উত্তাপ ছড়াচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম
জুমবাংলা ডেস্ক : চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৪ মার্চ শুরু হচ্ছে পবিত্র মাস রমজান। শান্তি-সম্প্রীতি ও সংযমের বার্তা নিয়ে এলেও এই মাস ঘিরে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কারণে স্বস্তি নেই ভোক্তাদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের বাড়িয়েছে অস্বস্তি। প্রতিদিনই বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা অবশ্য এর জন্য আমদানি জটিলতা ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে দায়ী করছেন। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ব পরিস্থিতির প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা ভোক্তার পকেট কাটছে। এর প্রতিকারে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘দেশে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পণ্য মজুত রয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে, রমজান মাসে কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না।’
অন্যদিকে বাজার পরিস্থিতি ও ভোক্তা অধিকার বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি শামসুল আলমের দাবি, সরকার জনগণকে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে ভোক্তার অধিকার রক্ষার বিষয় সরকারের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে।
রমজানকে কেন্দ্র করে পুরো মাসের বাজার একবারে না করার অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিশেষ তদারকিমূলক অভিযান পরিচালনা শেষে ভোক্তা প্রতি তিনি এ অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘সামনে রোজা। দয়া করে আপনারা এক মাসের বাজার একসঙ্গে কিনতে যাবেন না। আপনারা ১০ দিনের বা এক সপ্তাহের বাজার করেন। হঠাৎ বেশি পণ্য কিনলে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। তখন কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। এ কারণে অনুরোধ করব, আপনারা একসঙ্গে পুরো মাসের বাজার করবেন না।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজানকে ঘিরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামে দেয়া হয় বিশাল ছাড়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পবিত্র এই মাস উপলক্ষে হাজার হাজার খাদ্যপণ্যে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কাতার-ওমানসহ অন্যান্য দেশেও মিলছে এমন ছাড়। তবে বাংলাদেশে বরাবরের মতো দেখা যাচ্ছে উল্টোটা। রমজান না আসতেই সব পণ্যের দাম ছুটছে ঊর্ধ্বগতিতে।
গত রমজান শুরুর আগে যেসব পণ্য ১৫০ টাকায় পাওয়া যেত, এবার তা কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। তবে একই সময়ের তুলনায় পেঁয়াজ ও আলুর দাম কেজিতে ২ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। চাল, ডাল, আটা, ময়দা, মসলা, ডিম, মুরগি, মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত।
শুক্রবার বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়, যা গত বছর এ সময়ে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। মাঝারি মানের চালের কেজি ৫৪ থকে ৫৬ টাকা, গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা, সরু চালের কেজি ৬০ থেকে ৭৫ টাকা, যা ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
বর্তমান বাজারে রমজানে বেশি কেনা হয় এমন সব পণ্যের দাম বেড়েছে। ছোলার দাম ঠেকেছে ৯০ টাকা কেজিতে। যা কয়েকদিন আগেও ছিল ৮০ থেকে ৮২ টাকা। চিনির দামও ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা কেজি। বুটের ডাল ও মসুর ডাল ১০-১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
টিসিবির হিসাবে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ থেকে ১৭২ টাকায়, যা গত বছর এ সময়ে ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। ৫ লিটারের বোতল ৮৭০ থেকে ৮৮০ টাকা, ছিল ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা। ১ লিটারের বোতল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা, ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। খোলা পাম অয়েলের লিটার ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। সুপার পাম অয়েল ১৪৫ থেকে ১৪০ বা তারও বেশি, ছিল ১৫৫ থেকে ১৫৮ টাকা।
বাজারে প্রতি কেজি ছোলা ৮৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর এ সময়ে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এ ছাড়া বুটের ডাল-অ্যাঙ্কর-পেঁয়াজুর ডাল বা মোটা ডালের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে।
বর্তমানে বাজারে সাধারণ মানের প্রতি কেজি খেজুরের দাম ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা, যা গত বছর সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছিল ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। আর যে খেজুর গত বছর ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, বর্তমান বাজারে সেই খেজুরের কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর হাতির পুল বাজারের শরীফ স্টোরের জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কী করব বলেন? দাম তো আমরা বাড়াই না। আমাদের দাম দিয়ে কিনতে হয়। তাই আমরা সেই দাম থেকে কিছুটা লাভ করে বিক্রি করি। আমাদেরও তো লাভ করতে হবে।’
পণ্যের দাম বেশি হলে মানুষ কেনাকাটা কম করে জানিয়ে জসিম বলেন, ‘এতে তো আমাদের আরও লোকসান হয়। আগে দেখা যেত রোজা এলে মানুষ এক মাসের বাজার একসঙ্গে করত, কিন্তু এখন কোনোরকম এক সপ্তাহ বা ২-৩ দিনের বাজার করছে। এতে আমাদের বিক্রি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।’ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির সেই চড়া দামই বহাল আছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও এই দামই ছিল। আর লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০০ টাকা কেজি। পাকিস্তানি কক বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়।
নবাবগঞ্জ বাজারের মাংস বিক্রেতা সেলিম বলেন, ‘খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০০ টাকা। আর বকরির (ছাগলের) মাংস ১০৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকা। আর গরুর হাড় ছাড়া মাংস ১ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি করেছি ৯৫০ টাকা। হাড়সহ মাংস ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। গত সপ্তাহেও একই দাম ছিল।’
রোজার দিনে ইফতারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে লেবুর শরবতের। সেই লেবু বাজারে বিক্রি হচ্ছে হালি ৩০ টাকা দরে। খুচরা ১০ টাকা পিস। এছাড়া বাজারে ওঠা নতুন সবজিগুলোর মধ্যে সাজনা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ও করলা ১০০, টমেটো পাকা ৩০ টাকা, কাচা ৪০ টাকা, কচুর লতি ৯০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, ধুন্দুল ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল চাঁদপুরের নাফিস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।