জুমবাংলা ডেস্ক : বেনাপোল স্থলবন্দরে ৪০-৪৫ ছিনতাইকারীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। প্রতিনিয়ত তাদের জিম্মি করে টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। দুই মাসে চক্রের অন্তত ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের গ্রেফতার করলেও নিবৃত করা যাচ্ছে না। আদালত থেকে জামিন নিয়ে তারা ফের ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। যুগান্তরের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
চক্রের সদস্যরা বংশপরম্পরায় এ পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এজন্য তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পাসপোর্ট যাত্রীদের ছিনতাই বন্ধ না হওয়ায় স্থলবন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল মিয়া জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকায় ৪০ থেকে ৪৫ জনের ছিনতাইচক্র রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হলেও তৎপরতা থেমে নেই। আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে ফের একই পেশায় জড়িয়ে পড়ছে তারা। দুই মাসে অন্তত ২৫ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাসপোর্ট যাত্রীদের নিরাপত্তায় সতর্ক রয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ৫-৭ হাজার দেশি-বিদেশি পাসপোর্টধারী যাতায়াত করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভোরে বাস থেকে নামার পর বন্দরের বাসটার্মিনাল ও যাত্রী টার্মিনালে যান। এ সময় পাসপোর্ট ফর্ম ও ভ্রমণ কর কেটে দেওয়ার কথা বলে চিহ্নিত ছিনতাইকারীরা তাদের বিভিন্ন গলিতে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা কেড়ে নেয়। আবার কখনো টাকার নম্বর এন্ট্রির কথা বলে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনে এসব ঘটনা ঘটলেও ছিনতাইকারীদের সঙ্গে সখ্যের কারণে তারা এড়িয়ে চলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সবশেষ শনিবার মনোজ কুমার নামে হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য এক পাসপোর্ট যাত্রী তাদের খপ্পরে পড়েন। বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাত্রাকালে তার মেয়ে অবন্তী করকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ইমিগ্রেশন সংলগ্ন ওয়ান ব্যাংকের এটিএম বুথের পাশে গলিতে নিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ছিনতাইকারী চক্র।
এ সময় ৩৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় চক্রটি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী অবন্তী কর বেনাপোল পোর্ট থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন বেনাপোল পোর্ট থানাধীন বড় আঁচড়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে মো. শোয়েব আক্তার, একই গ্রামের জাবের শেখের ছেলে শেখ রাহাদ অন্তর ও ইউনুস আলীর ছেলে আবদুল কাদের।
৩০ অক্টোবর বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া পাসপোর্টধারী এক ক্যানসার রোগীর টাকা ছিনতাই হয়। এতে জড়িত বেনাপোল পোর্ট থানাধীন সাদীপুর গ্রামের লোকমান সিকদারের ছেলে শিমুল শিকদার এবং একই থানাধীন নামাজগ্রামের আজগর আলীর ছেলে মিলন হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২ সেপ্টেম্বর বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন অন্তত ৮ পাসপোর্ট যাত্রী।
তাদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় চক্রটি। দুজনের ১৩ হাজার টাকা উদ্ধার হলেও বাকিদের টাকা খোয়া গেছে। এদিন ছিনতাইকারীর কবলে পড়া খুলনার বটিয়াঘাটার বাসিন্দা সাগর হোসেন জানান, ভারতে গমনের উদ্দেশে যাত্রীটার্মিনালের সামনে সকালে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানে কয়েকজন লোক তাকে বলে অনলাইনে ভ্রমণ কর জমা দিলে তারা বন্দরের লম্বা লাইনের আগে ইমিগ্রেশনে পৌঁছে দেবে। পরে তাকে পাশেই একটি মার্কেটের গলিতে কম্পিউটারের দোকানে বসায়।
সেখানে ট্যাক্স জমা দেওয়ার পর টাকার নম্বর লিখতে হবে জানিয়ে ওই ঘরের পাশের কক্ষে বসায় ছিনতাইকারীরা। একপর্যায়ে সঙ্গে থাকা ৫২ হাজার টাকা নিয়ে আবার ফেরত দেয়। পরে সন্দেহ হলে গুনে দেখেন সেখান থেকে ২৩ হাজার টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলে বন্দর ও বিজিবি সদস্যের সহযোগিতায় ৭ হাজার টাকা ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়।
জানতে চাইলে বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, পাসপোর্ট যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখে। আমরা ভেতরে ইমিগ্রেশনের বিষয়টি দেখি। পাসপোর্ট যাত্রীদের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা দুঃখজনক। এটি বন্ধ হওয়া উচিত।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, সাধারণত বাস থেকে নামার পর বাইরে টার্মিনালে পাসপোর্ট যাত্রীদের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ভেতরে ছিনতাইয়ের সুযোগ নেই। এ ঘটনায় স্থানীয় মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এজন্য তা পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে সবাই মিলে ছিনতাই শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি আমরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।