জুমবাংলা ডেস্ক : লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার জমিদার বাড়ি। জেলার প্রাচীন ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন। শত বছরের পুরনো এই বাড়ি অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র ছিল। বিপুল রাজস্ব পেত সরকার। মাঝে কিছুদিন এটি বেদখল হয়েছিল। পুনরায় এটি সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
স্বার্থান্বেষী মহল বাড়িটি দখল করে রেখেছিল দীর্ঘদিন। অযত্ন আর অবহেলায় প্রায় ধ্বংস হয়েছে বাড়িটি। চুরি হয়েছে মহামূল্যবান বহু জিনিসপত্র। দেয়ালগুলো শ্যাওলায় পরিপূর্ণ। দেয়ালের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। জঙ্গলে ভরা এই স্থাপনাটি স্থানীয় পর্যটকদের কাছে ভূতুড়ে বাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পাশাপাশি অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ হতো এখানে।
সম্প্রতি প্রাচীন এই নিদর্শনকে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক। এর পর থেকেই প্রতিদিনই শত শত পর্যটক বাড়িটি দেখতে ভিড় করছেন।
জানা গেছে, দেশভাগের আগে ১৯৪৬ সালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজারের জমিদার নবীন কিশোর রায় ও নরেন্দ্র কিশোর রায় প্রায় ৩৬ একর সম্পত্তি রেখে ভারতে চলে যান। সেই সম্পত্তির ২২ একর জুড়ে দৃষ্টিনন্দন খোয়াসাগর দিঘি। ১৪ একর জুড়ে আছে পরিত্যক্ত রাজ গেট, প্রাসাদ, শান বাঁধানো ঘাট, জমিদার বাড়ির প্রাচীর, নৃত্যশালা ও তিনটি পুকুর। ১৯৫০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করে এ সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করায় তা সরকারি সম্পদে পরিণত হয়।
১৯৬৫ সালে আব্দুল মোমেন চৌধুরী সরকারের কাছ থেকে ৭ একর ৮৬ শতক জমি লিজ নেন। পরে ৪ একর ৮৬ শতক জমি আরো দুই বছরের জন্য লিজ নিয়ে ২০১৫ সালের ২০ জুন অর্থাৎ প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করেন। এছাড়া, এসব সম্পত্তির কিছু অংশ স্থানীয় তহসিলদার ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দখল করেছেন প্রভাবশালীরা।
২০১৫ সালে ওই লিজ বাতিলের পাশাপাশি অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন দখলকারীরা। দীর্ঘ শুনানির পর ২৯ আগস্ট তা খারিজ করে দেন আদালত। আদালতের রায়ের পরেই এই স্থাপনার সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসক। এদিকে, ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঐতিহাসিক নিদর্শন বিবেচনা করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর স্থাপনাটিকে সংরক্ষণযোগ্য সম্পদ হিসেবে গেজেট প্রকাশ করেন।
আবদুল কাদের মিয়াসহ কয়েকজন বৃদ্ধ জানান, লক্ষ্মীনারায়ণ নামে এক ব্যক্তি কাপড়ের ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে দালাল বাজারে আসেন। তার ছেলে ব্রজবল্লভ ব্যবসার প্রসার ঘটান। ব্রজবল্লভের ছেলে গৌরকিশোর রায় কলকাতায় পড়ালেখার সুবাদে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহচর্যে আসেন এবং জমিদারি কেনেন। তিনি ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজা উপাধি লাভ করেন। গৌরকিশোর রায় ও রাণী লক্ষ্মী প্রিয়া ছিলেন নিঃসন্তান। তারা ঢাকার বিক্রমপুর থেকে গোবিন্দ কিশোরকে পোষ্যপুত্র হিসেবে আনেন। গোবিন্দ কিশোর রায়ের ছেলে নবীন কিশোর রায় জমিদারির খাজনা আদায় ও তদারকি করতেন। জমিদার ও তাদের উত্তসূরীরা ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে এ বাড়ি নির্মাণ করেন।
ময়না ও আছমা আক্তার নামে দুজন পর্যটক বলেন, ভূতুড়ে বাড়ি হিসেবে পরিচিত এই জমিদার বাড়ির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়েছে, তাই দেখতে এসেছি। এমন উদ্যোগ আরো আগেই নেয়া উচিত ছিল। কারণ, অযত্নে পড়ে থাকার কারণে এখানকার বহু মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। ধসে পড়েছে দেয়ালের অধিকাংশ।
তারা আরো বলেন, ইতিহাস-ঐতিহ্য একটি জাতি, দেশ ও অঞ্চলের অহংকার। নতুন প্রজন্মের সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনেও ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য জেলার এই প্রাচীন স্থাপনার শতভাগ সংস্কারের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, প্রাচীন এই নিদর্শনকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে সংস্কারের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে খোয়াসাগর দিঘির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়েছে। এই জমিদার বাড়ির সংস্কারকাজ শেষ হলে জেলার পর্যটন বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এখান থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারবে সরকার।
সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এবং লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাংসদ এ কে এম শাহজাহান কামাল বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর কুচক্রীদের হাত থেকে এই স্থাপনা উদ্ধার হয়েছে আদালতের রায়ের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে শত শত লোকজন স্থাপনাটি দেখতে প্রতিদিনই এখানে আসছেন। জেলার এই ঐতিহ্যকে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় করতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।