কিছু খাবার। যদিও আমার ভালো লেগেছে আমাদের দেশের প্যাটিস ও পুলি পিঠার মতো দেখতে ভেতরে চিকেন দেওয়া এম্পানাদাস। খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে নির্ধারিত গেটে পৌঁছে যাই। গন্তব্য এবার সেন্ট্রাল আমেরিকায় সুখী মানুষের দেশ হিসেবে পরিচিত কোস্টারিকা। পানামার অফুরন্ত মাছ, গাছ আর প্রজাপতি দেখার সুযোগ হবে আপনার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।