জুমবাংলা ডেস্ক : ‘ভিক্ষাও করতে পারি না, কারও কাছে হাতও পাততে পারি না, এখন তিনটে পেট চালাব কীভাবে?’
প্রশ্নটি খুলনা মহানগরীর দক্ষিণ টুটপাড়ার জিন্নাহপাড়া খালপাড় (জনকল্যাণ স্কুল সংলগ্ন) এলাকার বাসিন্দা অশীতিপর বৃদ্ধ আবদুর রশিদ হাওলাদারের। খবর ইউএনবি’র।
একে তো দুই ছেলের (একজন মৃত, অপরজন নিখোঁজ) শোক, সেই সাথে প্রোস্টেড টিউমারে আক্রান্ত নিজে ও স্ট্রোক করে বিছানায় পড়া স্ত্রীর চিকিৎসা, ওষুধ কেনা, সর্বোপরি এক নাতিসহ তিনজনের আহার যোগানোর চিন্তা বৃদ্ধ রশিদ হাওলাদারের ওপর।
আবার মাথা গোঁজার সামান্য ঠাঁই থাকলেও মাথার ওপর ছাউনির পুরোপুরি ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। এমনকি, জীবন চালাতে একটি মুদি দোকান দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে তাও পারছেন না। এ অবস্থায় বয়স্ক ভাতা অথবা রেশন কার্ডও পাননি। জীবনভর কঠোর পরিশ্রম করেও শেষ বয়সে এসে জীবনের কাছে হার মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে দেশের এ বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকের।
রশিদ হাওলাদার জানান, তিনটে পেট চালাতে কয়টা ভাত এবং ওষুধ কেনার ব্যবস্থা হলেই তিনি কিছুটা স্বস্তি পেতেন।
স্মৃতিচারণ করে বলেন, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে এবং নাতি-নাতনি নিয়ে ছিল তার সুখের সংসার। কিন্তু সে সুখ কপালে সয়নি। বড় ছেলে ইলিয়াস হাওলাদার (৪০) ঢাকায় গিয়ে ২০১৪ সালে নিখোঁজ হন। আর সন্ধান পাননি তার। এখন ওই ছেলের ১৫ বছর বয়সী ছেলেটির ভারও এ বৃদ্ধের কাঁধে।
২০১৭ সালে ছোট ছেলে মাসুম হাওলাদার (৩৫) টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবা হিসেবে ছোট ছেলের মৃত্যু এবং বড় ছেলের নিখোঁজ হওয়ার শোককে পাথর দিয়ে বুকে চেপে রেখেও বেঁচে আছেন রশিদ হাওলাদার।
তিনি বড় ছেলে ইলিয়াসের বিষয়ে জানান, ছেলেটি ভ্যানে করে খুলনার বিভিন্ন স্কুলের ছেলে-মেয়েদের আনা-নেয়ার কাজ করত। এতে তার সংসার ঠিকমতো না চলায় ২০১৪ সালের দিকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় চলে যায় কাজের সন্ধানে। সেখানে জিনজিরা এলাকায় একটি কাঁচামালের আড়তে কাজ নেয়।
তারও কয়েক দিন পর ইলিয়াস বাবাকে ফোন করে বলেন, ‘আব্বা আমি ১০ হাজার টাকা মাসিক বেতন ও খাওয়া ফ্রিতে একটি জাহাজে চাকরি নিছি, কিন্তু আমার ভয় লাগে, জাহাজে ব্লাকের (চোরাচালান) মাল আছে।’ এটিই তার শেষ কথা। তারপর থেকে ছেলের কণ্ঠ আর শুনতে পাননি রশিদ হাওলাদার। অনেক খুঁজেও মেলেনি তার ছেলের সন্ধান। বেঁচে আছে কি না তাও জানেন না।
অসহায়ত্বের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বৃদ্ধ রশিদ বলেন, ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছেন তিনি। এরপর থেকেই শুরু হয় তার জীবন-সংগ্রাম। তিনি খুলনা শিপইয়ার্ড, দাদা ম্যাচ ও ইস্পাহানি মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। জীবনের প্রয়োজনে রিকশা-ভ্যান চালিয়েছেন, করেছেন গাছের চারা বিক্রিও। এভাবেই কঠোর পরিশ্রম করে ছেলে-মেয়েদের মুখে আহার তুলে দিয়েছেন। কিন্তু এখন আর শরীরে আগের মতো শক্তি নেই। তাই কোনো কাজও আর করতে পারেন না।
তিনি বলেন, নিজে দীর্ঘ আট বছর ধরে প্রোস্টেড টিউমারে ভুগছেন। চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করাতে বললেও অর্থের অভাবে করাতে পারেননি। এমনকি প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০-৫০ টাকার ওষুধ কেনার প্রয়োজন হলেও সেই সামর্থ্য নেই। একইভাবে তার স্ত্রী দুবার স্ট্রোক করেছেন। এখন যন্ত্রণায় ছটফট করেন। তারও প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধের দরকার, কিন্তু পয়সা নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে যৎসামান্য ত্রাণ পেলেও তা শেষ হয়ে গেছে।
বৃদ্ধ রশিদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, একে তো খাবার ও ওষুধের চিন্তা, তার ওপর ছাউনি না থাকায় বৃষ্টি হলে ভিজতে হয়। অন্যের সহযোগিতায় কোনোরকমে একটি ছাপড়া ঘর তুলতে পারলেও ছাউনি এবং বেড়া দিতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে সরকারের বিশেষ সাহায্যের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।
প্রতিবেশী খুলনা আলিয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মুফতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, বৃদ্ধ আবদুর রশিদ আসলেই খুব অসহায় জীবনযাপন করছেন। ঘরে খাবার নেই, মাথার ওপর ছাউনি নেই। কোনো উপার্জনও করতে পারেন না। এ অবস্থায় তিনি চেষ্টা করে ছাউনির জন্য কিছু টিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আরও প্রয়োজন।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন মিঠু বলেন, ‘আবদুর রশিদকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঘরের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পেলে চেষ্টা করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।