সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকে সম্প্রতি নতুন একটি মেথড ভাইরাল হয়েছে। এ মেথডকে অনেকেই একটি আদর্শ লাইফস্টাইল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এর কারণও আছে অবশ্য। ৩০ -৩০-৩০ মেথডে খুবই কম পরিশ্রমে দ্রুত ওজন কমে। মেনে চলতে হবে খুব সহজ কিছু বিষয়।
মেথডটির প্রধান বিষয় হচ্ছে, রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে সকালের নাশতায় রাখতে হবে ৩০ গ্রাম আমিষ, যা খেতে হবে ৩০ মিনিট সময় নিয়ে। এরপর ৩০ মিনিট হাঁটা বা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ ও কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ করতে হবে। নেটিজেনরা বলছেন, এই সহজ গাণিতিক হিসাবেই শরীরের ওজনে আমূল পরিবর্তন আসবে।
এই লাইফস্টাইলের সবচেয়ে সহজ বিষয় হচ্ছে ৩০-৩০-৩০–এর বাইরে আর কোনো নিয়ম মেনে চলতে হয় না। যেমন ক্যালরি গুনে খাওয়ার প্রয়োজন নেই। নেই অন্য কোনো বিধিনিষেধ। এই পদ্ধতিতে বাড়বে মেটাবলিজম, যার ফলে ওজন কমার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।
২০১০ সালে লেখক টিম ফেরিসের লাইফস্টাইল–বিষয়ক বই ‘দ্য ফোর আওয়ার বডি’তে প্রথম এর উল্লেখ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়েলনেস ও নিউট্রিশন পডকাস্টার গ্রে ব্রেকা এই তত্ত্বকে তাঁর চ্যানেলের মাধ্যমে আবার সবার সামনে নিয়ে আসেন, যা ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটিকে।
এর আগে ২০১৪ সালে আমেরিকার নিউট্রিশন থেরাপিস্ট নাটালি ব্যুরো এক জার্নালে লেখেন, সকালে কেউ যদি ৩০ গ্রাম প্রোটিন খান, তবে দেখা যায়, দুপুরের খাবারের সময় তাঁর ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। এটা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া সকালের প্রথম খাবার প্রোটিন হলে তা ভাঙতে শর্করা ও ফ্যাটের চেয়ে কম সময় লাগে। কারণ, প্রোটিনের মধ্যে আছে থার্মোজেনেসিস গুণাবলি। সবকিছুর সম্মিলিত প্রক্রিয়া ক্যালরি ডেফিসিয়েটকে প্রভাবিত করে। ফলে ওজন দ্রুত হ্রাস পায়।
তবে ওজন কমানোর অন্যান্য পদ্ধতির মতোই এ পদ্ধতিতে রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও। কেবল প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে অন্যান্য উপাদান যেমন শর্করা বা খনিজের ঘাটতি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ প্রভাবিত করে। তাই এই ৩০-৩০-৩০ পদ্ধতি অনেকের ক্ষেত্রে কাজ না–ও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট, ওমেগা থ্রি ফিস অয়েল চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারেন। এ ছাড়া এখনকার ব্যস্ত জীবনে সকালে অনেকেই নাশতা করার সময় পান না। আর এই ডায়েটের ক্ষেত্রে প্রোটিনযুক্ত সকালের নাশতা খেতেই হবে।
প্রোটিন বা আমিষযুক্ত খাবার বেশি খেলে পেট দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ভরা থাকে। ফলে পেটে অযাচিত গ্যাস জমে না, মেটাবলিজম বেড়ে যায়। নিয়মিত এই চর্চা একটা লম্বা সময় পর্যন্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবে। পুনরায় ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। টিকটকে পডকাস্টার গ্রে ব্রেকার দিয়েছেন এক ড্রিম ব্রেকফাস্টের মেনু—দুটি ডিম, এক বাটি ডাল বা ব্ল্যাক বিনস, বড় এক বাটি সবুজ সবজি যেমন পালংশাক।
এ ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদেরা পরামর্শ দেন, সকালে উঠে নাশতার অর্ধেকটা যেমন এক পিস চিকেন ব্রেস্ট বা পাঁচটি ডিম (মোট ৩০ গ্রাম প্রোটিন), এরপর হাঁটা ও ব্যায়াম শেষ করে বাকি নাশতা শেষ করতে হবে। এই বাকি নাশতায় থাকতে পারে পিনাট বাটার দেওয়া ব্রেড বা প্রচুর সবজি দিয়ে রুটি। এভাবে দুই ভাগে সকালের নাশতা করলে পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত ফল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ সময়ে নতুন নতুন অনেক পন্থা আসছে ওজন নিয়ন্ত্রণের, তবে একজন পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যতালিকা মেনে চলা ও ব্যায়াম করাই সবচেয়ে ভালো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।