ব্রেইন ফগ, স্মৃতিভ্রংশ বা মস্তিষ্কের কাজে মন্থরতা—এই বিষয়গুলোর সঙ্গে শারীরিক সচলতা বা ব্যায়ামের ওতপ্রোত যোগসূত্র পেয়েছেন গবেষকেরা। যান্ত্রিক জীবনের অভ্যস্ততা আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক বেশী অলস করে দেয়। দীর্ঘ সময় একই ধরনের শুয়ে-বসে থাকার জীবনযাত্রা আমাদের মস্তিষ্ককে অভ্যস্ত করে ফেলে গতানুগতিক রুটিনে।
সমীক্ষায় দেখা যায়, বছরের পর বছর সারা দিন ডেস্কে বসে কাজ করা বা ঘরে বসে কাজ করা ব্যক্তিদের শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়। আর বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর অব্যর্থ দাওয়াই একমাত্র ব্যায়াম। অনেকে মনে করে থাকেন, ঘরের কাজ, যেমন রান্না করা, ঘর মোছা, ঝাড়ু দেওয়া কিংবা কাপড় ধুলেও কার্যকর ব্যায়াম হয়। কিন্তু সেটা একেবারেই ভুল ধারণা।
এগুলো কায়িক শ্রম বা ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ম্যানুয়াল লেবার। এতে আপনার ঘাম হলেও আদতে একসঙ্গে তেমন একটা ক্যালরি খরচ হয় না আর বডি টোনিংয়েও খুব একটা প্রভাব পড়ে না। আপনি যদি কার্যকরিভাবে ক্যালরি বার্ন করে সঠিকভাবে সুস্থ থাকতে চান, তবে অবশ্যই নিয়মিত শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই।
অনেকেই বাসায় ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম, ইয়োগা বা হাঁটাহাঁটি করে থাকেন। তবে প্রায়ই দেখা যায়, দু-তিন দিন নিয়মিত এসব করার পর হুট করেই বিরতি পড়ে যাচ্ছে। পেশিগুলো মস্তিষ্কে এই নিয়মিত শরীরচর্চার ব্যাপারটি জানান দেবার আগেই এই বিরতি মস্তিষ্ককে সচল হয়ে ওঠা থেকে দূরে রাখে। নিয়মিত জিমে গেলে তা আপনার লাইফস্টাইলের একটা অংশ হয়ে যায়। জিমে গেলে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়।
অন্যকে দেখে নিজের মধ্যে ইচ্ছাশক্তি তৈরি হয়, যেটা মানসিকভাবে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, আর আপনার মধ্যে চেষ্টা করার স্পৃহা জাগায়, যেটা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। উচ্চমাত্রার ওয়ার্ক আউট, যেমন জুম্বা, অ্যারোবিক্স, পাওয়ার ইয়োগা ইত্যাদি আপনার পেশী, হৃদযন্ত্র ও হাড়ের জন্য খুবই ভালো। মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় রয়েছে নিয়মিত উচ্চমাত্রার ব্যায়ামের বিস্ময়কর প্রভাব।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, যাঁরা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তাঁদের চিন্তার পরিধি অনেক বেশি। সৃজনশীল চিন্তাও বেশী করতে পারেন তাঁরা। খুব দ্রুত যেকোন সমস্যার সমাধান তাঁরা করে ফেলতে পারেন। আবেগের সঠিক নিয়ন্ত্রণে তাঁরা বেশি পারদর্শী হয়ে থাকেন। এর ফলে আমাদের স্মৃতিশক্তি শাণিত হয়, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ হ্রাস পায়। এছাড়া ডিমেনশিয়া, আলঝেইমার আর স্মৃতিশক্তি বিলুপ্তির মতো বিরল ও জটিল রোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয় নিয়মিত ব্যায়াম।
দেখা যায়, যাঁরা নিয়মিত জিমে শরীরচর্চা করেন, তাঁদের চেয়ে যাঁরা একেবারেই শরীরচর্চা করেন না বা খুব একটা সচল না—তাঁদের ডিমেনশিয়ার আশঙ্কা প্রায় দ্বিগুণ। সকাল সকাল জিমে ঘাম ঝরিয়ে এলে দেখবেন, সারা দিনের কাজে আপনি অফুরন্ত কর্মশক্তি পাবেন।
এর কারণ, হাই ইনটেন্সিটি ব্যায়াম আপনার হ্যাপি হরমোন—নরএপিনেফ্রিন, ডোপামিন, সেরেটনিন, এসিটাইকোলিন) নিঃসরণে সহায়তা করে। এর ফলে আপনার কর্মশক্তি বৃদ্ধি পাবে। নিউরোসায়েন্সেসের মতে, সেই সময় আপনার মস্তিষ্কে এই হরমোনের নিঃসরণ নিউরোকেমিকেল স্নানের মতো প্রভাব ফেলে আপনার মস্তিষ্ককে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে।
নিউইয়র্কের সেন্টার ফর নিউরাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক ওয়েন্ডি সুজুকি তাঁর গবেষণা গ্রন্থ ‘গুড অ্যাংজাইটি হারনেসিং দ্য পাওয়ার অব দ্য মোস্ট মিসআন্ডারস্টুড ইমোশন’-এ এই নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। তাঁর মতে, ব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্ককে পুষ্টি দান করে ও সচল করে। এই মস্তিষ্কই গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি সংরক্ষণ করে। নিয়মিত শরীরচর্চার জন্য ফিটনেস এক্সপার্ট হবার কোন প্রয়োজন নেই, আপনার বয়স কত, এটাও তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না।
নিয়মিত ব্যায়ামের সুফল পাওয়ার জন্য একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সপ্তাহে ১৫০-১৭৫ মিনিট যেকোনো ধরনের জিম এক্সারসাইজ যথেষ্ট। জিমে গিয়ে অবশ্যই আপনার ট্রেনার বা ইনস্ট্রাক্টরের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যায়াম নির্বাচন করবেন। ব্যায়াম করুন, ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দিন হৃদয় থেকে মস্তিষ্কে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।