জুমবাংলা ডেস্ক : মেট্রোরেলে আগে নামবে নাকি উঠবে? বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কয়েকদিন ধরেই নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। মেট্রোতে ওঠার সময়ের তীর চিহ্নিত একটি ছবি শেয়ার করে কেউ বলছেন, মেট্রোতে আগে নামতে দিন পরে উঠতে দিন এমন কোনো অপশন নেই। কেউ বলছেন, আগে যাত্রীদের নামতে দিন। আবার কেউ কেউ বলছেন, ব্যাপারটা ঠিক এমন না। বুঝে উঠতে সময় লাগবে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি কমিউনিটি গ্রুপে লুৎফুল্লাহ মাসুদ নামের এক যাত্রী লিখেছেন, ‘মেট্রোতে আগে নামতে দিন পরে উঠতে দিন এমন কোনো অপশন নেই। কারণ মেট্রো একটা স্টেশনে সর্বনিম্ন ১৫ সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৪০/৫০ সেকেন্ড দাঁড়ায়। এখন এই অল্প সময়ের মধ্যে আপনি যদি আগে নামতে দেন তাহলে কি আপনি উঠতে পারবেন!’
তীর চিহ্নিত মেট্রো স্টেশনের একটি ছবি শেয়ার করে লুৎফুল্লাহ মাসুদ আরও লিখেছেন, ‘এখন ছবিতে আসেন। ছবিতে যে মার্ক করা তিনটা চিহ্ন। ডান এবং বামপাশের চিহ্ন হচ্ছে ভিতরে যাওয়ার দিকে আর মাঝের চিহ্ন হচ্ছে বাহিরে আসার দিকে। এর মানে হচ্ছে আপনারা ডান এবং বাম পাশের জায়গা দিয়ে ভিতরে ঢুকবেন কোনাকুনিভাবে এবং মাঝের জায়গাটা ফাঁকা রাখবেন যাতে করে স্টপে নামার যাত্রী বের হতে পারে। কিন্তু আমরা সবসময় উল্টাটাই করি। কারণ আমরা বাঙালি। আমরা সভ্য ফেসবুকেই বাস্তবে আমরা চেষ্টাটাও করি না।’
সেখানে সৈয়দ মনির কমেন্ট করেছেন, ‘লন্ডনের টিউবে (যেটা বাংলাদেশে মেট্রো) আগে যাত্রী নামবে পরে যাত্রী উঠবে এটাই প্র্যাকটিস। যাত্রীকে আগে নামতে না দিলে কোচ খালি কিভাবে হবে? ক্রাউডের কারণে যদি যাত্রী উঠতে না পারে তা তো সমস্যা নেই কারণ পিক আওয়ারে চার/পাঁচ মিনিট পর পর টিউব আসছে। অবশ্য অফ পিক আওয়ারে টিউটগুলি চার পাঁচ মিনিচ পর পর আসে না। একটু দেরি করে আসে।’
ফুয়াদ খান লিখেছেন, ‘ব্যাপারটা ঠিক এমন না। যারা নামবেন তারা মাঝখান দিয়ে বের হবেন আর যারা ঢুকবেন তারা ডান-বামদিক থেকে ঢুকবেন তবে একই সময়ে না। আগে সবাইকে বের হতে দিবেন তারপর ঢুকবেন। এটাই নিয়ম। আর কত সেকেন্ড দাঁড়ায় সেটা ফিক্সড বা অটোমেটেড না। নির্ধারিত যাত্রী বা মোটামুটি সবাই না ঢোকা পর্যন্ত দরজা বন্ধ হয় না। মেট্রো ড্রাইভার সুইচ চাপ দেওয়ার পরই দরজা বন্ধ হয়।’
নাফিসা নবী তাকি লিখেছেন, ‘এই সিস্টেমে নামলে ৩০ সেকেন্ড অনেক টাইম, কারণ একটা বগিতে ৪টা ডোর থাকে। জাপানের এর থেকে বেশি যাত্রী যাতায়াত করে। সবাই এই সাইনের নিয়মেই মেট্রোতে উঠা-নামা করে। ওখানে তো কোনো ঝামেলা বা বিশৃঙ্খলা হয় না।’ জাহিদ বিন হাসিনা লিখেছেন, ‘মেট্রো আসছে ৫/৬ মাস হয়েছে। অন্যদিকে লিফট আসছে কম করে হলেও ২০ বছর। আমরা এখনো লিফটের সঠিক ব্যবহার পারি না। আর মেট্রো। এটা হাস্যকর।’
একটি ছবি শেয়ার করে এম এ ফারাবি লিখেছেন, ‘আপনার জানার ঘাটতি আছে। মনে যা আসলো তাই লিখে দিলেন। সংযুক্ত ছবি মেট্রো স্টেশন থেকে তোলা। আগে যাত্রীদের নামতে দিন। আর আপনি যে চিহ্ন গুলোর কথা বলছেন সেগুলোর মধ্যে মাঝে চিহ্ন দ্বারা বোঝাচ্ছে নামার সময় মাঝখান দিয়ে নামবে, আর যারা উঠবে তারা দুই পাশে দাঁড়াবে। এটাই মূল বিষয়।’
টেনশনের একটি ইমোজি শেয়ার করে বাশার আল আসাদ লিখেছেন, ‘গতদিন মেট্রো থেকে নামতে যেয়ে খুবই বিরক্ত হয়েছি। যেটা বলার মতো না। আমাকে যেন নামতেই দেবে না ব্যাপারটা এমন!’ মো. সাব্বিল লিখেছেন, ‘দূর মিয়া আগে উইঠা লই।’ আসাদুর রহমান লিখেছেন, ‘একটি ঢোকার আরেকটি বের হওয়ার জন্য রাখলেই হয়।’ অমিক আইচ লিখেছেন, ‘আমরা এসবের যোগ্যই নই আসলে!’
ইমরান বারী লিখেছেন, ‘অনেকে তো জানেই না যে এই চিহ্নগুলোর মানে কি…।’ তাকে আবার রিপ্লাই্ দিয়েছেন অনেকেই। মাহজাবিন ই মনিরা লিখেছেন, ‘জন্ম থেকে সবাই সব কিছু জানে না। কিছু জিনিস নিজের জ্ঞান বুদ্ধি বিবেচনা থেকে নিতে হয়। কিন্তু আমরা এই গুলা নিয়া একটু ভাবিই না।’ আরিফ জামান নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘আসলে না জানাটা দোষের নয়, দোষের হল জানতে না চাওয়ার মানসিকতা।’ ঝর্ণা বারৌ লিখেছেন, ‘এই সব সাংকেতিক চিহ্ন বুঝতে বাঙালির শত বছর কেটে যাবে মনে হচ্ছে।’
এম নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বুঝে উঠতে সময় লাগবে। এই ব্যাপারটা স্টেশনে এনাউন্সমেন্ট করা উচিৎ। আর দোতলায় কোন যাত্রী কোন পাশ দিয়ে উঠবে তাও ঘোষণা দেওয়া উচিৎ, কারণ অনেকেই উল্টো দিকের ট্রেনে উঠে যান। মনে রাখা দরকার আমাদের দেশের সবাই যথেষ্ট শিক্ষিত নয় যে লিখিত নির্দেশনা ফলো করতে পারবে।’ মইনুদ্দিন হাসান লিখেছেন, ‘প্রথমে সিকিউরিটি থাকা প্রয়োজন। পরে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। না হয় জরিমানা করতে হবে।’
সুভিও নাগ লিখেছেন, ‘ভাবছিলাম আপনাকেও কথা শুনাবো কিন্তু পুরোটা পড়ে দেখলাম না, আপনিও সঠিক কথাটাই বলেছেন। তবে একটা জিনিস কি জানেন? এই ওটা নামার সমাধানও আমরা করতে পারি। ২০/৫০ সেকেন্ড যদি হয় যাত্রা বিরতি তবে উঠবো না মেট্রোতে। কিছুদিন একযোগে এমন হলেই টনক নড়বে সবার। বুঝতে পারবে তাদের ভুল। এ দেশ উন্নত হবে, সবকিছু উন্নত হবে কিন্তু এদেশে আর কখোন কোন বুদ্ধিজীবী হবে না, এদেশে কোন সঠিক পরিকল্পনাকারি হবে না। প্রত্যেকটা স্টেপে থাকবে বিভিন্ন ভুল আর আমরা জনগণ তো জনগণই। এদের কথা কি আর বলবো।’
শামসুল আলম লিখেছেন, ‘সমস্যা একটাই যারা ভেতরে প্রবেশ করবেন তারাই মাঝ বরাবর বেশি থাকে। আমার গতকালের অভিজ্ঞতা হলো একজন ভদ্রলোকে বললাম ভাই মাঝ লাইন ছেড়ে কোনাকুনি দাঁড়াই, সমস্বরে জবাব দিলেন আপনার কোনো সমস্যা। না ভাই এইটাই সমস্যা! আফসোস আমরা মানুষ হচ্ছি না!’ শফিক আলম নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘এই আধুনিক সুযোগ সুবিধা আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য না। আমরা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিচ্ছি। আমাদের আগে সভ্যতার দাওয়াই খাওয়াতে হবে। অপরিচ্ছন্ন, বিশৃংখল, অসচেতন নাগরিকের জন্য সাধারণ জীবনযাত্রাই যুক্তিযুক্ত।’
মুক্ত সরকার লিখেছেন, ‘আমি যত দেশের মেট্রোতে চড়েছি, কোনোখানেই এ্যারো দেওয়া থাকে না তবে সব দেশেই মেট্রোতে উঠার যাত্রীরা দরজার দুপাশে মাঝখান খালি রেখে দাঁড়িয়ে থাকে যতক্ষণ না সব যাত্রী মাঝখানের ফাঁকা জায়গা দিয়ে নেমে যায়। মেট্রো ছাড়ে না যাত্রী উঠা শেষ না হলে কারণ যাত্রী উঠতে থাকলে দরোজা বন্ধ করা যায় না আর দরজা বন্ধ না হলে মেট্রো চলে না। কামরার ভেতর পূর্ণ হয়ে গেলে অতিরিক্ত যাত্রী এমনিতেই উঠতে পারে না। যারা উঠতে পেরেছেন তারা দরজা বন্ধ হবার সুযোগ দেন।’
কামরুন্নাহার রুপা লিখেছেন, ‘যেই দেশে জ্যামের মধ্যে ট্রাকওয়ালা আর বাস ওয়ালা মারামারি লাইজ্ঞা যায়, সেই দেশে এইটা আর এমন কি! তবে দোষ শুধু আমাদের না… আমি বলবো দোষ সিস্টেমের… আইনের প্রয়োগ না থাকলে আইন মানার প্রবণতা আসবে না, এটাই স্বাভাবিক। আর মেট্রোরেলের বিষয়টা আলাদা। আমাদের দেশে এটা নতুন। মেট্রোর ব্যাবহার শিখানোর দ্বায়িত্ব কতৃপক্ষের। শুরু থেকেই রেলস্টেশনের মনিটরে এডভার্টাইস না দিয়ে মেট্রো ব্যবহার শিখানো উচিৎ ছিলো। আবার স্পিকারে বলে দিতে পারে।’
দ্বীন ইসলাম রাজন লিখেছেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্যি অন্যান্য দেশে নামার পরেই যাত্রী উঠে। ইউকে, ফ্রান্স, সুইডেন, বেলজিয়াম, স্পেন, ইটালি ও পর্তুগালের অভিজ্ঞতা থেকে বললাম।’ তীর্থ আহনাফ লিখেছেন, ‘বিষয়টা তা নয়, মাঝখানের দাগে দাঁড়াতে মানা এই কারণে ওখানে সেন্সর কাজ করে।’ মাহবুবা বেগম লিখেছেন, ‘প্রতিটি কামড়াতে দুটি গেইট থাকলে নামা এবং উঠার জন্য তো অনেক ভালো হতো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো সিস্টেম মেনে চলা। শৃঙ্খলা মেনে নেওয়া। তাহলে সকল স্থানেই জীবন অনেক সুন্দর।’
সাইফুল ইসলাম শান্ত লিখেছেন, ‘যাত্রী আগে নামবে এটাই ভদ্রতা। আর আগে না নামতে দিলে কোচ খালি হবে কিভাবে? আর গেইট বন্ধ করার সময় জেই সাউন্ড করে তখন চালক মনিটরে সব কয়টা গেইট দেখবে যে যাত্রী উঠা সেশ হয়েছে কিনা তারপর ও যদি যাত্রী উঠা সেশ না হয় গেইট এ হাত দিয়ে রাখলে গেইট আর বন্ধ হবে না।’ হেলাল উদ্দিন লিখেছেন, ‘এভাবেই সবার অভ্যাস হয়ে যাবে। কীসের আগে পরে?।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।