নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: অকৃষি খাতে। ফসলের মাঠের মাঝখানে চলছে ভারী ভেকু মেশিন। টানা প্রায় ৫০ একর ফসলি জমি ইস্পাত ও রঙিন টিনের সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। কৃষিজমির মাটি কেটে সেখানে কল-কারখানা বহুতল ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মাঝুখান এলাকায় ফসলি জমি নষ্টের পাশাপাশি সরকারি খাসজমি দখলে নেয়ার তৎপরতা চলছে। এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন কৃষকরা।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, সরকারি জমি ঘিরে তোলা টিনের দেয়াল সরিয়ে নেয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটিকে অনেক আগেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে চাইনিজ প্রতিষ্ঠান এলডিসি গ্রুপ সেখানে পান্ডা স্যু ইন্ডাস্ট্রিজের ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্যে মাঝুখান পূর্বপাড়া এলাকার মাঝুখান-মুরাদপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে বেশ কয়েক একর ফসলি জমি কিনে আরো অনেকের জমি ঘিরে তোলা হয়েছে সীমানা প্রাচীর। ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ভবন তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
কৃষকরা বলছেন, পান্ডা ইন্ডাস্ট্রি ৫০ একরের মতো ফসলি জমি ঘিরে তাদের কারখানা ও কার্যক্রম গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে কৃষিজমি আরো কমে আসবে এবং চাষাবাদের পরিবেশও নষ্ট হবে। আশপাশের পরিবেশের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ভুক্তভোগী এম সওকত হোসেন বলেন, মাঝুখান পূর্বপাড়া বিলে আমার ১০৮ শতাংশ কৃষিজমি রয়েছে। কিন্তু পান্ডা কোম্পানি আমার জমির আশপাশের সব জমি কিনে ফেলে শিল্পকারখানা তৈরির ভূমি প্রস্তুত করছে। প্রথমে তারা আমার জমিটুকু কেনার জন্যে এলাকার কয়েকডজন প্রভাবশালী ব্যক্তি দিয়ে আমাকে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু আমি তাতে রাজি না হওয়ায় তারা তাদের কেনা জমিতে সীমানা বাউন্ডারি দেওয়ার নামে আমার ক্ষেতটাকেও প্রাচীরের মধ্যে ঘিরে ফেলেছে। এখন আমার জমিতে যাওয়ার মতো কোনো রাস্তাই নেই।
কৃষক ঠান্ডু মিয়া বলেন, আমার বাবা মৃত বাবর আলী আর এস ১২০৫, এসএ ৫০০ নং দাগে ৯০ শতাংশ ডিসি খাসজমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে আসছিল। বাবার মৃত্যুর পর আমি সেই জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করছি। সম্প্রতি পান্ডা কোম্পানি সাবেক মেম্বার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে রঙিন টিনের প্রাচীর দিয়ে আমার সেই জমি দখলে নিয়েছে। আমাকে ক্ষেত ছেড়ে দিচ্ছে না, জমির মূল্যও দিচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য বেশ কয়েকবার সফিপুর ভূমি অফিস ও ইউএনওর কাছে গিয়েছিলাম। সবাই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু পান্ডা আমার জমি এখনো জোর করে দখলে রেখেছে।
কৃষক লোকমান হোসেন বলেন, আমরা মাঝুখান পূর্বপাড়া বিলে আমাদের ৫০ শতাংশ জমিতে সব সময়ই কৃষিকাজ করে আসছি। পান্ডা আমাদের সেই জমি কেনার জন্যে সাবেক মেম্বার মোশাররফ হোসেনসহ স্থানীয় অনেক লোকজনের মাধ্যমে আমাকে চাপ দিয়ে আসছে। পান্ডা তাদের কেনা জমিতে কারখানা নির্মাণের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ শুরু করেছে। তাদের কাজের ফলে আমাদের জমিতে পানি জমতে শুরু করেছে। এভাবে পানি জমতে থাকলে ভবিষ্যতে আর আমরা কৃষিকাজ করতে পারব না।
এলডিসি গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোরশেদ আলম লিটন জানান, কোম্পানির টাকা আছে, জমি কিনতেছে। আমরা কোনো ফসলি জমি নষ্ট করছি না। আর ঠান্ডুর লিজ নেয়া সরকারি জমি আমার জানা মতে আমরা দখলে নেইনি। আমাদের কেনা জমিতে আমরা কাজ করছি। সেখানে কারখানা হবে, নাকি কৃষিকাজ হবে, সেটা পরের বিষয়।
এ ব্যাপারে সাবেক মেম্বার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, ‘কৃষিজমি নষ্ট করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। পান্ডা গ্রুপ সরকারি যে জমিটুকু দখলে নিয়েছে, সেই জমি থেকে তাদের টিনের দেয়াল সরিয়ে নেয়ার জন্যে আগেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।