ফেসবুক থেকে : গত কয়েকদিন ধরে সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি দীর্ঘ লেখা ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকেই কাহিনীটা বড় বলে এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু যারা পড়েছেন তারা কান্না থামিয়ে রাখতে পারেননি। গল্পটি ছিলো এক বাবা ও তার ছেলের মধ্যে ঘটনা। গল্পটি আমাদের সময় ডট কম পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো।
খাবার টেবিলে বসে মার দিকে তাকিয়ে চোখে ইশারা করলাম আমার কথাটা বাবাকে বলতে। মা ভয়ে ভয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো রাকিব ১০ হাজার টাকা চেয়েছিলো। ওর বন্ধু বান্ধবরা মিলে কয়েকদিনের জন্য কক্সবাজার যাবে সেজন্য!
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-কবে যাবি?
আমি বললাম,
— এই তো ৫ দিন পর যাবো!
বাবা নিচের দিকে তাকিয়ে খেতে খেতে বললো,
– তাহলে এক কাজ কর ৩ দিন দোকানে একটু সময় দে। আমি ৩ দিনের জন্য এক জায়গায় যাবো। এসে তোকে টাকাটা দেই!
আমি খুশিতে হাসতে হাসতে বললাম,
— ঠিক আছে বাবা!
পর দিন সকালে দোকানে গেলাম। আমাদের ছোটখাটো একটা কাপড়ের দোকান আছে। মাঝে মাঝে আমি দোকানে আসলেও কখনো দোকানে বসা হয় নি। আজকেই প্রথম দোকানে বসলাম। দোকানে দুইটা কর্মচারী আছে ওরা সব আমায় বুঝিয়ে দিচ্ছে। আমার কাজ হলো কোন কাপড়ে কত টাকা লাভ হয়েছে সেটা লিখে রাখা আর মাঝে মাঝে কাস্টমারদের কাপড় দেখানো…
একটা কাস্টমারকে ২০টার মত শার্ট দেখানোর পর কাস্টমারটা বললো,
~না ভাই পছন্দ হয় নি।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
— এত গুলোর মাঝেও পছন্দ হয় নি?
উনি বললেন,
– না…
মুখটা গোমড়া করে যখন শার্ট গুলো যখন ঠিক করছিলাম তখন কর্মচারী ছেলেটা হেসে বললো,
~ভাইয়া, মুখ গোমড়া করে থাকলে হবে না। সব সময় মিষ্টি হেসে কাস্টমারের সাথে কথা বলতে হবে…
কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে এসে বললো, কিছু নতুন ডিজাইনের প্যান্ট দেখাতে। আমি দোকানের কিছু ভালো মডেলের প্যান্ট দেখালাম। একটা প্যান্ট পছন্দ করলো। প্যান্টের কিনা মূল্য ছিলো ১২০০ টাকা। আমি ছেলেটার কাছে চাইলাম ১৫০০ টাকা। ছেলেটা প্যান্টা উল্টে পাল্টে আবার দেখে বললো,
~৩০০ টাকা দিবেন?
কথাটা শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। দাঁতের সাথে দাঁত চেপে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে মুখে মিষ্টি হাসি এনে বললাম,
— না ভাইয়া, এত কম দামে হবে না…
কিছুক্ষণ পর এক মহিলা এসে ১ ঘন্টা ধরে দোকানের সমস্ত কাপড় চোপড় উল্টে পাল্টে দেখে ২টা কাপড় পছন্দ করে বললো,
~আমার স্বামী ৩দিন পর বেতন পাবে তখন এই দুইটা কাপড় নিবো।
রাগে সারটা শরীর কাঁপছিলো। তারপরও কিছু বলতে পারছিলাম না কারণ কাস্টমার বলে কথা। নিজের রাগ বুকের ভিতর জমাট রেখে মুচকি হেসে বললাম,
— আন্টি, যেদিন আংকেল বেতন পাবে সেদিন আংকেল কে নিয়ে না হয় আসবেন…
একছেলে মনে হয় তার গার্লফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে দোকানে এসেছে। কর্মচারী ছেলে গুলো যে কাপড় গুলোই দেখায় সেগুলো দেখেই বলে আরো ভালো মানের কাপড় দেখাতে। অবশেষে কর্মচারী ছেলেটা বললো,
~এর চেয়ে ভালো মানের কাপড় আমাদের দোকানে নেই।
ছেলেটা মুখে বিরক্তির ভাব এনে বললো,
– দূর যা, শুধু শুধু এমন একটা ফকিন্নি দোকানে সময় নষ্ট করলাম…
না আর সহ্য করা যায় না। ছেলেটাকে বললাম,
— ভাই, আপনি বড়লোকের পোলা তাহলে বসুন্ধরা শপিংম, যমুনা ফিউচার পার্ক এই গুলো বাদ দিয়ে শুধু শুধু কেন এই সব সাধারণ শপিংমলে ঘুরাঘুরি করছেন?
আমাদের যখন কথা কাটাকাটি হচ্ছিলো তখন কর্মচারী ছেলেটা ঐ ছেলার কাছে মাফ চেয়ে আমাকে বললো,
~ভাইয়া এমন করলে তো ব্যবসা হবে না। প্রতিদিন কত মানুষের কত রকম কথা শুনতে হবে। আপনি আজ প্রথম এসেছেন তাই কিছু জানেন না…
দিন শেষে হিসাব করে দেখি সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়েছে ৮২০ টাকা…
আমি ৩দিন দোকান দেখাশুনা করি। এই তিন দিনে আয় হয় ৪০২০টাকা। আর এই ৩দিনে যে পরিমাণ কষ্ট হয়েছে মনে হয় না আমি আমার জীবনে এত কষ্ট করেছি…
রাতে নিজের রুমে বসে যখন ফোন টিপছি তখন বাবা এসে বললো,
-এই নে তোর ১০ হাজার টাকা।
আমি বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— কিসের ১০ হাজার টাকা?
বাবা অবাক হয়ে বললো,
– তুই না কক্সবাজার যাবি বন্ধুদের সাথে?
আমি বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
–বাবা আমি আগে বুঝতাম না টাকা ইনকাম করতে কতটা কষ্ট হয় তাই তোমার কাছে এতকিছু আবদার করতাম। আমি এই ৩ দিনে খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি টাকা ইনকাম করার কষ্টটা। যে আমি ৩ দিনে ৫ হাজার টাকায় ইনকাম করতে পারলাম না সেই আমি কি না ২ দিনের জন্য ১০ হাজার টাকা কিভাবে আবদার করি। এত টাকা খরচ করা আমাদের মত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য অপচয় বাদে কিছুই না..
আমার কথা শুনে বাবা কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,
– তকে এত পন্ডিতগিরি করতে হবে না। বন্ধুরা সবাই যাচ্ছে তুইও যা। সমুদ্রের বিশালতা দেখলে তোর খুব ভালো লাগবে।
আমি বাবার হাত ধরে বললাম,
— বিশালতা দেখতে সমুদ্রে যেতে হয় না। বাবার চোখের দিকে তাকালেই বিশালতা দেখা যায়। যে বাবারা হাজার কষ্টের পরেও সন্তানের মুখে হাসি ফোটায়…
খাবার টেবিলে বসে যখন খাচ্ছি তখন বাবাকে বললাম,
— বাবা, দোকানে ২জন কর্মচারী রাখার কোন দরকার নেই। আজ থেকে আমি দোকানে বসবো।
বাবা আমার কথার কোন উত্তর দিলো না। শুধু মাকে বললো,
– তারকারি তে এত ঝাল দেয়েছো কেন? ঝালে চোখেমুখে পানি চলে এসেছে…
আমি জানি তারকারিতে ঝাল হয় নি। বাবা চোখের পানি লুকানোর জন্য মিথ্যা কথা বলছে।
আসলে বাবারা এইরকমই কখনো নিজেদের কষ্ট আমাদের বুঝতে দেয় না,,♥️♥️
♥️ Love you বাবা-মা ♥️
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।