জুমবাংলা ডেস্ক: বিশ্বের একশো প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। অন্যান্য সব দেশের সাহসী ও প্রভাবশালী নারীদের নামের পাশে রয়েছে তার নাম। এই তালিকায় স্থান পেতে ছোঁয়া কোনো যুদ্ধে যাননি কিংবা পাড়ি দেননি মহাপ্রাচীর। তবে ছোঁয়া যা করেছেন সেগুলো এর চেয়েও অর্থবহ। বাংলাদেশের মতো দেশের অন্যতম সমস্যা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করেছেন তিনি। একক প্রচেষ্টায় বন্ধ করেছেন ৬০ এর অধিক বাল্যবিয়ে। কিশোরী নারীদের ফিরিয়ে দিয়েছেন বিপদের মুখ থেকে।
চলতি বছর যুক্তরাজ্যের অন্যতম সংবাদমাধ্যম বিবিসি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংকটকালীন পরিস্থিতিতে উত্তরণের অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকার ২১ নম্বরে রয়েছে আমাদের ছোঁয়ার নাম।
চলতি মাসের ৬ ডিসেম্বর বিবিসির ওয়েবসাইটে রাজনীতি ও শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া, অ্যাক্টিভিজম ও অ্যাডভোকেসি, স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান এই চার ক্যাটাগরিতে এসব নারীর তালিকা প্রকাশ করে। ছোঁয়া জায়গা পেয়েছেন অ্যাক্টিভিজম ও অ্যাডভোকেসি ক্যাটাগরিতে।
বিবিসির প্রকাশিত তালিকায় ২০২২ সালে বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ স্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সাহসী নারীদের তুলে ধরা হয়েছে। ইরানে পট পরিবর্তনের দাবিতে সাহসিকতার সঙ্গে বিক্ষোভ করে যাওয়া নারী থেকে শুরু করে ইউক্রেন ও রাশিয়ায় সংঘাত ও প্রতিরোধে ভূমিকা রাখা নারীমুখ এবারের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
বিবিসির প্রকাশিত তালিকায় সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বাল্যবিবাহপ্রবণ দেশ। কিন্তু ছোঁয়া এই ধারা বদলানোর চেষ্টা করছেন। তাঁর মায়েরও বিয়ে হয়েছিল অল্প বয়সে। স্কুলে পড়াকালে বাল্যবিবাহের প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হন তিনি। ছোঁয়া ও তার বন্ধুরা, শিক্ষক ও সহযোগীরা নিজেদের ঘাসফড়িং হিসেবে পরিচয় দেন। বাল্যবিবাহের কোনো ঘটনা জানলে তাঁরা পুলিশসহ প্রশাসনকে জানান। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হয়েও ছোঁয়া ঘাসফড়িংয়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেন তিনি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ভূমিকা রেখেছে ঘাসফড়িং।
সানজিদা ইসলাম ছোঁয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের ঝাউগড়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মো. আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া সোহেল এবং মা লিজা আক্তার। তিনি বাল্যবিয়ে সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন মায়ের কাছে। মায়ের বাল্যবিয়ে হয়েছিলো। সানজিদা জন্মের পর সানজিদার মা পার করেছিলেন মাধ্যমিকের গন্ডি। সংসার ও নানা ঝামেলায় সানজিদার মা পড়তে পারেননি ঠিকঠাক। বাল্যবিবাহের স্বীকারের নানা কুফল ও সামাজিক অনিয়ম মায়ের কাছ থেকেই দেখে শুনেছেন ও জেনেছেন সানজিদা। নিজের মায়ের স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প দারুণভাবে নাড়া দেয় সানজিদার কিশোরী হৃদয়ে এরপর সিদ্ধান্ত নেন কাজ করবেন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে। সেই থেকেই যাত্রা শুরু সানজিদার।
২০১৬ সালে একটি বাল্যবিবাহের খবর পেয়ে সানজিদাসহ তার সহপাঠীরা ছুটে যায় ছদ্মবেশে। এরপর অভিভাবকের সাথে কথা বলে বিয়ে বন্ধ করতে চাইলে নারাজ হয় তারা। স্থানীয় প্রশাসন এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতায় বন্ধ হয় সেই বাল্যবিয়ে। সেই থেকেই যাত্রা শুরু সানজিদার। ৭ বান্ধবীকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘ঘাসফড়িং’। সেই বিয়ে বন্ধের পর চারপাশে নাম ছড়িয়ে পড়ে তাদের। এভাবে একের পর এক বাল্যবিবাহ বন্ধ করেন সানজিদারা। এখন তারা অনেকেই কাজ করছেন আলাদাভাবে। ইতোমধ্যে সানজিদার এলাকা পরিচিত পেয়েছে বাল্যবিবাহ মুক্ত এলাকা হিসেবে।
বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে গিয়ে গুণী লোকের প্রশংসা কুড়ালেও বাজে লোকের হুমকি ধামকির স্বীকার হয়েছেন সানজিদা। সানজিদার বাবাকে ফোন করে অনেকেই শাসাতেন মেয়েকে সাবধান করার জন্য। মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা ও গুম করে দেওয়ার হুমকিও পেতেন সানজিদার বাবা। মেয়ের জন্য বাবার মনে ভয় হওয়াটা স্বাভাবিক। সানজিদার বাবা না করা সত্বেও এই কাজ চালিয়ে যেতেন সানজিদা। তার এমন কাজের জন্য বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান থেকে নানান সন্মাননা দিলেও এই প্রথন আন্তর্জাতিকভাবে কোন সন্মাননা পেলেন তিনি।
তালিকায় নাম দেওয়ার আগে সানজিদার সাথে যোগাযোগ করছিলেন বিবিসি কর্তৃপক্ষ। প্রায় দুই বছর ধরে সানজিদার কাজ কেমন চলছে? কি করছে এখন এসব খবরাখবর রেখেছে বিবিসি। এ প্রসঙ্গে সানজিদা বলেন, আমি কখনো ভাবতেই পারিনি এতসব গুণী মানুষের পাশে আমার জায়গা হবে। আমি খুবই খুশি এবং আনন্দিত। সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন।
সানজিদা আরও বলেন, অনেক সময় আমরা দেখি ক্লাস ফাইভ, সিক্সে পড়া মেয়ের বিয়ে হচ্ছে, মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তখন আমরা সেসব বিয়ে বন্ধ করি। ১৮ বছরের বড় মেয়ে কিংবা সমান বয়সীদের বিয়ে আমরা বন্ধ করি না। মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হলে সেসব বন্ধের চেষ্টা করে থাকি। আমাদের এই কাজে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, স্থানীয় গন্যমান্যরা সাহায্য করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।