আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জনপ্রিয় অনলাইন গেম পাবজির মাধ্যমে শুরু হওয়া এক ভারতীয় তরুণ ও পাকিস্তানি তরুণীর প্রেমের সমাপ্তি ঘটেছে কারাগারে। এ ঘটনা চাউর হওয়ার পর এ নিয়ে সাড়া পড়ে গেছে ভারতীয় গণমাধ্যমে।
শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৭ বছর বয়সী সীমা গোলাম হায়দার ও ২২ বছর বয়সী শচীন মীনার পরিচয় হয় বছর দুয়েক আগে, পাবজির প্ল্যাটফর্মে। শচীনের সাথে থাকতে সম্প্রতি অবৈধভাবে ভারতে চলে যান সীমা।
সীমা তার চার সন্তানকে নিয়ে ভারতে ঢুকে শচীনের সাথে উত্তর প্রদেশের নয়ডায় এক মাসেরও বেশি সময় ছিলেন।
গত মঙ্গলবার এই জুটিকে আটক করা হয়। আদালত তাদের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ও সীমার সন্তানরা তাদের মায়ের কাছে রয়েছে।
সীমা ও শচীন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা বিয়ে করে একসাথে থাকতে চান। আর পুলিশ বলছে, তারা মামলার বিস্তারিত তদন্ত করছে।
ভৌগলিক সীমানা পেরিয়ে বাস্তব জীবনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভার্চুয়াল বিশ্ব যে ভূমিকা পালন করে, তা নিয়ে কথোপকথনের জন্ম দিয়েছে ভারত-পাকিস্তান এই প্রেমের গল্পটি।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সীমা পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের বাসিন্দা গোলাম হায়দারকে বিয়ে করেন৷ এই দম্পতির একসাথে তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
বিয়ের পাঁচ বছর পর গোলাম হায়দার কাজের জন্য সৌদি আরবে চলে গেলে সীমা নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পাবজি খেলা শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পাবজি খেলতাম এবং গেম খেলার সময় আমি শচীনের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম’।
পরে তারা দুজন ফোন নম্বর বিনিময় করে নিয়মিত কথা বলতে থাকেন।
তিন বছর ধরে তাদের সম্পর্ক এগিয়ে যাওয়ার পর, সীমা হায়দার শচীনকে বিয়ে করার জন্য ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি তার স্বামীর বিরুদ্ধে তাকে মারধরের অভিযোগ করেছেন এবং পুলিশকে বলেছেন, তিনি তাকে তালাক দিয়েছেন।
অবশ্য গোলাম হায়দার পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ এবং বিবাহবিচ্ছেদের কথা অস্বীকার করেছেন।
তিনি সীমার বিরুদ্ধে পাকিস্তানে তাদের বাড়ি বিক্রি করে তাদের সন্তান ও গয়না নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সীমা এবং শচীন মার্চ মাসে নেপালে প্রথম দেখা করেন এবং নিজ নিজ দেশে ফেরার আগে কয়েকদিন একটি হোটেলে ছিলেন।
মে মাসে, সীমা পর্যটন ভিসায় আবার নেপালে যান, এবার তার চার সন্তানের সাথে। সেখান থেকে তিনি দিল্লির বাসে উঠেছিলেন বলে গ্রেটার নয়ডার সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা সাদ মিয়া খান জানিয়েছেন।
সীমা পুলিশকে বলেন, তিনি তার স্বামীর বাড়ি বিক্রি করেননি, বরং ভ্রমণের অর্থ সংগ্রহ করতে তার পিতামাতার একটি জমি বিক্রি করেন এবং একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে নেপাল হয়ে ভারতে প্রবেশের ধারণা পান।
গ্রেটার নয়ডার রাবুপুরা শহরের মুদি দোকানি শচীন সীমা এবং তার সন্তানদের সাথে থাকার জন্য একটি রুম ভাড়া নেন।
তার বাড়িওয়ালা গিরিশ কুমার বলেছেন, তিনি কখনই বেআইনি কিছু সন্দেহ করেননি কারণ শচীন বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় সরকারী নথি সরবরাহ করেছিলেন এবং তার বাবা-মাও এই দম্পতিকে দেখতে এসেছিলেন।
ভারতে সীমার বসবাসের বিষয়ে পরামর্শের জন্য এই জুটি গত সপ্তাহে একজন স্থানীয় আইনজীবীর সাথে দেখা করেছিলেন বলে জানা গেছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই আইনজীবী তাদের সম্পর্কে পুলিশকে অবহিত করেন।
ওই আইনজীবী দাবি করেন, সীমা হায়দার বলেছিলেন যে তার স্বামী তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতেন এবং চার বছরে তিনি তার সাথে দেখা করেননি।
তিনি আরও দাবি করেন, সীমাকে তার ভারতীয় ভিসা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার সাথে সাথে তিনি উঠে চলে যান এবং আইনজীবীর একজন সহযোগী তাকে অনুসরণ করে।
সীমাকে ভিসা ছাড়া থাকতে দেয়ার জন্য পুলিশ শচীনের বাবাকেও গ্রেপ্তার করেছে।
এই জুটি তাদের বিয়েতে সাহায্য করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছেন।
এদিকে সীমার স্বামী দাবি করেছেন, তার স্ত্রী পাবজির মাধ্যমে ‘প্রলোভিত’ হয়েছেন এবং চান যে তাকে তাদের সন্তানদের সাথে পাকিস্তানে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।