আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তার আকার ও আকৃতি পিলে চমকে দেবার মতো। কালো কুচকুচে লোমশ বিশালদেহী সে, ওজন ৫০০ পাউন্ড (২২৭ কেজি)। আচরণ বুঝে দানবীয় গড়নের ভালুকটি যুৎসই একটা নামও পেয়েছে- ‘হাঙ্ক দ্য ট্যাঙ্ক’। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া-নেভাদা সীমান্ত এলাকায় লেক তাহোর আশপাশেই বিচরণ এই ভালুকের। খবর বিবিসি’র।
তার জ্ঞাতিগোষ্ঠীর অন্যদের তুলনায় হাঙ্ক দ্য ট্যাঙ্কের বিষয়টাই আলাদা। আর সে কিনা ক্যালিফোর্নিয়া পুলিশের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় নাম লেখিয়ে ফেললো, তাও সিঁধেল চুরির মতো অপরাধে!
অভিযোগটা মিথ্যে নয়। গেলো গ্রীষ্ম থেকে এ অবধি লেক তাহোর আশপাশে বসবাসকারীদের ঘরে অনুপ্রবেশের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কয়েক ডজন ঘর তো ভেঙেছেই সে। আর তাতেই অপরাধীর তালিকায় নাম উঠে গেছে হাঙ্ক দ্য ট্যাঙ্কের। অবশ্য ধারণা করা হচ্ছে, খাবারের অভাবেই এ পথ বেছে নিতে হয়েছে হাঙ্ককে। শীতের সময়টা তার একটা নির্দিষ্ট আবদ্ধ স্থানেই কাটিয়ে দেওয়ার কথা, যাকে বলে ‘হাইবারনেশন’। খাবারের সন্ধানে হয়তো বেরিয়ে আসতে হয়েছে লোকালয়ে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবসতির আশপাশে এরা নির্বিঘ্নে বেড়ে উঠেছে। কাজেই মানুষের কাছাকাছি আসতে তারা অস্বস্তিবোধ করে না। ভালুকটির এই অত্যাচার থেকে বাঁচতে ‘ইউথানিজেশন’ প্রয়োজন হতে পারে। অর্থাৎ, বসতি ও জীবন নিরাপদ রাখতে তাকে ধরে এনে ব্যথাহীন প্রক্রিয়ায় জীবনাবসান ঘটানো হবে। তবে ওয়াইল্ডলাইফ গ্রুপগুলো ভালুকটিকে কোনো অভয়ারন্য বা আশ্রয়স্থলে রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
হাঙ্ক তার নামটি কর্ম দিয়ে অর্জন করে নিয়েছে বলা যায়। ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবারের সন্ধানে সে তালাবদ্ধ ঘর বা মানুষ থাকা অবস্থায় বিভিন্ন বাড়িতে রীতিমতো ভেঙেচুরে প্রবেশ করেছে। প্রচণ্ড শক্তির অধিকারী এ ভালুকটিকে সবাই ‘হাঙ্ক দ্য ট্যাঙ্ক’ নামটি দিয়েছেন।
ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফের মুখপাত্র পিটার টিরা বলেন, সে গ্যারেজের দরজা দিয়ে ঢুকে যায়, ঘরের সামনের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। জানালা দিয়েও আনাগোনা তার।
দক্ষিণ লেক তাহো পুলিশ বিভাগ জানায়, সচরাচর দেখা যায় না এমন বিশাল আকারের দেহ, আঁধার কালো লোমশ চামড়ার সঙ্গে হালকা গড়নের মুখ- এসব বৈশিষ্ট্যের জন্যে তাকে গণমাধ্যমে ‘কিং হেনরি’ নামও দেওয়া হয়েছে।
ভালুক তাড়ানোর কিছু উপায় রয়েছে। সাইরেন বা ড্রাই-ফায়ারিং পুলিশ টিজারের (এর মাধ্যমে এমন এক শব্দ তৈরি হয় যা ভালুকরা মোটেও পছন্দ করে না) মতো কিছু উপায় রয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই হাঙ্ককে ভয় দেখাতে পারেনি।
বেয়ার লিগ নামের স্থানীয় একটি বন্যপ্রাণী সহায়তা গ্রুপ জানায়, মানুষের খাবারের প্রতি ক্ষুধার্ত হাঙ্ক উন্মত্ত। আর তার দৈহিক আকারটাও বুঝতে হবে। এই গ্রুপটি হাঙ্ককে না মেরে তাকে ফাঁদ পেতে ধরে কোনো অভয়ারণ্যে দিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। তার লেক তাহোর অধিবাসীদের ঘর ও খাবার রক্ষায় আরেকটু সাবধান হতে বলেছেন তারা।
পিটার টিরা বিবিসিকে জানান, বনের অনেক ভালুক পিঁপড়া কিংবা বেরি প্রজাতির ফল খেয়ে জীবনধারণ করে। কিন্তু হাঙ্ক তেমনটা নয়। এই এলাকায় বছরজুড়ে উচ্চ ক্যালোরিসমৃদ্ধ খাবার তার জন্য খুঁজে পাওয়া সহজ। উচ্ছিষ্ট পিৎজা বা আইসক্রিমের কথা যাই বলেন না কেন, এগুলো ময়লার ঝুড়িতেই ফেলে দেই আমরা। বনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মরা কাঠের কুঠুরি ঘেঁটে পোকা বের করার চেয়ে এসব খাবারের সন্ধান খুব সহজ।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেড়শরও বেশি ফোন পেয়েছেন, যেখানে শুধু হাঙ্ককে নিয়ে অভিযোগ। ৪০টিরও বেশি ঘর ভেঙে ঢুকেছে সে। কখনো কখনো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘর। এসবই ঘটেছে মাত্র গত ছয় মাসের মধ্যে।
গেলো শুক্রবারও একই ঘটনা ঘটিয়েছে হাঙ্ক। এ সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা টিম জনসন সিবিসি নিউজকে বলেন, আমি এ শহরে ৪০ বছর ধরে বাস করছি। সম্প্রতি আমি আমার ঘরের দরজায় তালা দিচ্ছি, আর এ কাজ আমি অতীতে কখনো করিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।