মায়ের দেয়া ২’শ টাকায় পুলিশে চাকরি পেল সাদিয়া

“বড় দুলাভাই দুইশ টাকা দেওয়ার পর সে টাকা দিয়েই আবেদন করি। যেদিন লাইনে দাঁড়াবো, সেদিন মায়ের অন্যের বাড়িতে কাজ করে মায়ের এনে দেয়া ২০০ টাকা নিয়ে নাটোরে গিয়ে পুলিশের লাইনে দাঁড়াই। এরপর শারীরিক, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এখন চাকরি পাওয়ার পর মনে হচ্ছে মায়ের দুই’শ টাকাই আমার জন্য আর্শিবাদ হয়ে দাঁড়ায়।”

হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে সাদিয়া সুলতানা পুলিশে চাকরি পাওয়ার পর চোখে আনন্দ অশ্রু আর শত ক*ষ্ট ছাপিয়ে এভাবেই পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়ার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার পাকুরিয়া গ্রামের হত দরিদ্র জবদুল প্রামাণিকের মেয়ে সাদিয়া সুলতানা।

গ্রামের মাটির ঘরেই বেড়ে উঠা সাদিয়া সুলতানার। সাদিয়ার বাবার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর ঘরে সাদিয়ার মা সহ ৫ জনের বসবাস। সাদিয়ার বাবা দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। তেমন একটা খোঁজ রাখেন না তাদের। মা হাজেরা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার আর সাদিয়ার পড়াশোনার খরচ বহন করেন।

সাদিয়া চলনবিল মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। চার বোনের মধ্যে সাদিয়া সবার ছোট।

সাদিয়া মা হাজেরা বেগম বলেন, প্রথমে যখন পুলিশ নিয়োগের সার্কুলার হয়, তখন আমার বড় মেয়ে জামাই ইসমাইল হোসেন ফোনে সাদিয়াকে আবেদন করতে বলেন।

সাদিয়া তখন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে আবেদন করতে চায় না। তার দুলা ভাইকে বলে টাকা ছাড়া চাকরি হবে না, শুধু শুধু আবেদন করে কি লাভ। তারপরও দুলা ভাইয়ের কথা অনুযায়ী সাদিয়া জামাইয়ের কাছ থেকে দুইশ টাকা নিয়ে আবেদন করে। পরে লাইনে দাঁড়ালে তার চাকরিটা হয়। এখন বিশ্বাসই হচ্ছে না টাকা ছাড়াও সরকারি চাকরি হয়।

পুলিশের কনস্টেবল পদে আগে থেকেই বিনা টাকায় নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন। মাত্র একশ টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়া যাবে পুলিশের এমন ঘোষণার পর অনেকেই বিষয়টি হাস্যকর বলেছেন। কিন্তু বিনা টাকায় চাকরি দিয়ে সে কথা রেখেছেন পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন। বিনা টাকায় চাকরি পেয়ে এখন হতদরিদ্র পরিবারগুলোতে চলছে আনন্দের বন্যা।