বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: উত্তর কোরিয়ার সরকারি গণমাধ্যমে বেশ কয়েকটি ছবি প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের পর থেকে তাদের সর্ববৃহৎ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা থেকে এসব ছবি তোলা হয়েছে। এসব ছবিতে কোরিয়া উপদ্বীপ এবং আশপাশের এলাকা দেখা যাচ্ছে। খবর বিবিসি বাংলার।
উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, এটি ছিল হোয়াসং-১২ নামে মধ্যম পাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান জানিয়েছে, জাপানের উপকূলের কাছে সাগরে পড়ার আগে এটি দুই হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় উঠেছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার পূর্ব তীরে স্থানীয় সময় সকাল আটটার কাছাকাছি এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়।
এই মাসে সপ্তম বারের মতো উত্তর কোরিয়ার চালানো ওই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নিন্দা জানিয়েছে দেশ দুইটি। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় নিউজ এজেন্সি, কেসিএনএ ছবিগুলো প্রকাশ করে জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের যেখানে বোমা থাকে, সেখানে সংযুক্ত একটি ক্যামেরা থেকে ছবিগুলো তোলা হয়েছে।
দুইটি ছবিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সময়কাল উঠে এসেছে। বাকি ছবিগুলো তোলা হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রটি আকাশের দিকে ওঠার সময়।
জাপান এবং উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, আধা ঘণ্টায় ক্ষেপণাস্ত্রটি ৮০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে। উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমানবিক অস্ত্র পরীক্ষার উপর জাতিসংঘের একটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দেশটির উপর জাতিসংঘের কঠোর অবরোধ রয়েছে।
কিন্তু পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি নিয়মিত এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে। দেশটির নেতা কিম জং আন সামরিকভাবে দেশটিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বলছে, ২০১৭ সালের নভেম্বরের পর আর এত বড় মিসাইল ছোঁড়া হয়নি। দেশটির বার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি কতটা নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে যেতে পারে, সেটা দেখতেই এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে। সেই সময় দেশটির নেতা কিম জং-আন উপস্থিত ছিলেন না।
উত্তর কোরিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক অঙ্কিত পান্ডা বলছেন, কিম জং-আনের অনুপস্থিতি আর ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বক্তব্যের ভাষা দেখে মনে হচ্ছে, এই পরীক্ষা শুধুমাত্র নিজেদের জাহির করার জন্য করা হয়নি। বরং যেভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কাজ করা উচিত, সেভাবে কাজ করছে কিনা, সেটা যাচাই করাই ছিল এর উদ্দেশ্য।
এই জানুয়ারি মাসেই উত্তর কোরিয়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। দেশটি বেশ কয়েকটি অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে সাগরে। তার মধ্যে দুইবার ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপ পার হয়ে সাগরে পড়েছে। উত্তর কোরিয়া এর আগে জানিয়েছে, এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বড় আকারের পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা ইয়োনহ্যাপের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার ছোঁড়া মিসাইলটির সাথে ২০১৭ সালের হোয়াসোং-১২ মিসাইলের বেশ সাদৃশ্য আছে।
চলতি মাসের শুরুতে উত্তর কোরিয়া যেসব ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা করে তা আমেরিকা ও জাপানের ব্যয়বহুল ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভন্ডুল করে দিতে সক্ষম।
দুই হাজার আঠারো সালে মি. কিম পারমাণবিক অস্ত্র বা দূরপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার উপর স্থগিতাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
দুই হাজার উনিশ সালেই উত্তর কোরিয়ার এই নেতা বলেন তিনি আর সেই স্থগিতাদেশ মানতে বাধ্য নন। যুক্তরাষ্ট্র জানুয়ারি মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করে, এরই প্রতিক্রিয়ায় উত্তর কোরিয়া কয়েকটি মিসাইল নিক্ষেপ করে।
জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই দুই দেশের মধ্যে সংলাপ থমকে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক ন্যাভাল কমান্ডার প্রফেসর কিম ডং ইয়ুপ বলেন, “উত্তর কোরিয়া বিচ্ছুর লেজের মতোন একটা প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করছে।” তিনি মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার মূল উদ্দেশ্য আক্রমণ নয়, প্রতিরক্ষা করা। তাই দেশটি ‘বৈচিত্র্যময় এক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ নিশ্চিত করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।