মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী : ইমান আনার পর একজন মুমিন মুসলমানের সর্বপ্রথম ইবাদত হলো নামাজ। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে। আল্লাহ কোরআনুল কারিমে ৮২ বার নামাজের কথা উল্লেখ করেছেন। নিশ্চয়ই নামাজ বেহেশতের চাবি। ইচ্ছাকৃত নামাজ ত্যাগ কুফরির সমতুল্য। আর নামাজ অস্বীকারকারী কাফির।
বিনা কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ কাজা করলে তার জন্য ২ কোটি ৮৮ লাখ বছর জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। তাই মুসলমানরা সাবধান। অনিচ্ছাকৃত, ভুলবশত কিংবা অন্য কোনো কারণে কোনো ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে না পারলে ওই নামাজ পরে আদায় করাকে কাজা নামাজ বলা হয়।
ফরজ অথবা ও ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলে তার কাজা আদায় করা আবশ্যক, কিন্তু সুন্নত কিংবা নফল নামাজ আদায় করা না গেলে কাজা আদায় করতে হবে না। ফরজ নামাজ ছুটে গেলে তা কাজা করা ফরজ আর ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলে তা কাজা করা ওয়াজিব। সারা জীবনের ধারাবাহিকতায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কম কাজা হলে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি। আর পাঁচ ওয়াক্তের অধিক যত দিন এর নামাজের কাজা হোক না কেন ওইসব কাজা নামাজ নিষিদ্ধ সময় ছাড়া সব ওয়াক্ত নামাজের আগে আদায় করা যায়।
কেননা পূর্ববর্তী ওয়াক্তের নামাজ কাজা আদায়ের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট সময় নেই, নামাজের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর যখনই নামাজের কথা স্মরণ হবে তখনই আদায় করে নেওয়া উত্তম। যেমন যদি কেউ ঘুমের কারণে ফজরের নামাজ আদায় না করতে পারে তবে সে ঘুম থেকে যখনই উঠবে তখনই নামাজ আদায় করে নেবে, তবে নিষিদ্ধ সময়গুলোয় অপেক্ষা করবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বা তার কম নামাজ না পড়ে থাকলে তার তারতিবের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। আগের নামাজ আগে ও পরের নামাজ পরে পড়তে হবে।
উদাহরণস্বরূপ কোনো ব্যক্তির ফজর ও জোহরের নামাজ কাজা হয়ে গেছে। এখন আসরের নামাজ পড়ার আগে সর্বপ্রথম ফজরের কাজা, এরপর জোহরের কাজা আদায় করতে হবে এবং তারপর আসরের নামাজ আদায় করবে। কাজা ও ওয়াক্তিয়া নামাজের নিয়ত একই রকম তবে পার্থক্য এতটুকু -যে কাজা নামাজ আদায় করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে আদায় করতে হবে। আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশে আমার অমুক সময়ের অথবা জীবনের কোনো সময়ের ফজরের ফরজ নামাজের দুই রাকাত কাজা আদায় করছি।
এমনিভাবে ফজর জোহর আসর মাগরিব এশা আদায় করা যাবে। কোনো মানুষ যদি দীর্ঘকাল নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকে তার উচিত একটা অনুমান করে নামাজের কাজা আদায় করে নেওয়া, এ অবস্থায় নামাজের কাজা আদায়ের নিয়ম হবে ওই ব্যক্তি যখন প্রতিদিনের নির্ধারিত ওয়াক্তের নামাজ আদায় করবে তখন সেই ওয়াক্তের সঙ্গে মিল রেখে ধারাবাহিকভাবে ছুটে যাওয়া ওয়াক্তের কাজা আদায় করে নেওয়া, এভাবে কাজা আদায়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে। এভাবে অনুমান করে আদায় করতে থাকা, ফলে একসময় পূর্ণাঙ্গ জীবনের কাজা আদায় সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। সুন্নত ও নফল নামাজের কোনো কাজা নেই।
তবে নফল নামাজ শুরু করে ছেড়ে দিলে তার কাজা আবশ্যক। জুমার নামাজের কোনো কাজা নেই। কোনো কারণে জুমার নামাজ ছুটে গেলে ওই দিনের জোহরের চার রাকাত নামাজ আদায় করে নিতে হবে। সফরের দুই রাকাত কসর বাড়িতে এসে আদায় করলে দুই রাকাত কাজা আদায় করতে হবে। এমনিভাবে মুকিম অবস্থার নামাজ সফর অবস্থায় কাজা করতে চাইলে চার রাকাতই পূর্ণাঙ্গ পড়তে হবে। কাজা নামাজ সব সময় পড়া যায় নিষিদ্ধ তিনটি সময় ছাড়া।
এক. সূর্য উদিত হওয়ার সময়। দুই. সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপর থাকে। তিন. সূর্য যখন অস্তমিত হতে থাকে। এ তিনটি সময়ে যে কোনো নামাজ আদায় করা হারাম। যদি কারও দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে নামাজ ছুটে যায়, সুস্থ হওয়ার পর তা কাজা আদায় করে নেবে। আর যদি ইন্তেকাল করে তাহলে অসিয়ত করে যাবে ছুটে যাওয়া নামাজের ফিদিয়া আদায় করে দেওয়ার। মৃত ব্যক্তির ছুটে যাওয়া নামাজের ফিদিয়া আদায় করার অসিয়ত পূর্ণ করা ওয়ারিশদের ওপর ওয়াজিব।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব রকমের অলসতা গাফিলতি ও ব্যস্ততা ত্যাগ করে নামাজ যথাযথভাবে সময়মতো আদায় করার তৌফিক দান করুন।
লেখক : ইমাম ও খতিব কাওলারবাজার জামে মসজিদ দক্ষিণখান, ঢাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।