খাগড়াছড়িতে চাষ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম ‘সূর্যডিম’। উঁচু পাহাড়ের ঢালুতে থোকায় থোকায় ঝুলছে রঙিন এ আম। এক বা দুইটি নয় এরকম প্রায় ১২০ টি গাছে ধরেছে ওই আম।
জানা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে দামি আমের খেতাব পাওয়া এই আমটির নাম মিয়াজাকি বা সূর্যডিম। খাগড়াছড়িতে প্রথমবারের মতো চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন হ্ল্যাশিমং চৌধুরী নামের এক কৃষক। পাহাড়ি ঢালু জমিতে মিয়াজাকি আমের সাফল্যে বিস্মিত কৃষি বিভাগও।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে মহালছড়ি উপজেলা। উপজেলার ধুমনিঘাট এলাকায় ৩৫ একর জায়গাজুড়ে ‘ক্রা এ্এ এগ্রোফার্ম’ গড়ে তুলেছেন কৃষক হ্ল্যাশিমং চৌধুরী। ২০১৬ ও ১৭ সালে মিয়াজাকি আমের চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। মিয়াজাকির অন্য নাম সূর্যের ডিম বা এগ অব সান।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২শ ফুট উঁচুতে ‘ক্রা এ্এ এগ্রোফার্ম। পাহাড়ে ঢালু অংশে সারি সারি মিয়াজাকি জাতের আমের গাছ। প্রতিটি গাছের বয়স ৩ থেকে ৪ বছর। প্রতিটি গাছেই এবার আম ধরেছে। একেকটি গাছে ৩০ থেকে ৪০ টি পর্যন্ত আম দেখা গেছে। প্রতিটি আমের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম। পুরো আম লাল রঙে মোড়ানো। রঙিন এই আম দেখতে অনেকেই বাগানে ভিড় করছে।
কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, ‘রঙিন আম দেখতেই এখানে এসেছি। মিয়াজাকি আম খাগড়াছড়িতে এর আগে কোথাও চাষ হয়নি। আমটি দেখতেও সুন্দর এবং খেতেও সুমিষ্ট।’
কৃষক হ্ল্যাশিমং চৌধুরী জানান, ‘আমার বাগানে প্রায় ৬০ প্রজাতির আম রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমি প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে এ জাতের আমের আবাদ শুরু করেছি। চার বছর আগে দেশের বাইরে থেকে চারা সংগ্রহ করে মিয়াজাকি আমের চাষাবাদ করেছি। মিয়াজাকি মূলত বিদেশী জাতের আম। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামী আম হিসেবে বিবেচিত হয়।
তিনি আরও বলেন, বিদেশি প্রজাতি হওয়ায় আমরা ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে আমটি চাষাবাদ করেছি। পাহাড়ের ঢালুতে এর আবাদ করেছি। রোপণের চার বছর পর ভালো ফলনও পেয়েছি। আমটি রঙ অত্যন্ত সুন্দর। দাম বেশি হওয়ায় এটি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয় না। দেশের বিভিন্ন সুপার শপে এটি পাওয়া যাবে। অনেক শৌখিন ক্রেতাও আমটি বাগান থেকে কিনে নিয়ে যায়। পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকরা এটি চাষ করে লাভবান হতে পারবে বলেও জানান এই কৃষক।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায় , ‘ সূর্যডিম বা মিয়াজাকি হলো জাপানিজ আম। বিশ্ব বাজারে এটি ‘রেড ম্যাংগো’ নামে পরিচিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। আমটির স্বাদ অন্য আমের চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বেশি। আমটি খেতে খুবই মিষ্টি। আমটির গড় ওজন প্রায় ৭০০ গ্রামের মতো। বিশ্ব বাজারে এর দাম প্রায় ৭০ ডলার বা ৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি ১০ গ্রাম আমের দাম ১ ডলারের মতো। অনেক কৃষক নতুন এ জাতের আম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশীদ আহমেদ জানান, ‘অতি সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে মিয়াজাকি জাতের আমের আবাদ শুরু হয়েছে। এটি বিশ্বের সবচে দামি আম। গায়ের রঙ এবং আকারের কারণে এটিকে সূর্যের ডিম বলা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম মাটি ও আবহাওয়াতে মিয়াজাকির ফলন অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। প্রাকৃতিকভাবে রঙিন হওয়ায় এ আম দেখতে বেশ সুন্দর। সুস্বাদু হওয়ায় এই আমের দামও বেশি। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করে আমাদের দেশের কৃষক লাভবান হবে। চাষটি চাষাবাদ পদ্ধতিতে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। বাজারে প্রচলিত আমের তুলনায় এর দাম কয়েকগুণ বেশি। পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষকরা এ জাতের আম চাষ করে লাভবান হতে পারবে।’
খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, ‘বর্তমানে প্রচলিত জাতের পাশাপাশি বিদেশি জাতের আম চাষাবাদে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে প্রথমবারের মতো জাপানি আম মিয়াজাকির চাষাবাদ শুরু হয়েছে। পাহাড়ের আবহাওয়ায় এটি চাষাবাদ উপযোগী।’ পরবর্তীতে হর্টিকালচারের সেন্টার মাধ্যমে এটি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।