কাদির কল্লোল, বিবিসি বাংলা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ থেকে বড় অংকের চাঁদা দাবি করার অভিযোগে ছাত্রলীগের দু’জন শীর্ষ নেতাকে সরে যেতে হয়েছে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের ভূমিকা নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছে।
এর মাঝেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়ে।
ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাতেমা-তুজ জিনিয়া, যিনি একটি জাতীয় দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন, তিনি অভিযোগ করেছেন, তার সাংবাদিকতা এবং ফেসবুক স্ট্যাটাসের জের ধরে তাকে কর্তৃপক্ষ সাময়িক বহিষ্কার করেছে।
উপাচার্য ড: খন্দকার মো: নাসিরউদ্দীন বলেছেন, ঐ ছাত্রী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল।
কিন্তু ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে বলে অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন। উপাচার্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
“কেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে না? তবে আপনার কারণে যদি অন্য ছাত্রদের অসুবিধা বা বিশ্ববিদ্যালয় একটা হুমকির মুখে চলে যায়, তাহলে তাকে তো আমার থামানো লাগবে। বুঝলেন না,” বলেন তিনি।
বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনেক কর্মকাণ্ড নানা সময় যে বিতর্ক সৃষ্টি করছে, সেজন্য ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়কে একটা বড় কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
অনেকে বলেছেন, ৫০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চারটি অর্থাৎ ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, যেটি পরে আইন হয়েছে, সে আইনে চলে।
এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেটে ভোটাভুটির মাধ্যমে উপাচার্য হিসেবে তিনজনের নাম প্রস্তাব করলে চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতি সেই তালিকা থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করেন। কিন্তু এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনটিতেই এখন এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত উপাচার্য নেই।
বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা আলাদা আইন আছে। তবে সে আইন অনুযায়ী ঐ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচনের কোন প্রক্রিয়া নেই। রাষ্ট্রপতিই উপাচার্য নিয়োগ করে থাকেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মরিয়ম বেগম বলছিলেন, নিয়োগে যেমন সমস্যা আছে, একইসাথে উপাচার্য হওয়ার পর সেই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টার কারণেও অনেক সময় সংকট তৈরি হচ্ছে।
“পদের একটা ক্ষমতা আছে। সেই ক্ষমতা আমি তো হারাতে চাইবো না। সেজন্য হয়তো কাজগুলো বিতর্কের পর্যায়ে চলে যায়।”
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময় রাজনৈতিক পরিচয়ই বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব এবং উন্নয়ন- এই দু’টি বাজেটে বড় অংকের বরাদ্দ হয়, সেটিও সমস্যার একটা কারণ বলে তিনি মনে করছেন।
তিনি বলেন, “অনেক সুবিধাভোগী মানুষ এই সুযোগটা নিতে চায় ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে। এটা সামাল দিতে গিয়ে উপাচার্যরা নানা ধরনের বিতর্কের জন্ম দেন।”
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলছিলেন, নিয়োগের পদ্ধতি বা রাজনীতি সমস্যা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনের জবাবদিহিতার দুর্বলতার কারণেই সমস্যা হচ্ছে।
“বিতর্কের সাথে নিয়োগের কোন সম্পর্ক নেই। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। এখন যে বিতর্কগুলো হচ্ছে, এগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার পর্যায়ে সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি বলেন, “সরকার চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কাজ না করলে সমস্যা তৈরি হয়।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।