কথা আমরা কম-বেশি প্রায় সবাই জানি। গ্রহের বলয়ের কথা শুনলে মাথায় ভাসে শনিগ্রহের ছবিটাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে শুধু শনি নয়, সৌরজগতের এই চারটি গ্রহেরই বলয় আছে। এগুলো মূলত ধুলিকণা ও বিভিন্ন গ্যাসীয় অণুর মিশ্রণে তৈরি।
পৃথিবীসহ সৌরজগতের বাকি তিনটি গ্রহ অর্থাৎ মঙ্গল, শুক্র ও বুধ মূলত পাথুরে (Terrestrial) ধরনের। এদের চারপাশে নেই কোন বলয়। কিন্তু কেন? পাথুরে গ্রহ বলেই কি? নাকি ভিন্ন কারণ? গ্রহের চারপাশে বলয় কীভাবে তৈরি হয়, তা নিয়ে দুটি তত্ত্ব রয়েছে। প্রথম তত্ত্ব বলে, গ্রহ তৈরি হওয়ার সময় গ্রহের অবশিষ্ট উপদান থেকে তৈরি হতে পারে বলয়। দ্বিতীয়টি অনুযায়ী, গ্রহের উপগ্রহ ধ্বংসের মাধ্যমে বলয় তৈরি হতে পারে।
কয়েকভাবে উপগ্রহ ধ্বংস হতে পারে। বাইরের কোন উল্কা বা পাথর খণ্ডের আঘাতে পুরো উপগ্রহ ছিন্নভিন্ন হতে পারে। আবার কোন কারণে চাঁদ মাতৃগ্রহের উপর আছড়ে পড়তে নিলে তীব্র মহাকর্ষ বলের টানে ধ্বংস হতে পারে। যেভাবেই হোক না কেন, ফলাফল গ্রহের বলয় তৈরি। তবে বলয় স্থিতিশীল থাকবে কিনা, তা নির্ভর করে গ্রহের নিজস্ব মহাকর্ষ ক্ষেত্রের উপর।
গ্যাসীয় দানব গ্রহগুলোর চারপাশে কেন বলয় রয়েছে তাঁর সদুত্তর নেই বিজ্ঞানীদের কাছে। এই গ্রহগুলো সৌরজগতের অপেক্ষাকৃত দূরের অংশে অবস্থিত। অন্যদিকে পাথুরে গ্রহগুলোর অবস্থান সূর্যের অনেকটাই কাছাকাছি। সৌরজগতের ভিতরের দিকে। সূর্যের এবং গ্রহের নিজস্ব মহাকর্ষ বলের উল্লেখযোগ্য তারতম্য আছে এই দুই অংশে। দুই অংশকে বিভক্ত করেছে অদৃশ্য স্নো লাইন বা ফ্রস্ট লাইন। যে দূরত্ব পার হলে নক্ষত্রের আলোতে বরফ দীর্ঘ সময় একই অবস্থায় থাকতে পারে, সেই দূরত্বকে স্নো লাইন দিয়ে বিভক্ত করা হয়। সূর্যের বেলায় প্রায় ৫ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট দুরত্বে এর অবস্থান।
পৃথিবীসহ ফ্রস্ট লাইনের ভিতরের গ্রহগুলোর বলয় না থাকার একটি কারণ, সূর্যের বিপুল তাপমাত্রা হতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তাছাড়া সূর্যের কাছাকাছি থাকায় এই গ্রহগুলো অপেক্ষাকৃত মহাকর্ষ টান অনুভব করে গ্রহগুলো। ফলে গ্রহের জন্মের সময় বলয় থাকলেও তা একসময় একত্রিত হয়ে উপগ্রহে পরিণত হতে পারে। এসব কারণে এই গ্রহগুলোর চারপাশে বলয়ের অস্তিত্ব দেখা যায় না।
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, অতীতে কোন একসময় পৃথিবীর চারপাশে বলয় ছিল। এ গ্রহের জন্মের শুরু দিকে মঙ্গল গ্রহের মতো বিশাল কোন বস্তুর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়েছিলো ভারী বলয়। পরে ধীরে ধীরে বলয়ের ধুলিকণা একত্রিত হয়েই আজকের চাঁদ তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। চাঁদের জন্মতত্ত্বগুলোর মধ্য এটি অন্যতম। আসলেই সেটা সত্য কিনা তা আমরা এখনও জানি না। বিজ্ঞানীরা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। আসন্ন আর্টেমিস মিশন চাঁদ নিয়ে আরও বিপুল গবেষণা করা হবে। সেই গবেষণায় চাঁদের জন্মরহস্যের পাশাপাশি হয়তবা জানা যাবে পৃথিবীর বলয়ের রহস্যটাও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।