মাহবুব কবির মিলন: ভুত, ভুতের আড্ডা ধরা খেয়েছে (বাকি আছে জ্বীন)। ব্যাটন রোজ, কেএফসি, ডোমিনোজ পিজ্জাও বাকি নেই। আজ জরিমানা গুনেছে চিলক্স, বনানী। অথচ কাউকেই জরিমানা বা শাস্তি দিতে চাই না আমরা। এটা সঠিক পথ নয়। একটি রেস্তরাঁয় অনিয়ম ধরা পড়লে জানা গেল কয়েকজন ছাত্র মিলে লেখাপড়ার পাশাপাশি এটা চালায় তাঁরা। শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। খারাপ হয়ে গেল আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটের। কিন্তু করার কিছুই নেই। জরিমানা গুনতেই হয়েছে তাঁদের।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস শুধু মোটিভেশনের মাধ্যমেই অনেক পরিবর্তন আনা সম্ভব। শাস্তি বা মামলা একটি বড় হাতিয়ায় হতে পারে, কিন্তু তা স্থায়ী সমাধান কখনোই আনবে না।
দুষণ বড় মারাত্মক বিষয়। এর সমাধান একদিনে আসবে না। বছরের পর বছর লাগবে। খাদ্য শৃঙ্খলের গোড়া দেশের প্রতি বাড়ি বাড়ি, জমিতে জমিতে, খামারে, শিল্পে ঢুকে গেছে। মাথা ধরে টান দিলে কোন লাভ হবে না।
বাংলাদেশ থেকে যে সব মশলা আমেরিকায় যায়, সেই সব মশলা এবং সেখানে বাংলাদেশিরা যারা সেই মশলা খেয়ে থাকেন, তাঁদের রক্ত দশ বছর ধরে পরীক্ষা করে সব মশলা এবং রক্তে সীসার ভয়াবহ মাত্রা পেয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশে নোটিফিকেশন দিয়েছে আমেরিকা। ২য় বার তাগিদ দেয়া হয়েছে আমাদের।
কয়েকদিন আগে আমেরিকায় পাঠানো বেশ কয়েক টন সুগন্ধি চাল ফেরত পাঠিয়েছে আমেরিকা। ইউএস এফডিএ পরীক্ষা করে সে চালে ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশক পেয়ে পুরো চালান ফেরত পাঠিয়েছে।
চাল রপ্তানিকারকের গলা চিপে ধরা যাবে নিশ্চিত। কিন্তু এ সমস্যা ভয়াবহ এবং জটিল। ইউএস এফডিএ এর রিপোর্ট ভুল হবার কথা নয়। কিন্তু চাল আমেরিকায় জাহাজে যেতে সব মিলিয়ে দুই মাসের মত সময় লেগে যায়। এত দিন কীটনাশকের রেসিডিউ থেকে যেতে পারে, তা ভাবতেই হতবাক হয়ে যাচ্ছি।
আমরা ফসলে যে সব কীটনাশক ব্যবহার করি, তা সর্বোচ্চ ২০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে ক্ষতিকর মাত্রায়। শুধু চা এবং তুলার কীটনাশক থাকে কয়েক মাস।
ইউএস এফডিএ কীটনাশকের নাম বলেনি। আমাদের ল্যাবগুলোর সক্ষমতা নেই আন্দাজে পরীক্ষা করে সব কিছু বের করে ফেলতে।
কিছু দিন আগে একটি সংস্থা চাল পরীক্ষা করে ক্ষতিকর মাত্রায় হেভি মেটাল পেয়েছে। অথচ চালের উপরেই বেঁচে আছি আমরা।
এভাবে চলতে থাকলে খাদ্য রপ্তানিতে মহা বিপর্যয় নেমে আসবে আমাদের হয়ত।
আমাদের রুটে নামতে হবে। সময় লাগবে। সময় দিতে হবে। ছেড়ে দিন আমাদের। আদালত বলেন আর প্রশাসন বলেন, চারিদিক দিয়ে চেপে ধরলে সমস্যা সমাধানে তা দীর্ঘসূত্রিতার জন্ম দেবে।
যুগযুগ ধরে চলা পচে গলে যাওয়া সমস্যা এক দুই দিনে সমাধান সম্ভব নয়। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কোন প্রকার ছাড় দেয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে আপনার বাচ্চা বা পরিবার কিন্তু এর বাইরে নয়।
আমাদের সন্তানদের জন্য শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত লড়ে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই আর আমাদের।
মাহবুব কবির মিলন: সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।