জুমবাংলা ডেস্ক: বন্যায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুরে সাড়ে তিন লক্ষাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাভাবিক হওয়ার আগেই ফের সুনামগঞ্জ, সিলেট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জামালপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে এখনো বন্যার্তরা ফিরতে পারছে না বাড়িঘরে। বন্যাকবলিত এসব এলাকার মানুষ সড়ক, বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
গাইবান্ধার ফুলছড়ির ভাষারচর এলাকায় পাউবোর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি রয়েছেন গর্ভবতী নারী। তিন দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাতে বানভাসিদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তি উদ্যোগেও ত্রাণ বিতরণ ও চিকিত্সাসেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। তবে ত্রাণের অপ্রতুলতা, বিশুদ্ধ পানির অভাব, গোখাদ্যের সংকটে বন্যার্তরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বেড়েছে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ইত্তেফাকের আঞ্চলিক অফিস, জেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গাইবান্ধায় দুই পৌরসভাসহ সাত উপজেলার ৫১ ইউনিয়নের ৪২৪টি গ্রামে প্রায় ৬০ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানির তোড়ে জেলার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩৭টি পয়েন্টে ভেঙে ভেসে গেছে সহস্রাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি। ফলে সবকিছু হারিয়ে তারা হয়ে পড়েছে নিঃস্ব ও ঠিকানাহারা। বন্যার পানি কমে গেলে জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ৬ লক্ষাধিক লোকের প্রায় সবাই ঘরে ফিরে যাবে। কিন্তু বাঁধভাঙা পানির তোড়ে সর্বস্বান্ত মানুষদের আর ফিরে যাওয়ার জায়গা নাই। কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভায় বন্যায় ২ লাখ ৪০ হাজার ৫২৫টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৮৫৩টি এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭২টি ঘরবাড়ি। নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪টি। ২ লক্ষাধিক গবাদি পশু পানিবন্দি হয়ে খাদ্যের সংকটে পড়েছে। জামালপুর জেলায় বন্যায় অর্ধলক্ষাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ২৫০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণরূপে এবং ৪৫ হাজার ৫৮০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২ হাজার নলকূপ ও ৬১ হাজার ল্যাট্রিন পানিতে তলিয়ে ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২৯০ কিলোমিটার পাকা-কাঁচা সড়ক, প্রায় ২১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আগস্টের শেষভাগে আবার বন্যার আশঙ্কা : আগস্টের শেষভাগে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আবার বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল কুড়িগ্রামে ধরলার পানি ২৯ সেন্টিমিটার বেড়ে ৪১ সেন্টিমিটার এবং কানাইঘাট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে সুরমার পানি দিপত্সীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে অতিক্রম করছে। এছাড়া চাঁদপুরে মেঘনা, গাইবান্ধায় ঘাঘট ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে বিপত্সীমার যথাক্রমে ৫, ১৮ ও ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ তিস্তা ও ধরলার পানি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত প্রধান নদ-নদীর ১৮টি পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আত্রাইয়ের বাঘাবাড়ীতে ১৫ ও এলাশিন পয়েন্টে ধলেশ্বরীতে ১৭ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে দিপত্সীমার ৪০ ও ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গতকাল বন্যাকবলিত গাইবান্ধায় বৃষ্টি হয়েছে ৮৭ সেন্টিমিটার এবং চিলমারীতে হয়েছে ১১৫ সেন্টিমিটার। আজ বৃহস্পতিবারও উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
চার জেলায় বন্যার অবনতি : এদিকে গত তিন দিন ধরে বিকাল হলেই গাইবান্ধায় আকাশ অন্ধকার হয়ে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। এতে জেলার বিভিন্ন সড়ক, বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া লক্ষাধিক বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। জেলার নদ-নদীগুলোতে পানি আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু : গতকাল ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার চরমছলন্দ কান্দাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত শিশুটির নাম তারেক মিয়া (৭)। সে চরমছলন্দ কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র এবং চরমছলন্দ মুদিপাড়া গ্রামের বদর উদ্দিনের ছেলে। সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।