এই ‘পুরাতন আমাশয়’ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তার মধ্যে একটি কারণ হলো আইবিএস (ইরিট্যাবল বাওয়েল সিনড্রোম)। এটি হচ্ছে একটি ‘ফাংশনাল ডিজঅর্ডার’। কখনো কখনো দেখা যায়, মলদ্বারে বা কোলনে ইনফ্লাম্যাটরি বাওয়েল ডিজিজ বা আইডিবি হয়। তার জন্যও এ রকম উপসর্গ থাকতে পারে। তার একটা রোগ হচ্ছে আলসার্যাটিভ কোলাইটিস, আরেকটা রোগ হচ্ছে ক্রনস ডিজিজ।
আবার কারও যদি কোলনে ক্যানসার হয়, তাহলেও কিন্তু মলত্যাগের পর আমজাতীয় পদার্থ বা রক্ত বের হতে পারে কিংবা পেটে ব্যথা হতে পারে। কাজেই মলদ্বারে কারও যদি আমাশয়জাতীয় কোনো সমস্যা থাকে, মলত্যাগ করার সময় মিউকাসজাতীয় পদার্থ নিঃসৃত হয়। তাহলে আপনি পুরাতন আমাশয় ভেবে বাসায় বসে থাকবেন না। এ রোগটা আমাদের সমাজে সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয় না এবং আমরা অনেক রোগী পাই—তাঁর হয়তো ক্যানসার হয়েছে, অথচ তিনি পুরাতন আমাশয় ভেবে বাসায় বসে ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। এতে হয়তো তিনি প্রাথমিকভাবে কিছুটা উপকার পাচ্ছেন; কিন্তু যখন তিনি আমাদের কাছে আসেন, তখন দেখা যায়, তাঁর ক্যানসারটা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। যেমন, লিভারে ছড়াতে পারে, পেটের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে; তখন কিন্তু রোগীর চিকিৎসা খুবই জটিল হয়ে পড়ে।
দেখা গেল কারও হয়তো ইনফ্লাম্যাটরি বাওয়েল ডিজিজ আছে, প্রাথমিক অবস্থায় যদি আমরা চিকিৎসা শুরু করতে পারি; তাঁর ক্ষেত্রে সার্জারি কিংবা অপারেশনের সম্ভাবনা কিন্তু অনেক কমে যায়। যদি দেখা যায়, ১০ বছর পর তাঁর রোগটা নির্ণয় হচ্ছে, তখন কিন্তু তাঁর চিকিৎসা জটিল হয়ে যায়। সেই ক্ষেত্রে খাদ্যনালিতে উপসর্গের পাশাপাশি বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়—হাঁটুতে ব্যথা, চোখে সমস্যা, যেটাকে আমরা এক্সট্রা ইনটেসটিনাল ম্যানিফেসট্যাশন বলে থাকি।
কাজেই ‘পুরাতন আমাশয়’ ভেবে কেউ পাশের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাবেন না। এ-জাতীয় সমস্যা হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। চিকিৎসক আপনার বর্ণনা শুনবেন, ক্ষেত্রবিশেষে আপনার কোলনস্কপি করাবেন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করে রোগ নির্ণয় করবেন। আর এর ভিত্তিতে আপনাকে সঠিক পরামর্শ দেবেন।
কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়, যদি ইরিটেবল বাওয়েল সিম্পটম থাকে; সে ক্ষেত্রে দুধ বা দুধজাতীয় খাবার খেলে এ সমস্যা বাড়ে। এসব রোগীকে যখন আমরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারব তাঁর ইনফ্লাম্যাটরি বাওয়েল ডিজিজ বা ক্যানসার নেই, তাঁর সমস্যা হচ্ছে আইবিএস; তাঁদের আমরা বিভিন্ন পরামর্শ এবং ওষুধ দিয়ে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। এটির সঠিক চিকিৎসা যদি আমরা আগেভাগে করতে পারি, তাহলে এর জটিলতা পরিহার করতে পারব।
লেখক: জেনারেল ও কোলে-রেকটাল সার্জন, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।