বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে দেশে থাইরয়েডজনিত সমস্যায় আছেন, এমন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। থাইরয়েডের সমস্যা হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। এ সমস্যাটি সাধারণত থাইরয়েড গ্রন্থির দ্বারা উৎপাদিত হরমোনের পরিমাণ বেশি বা কম হওয়ার কারণে হয়। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় এ সমস্যার জন্য নিয়মিত ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও এ সমস্যা ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করে। অথচ আমাদের দেশজ নিয়মে এই থাইরয়েডজনিত সমস্যা সমাধান সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ধন্বন্তরি হতে পারে ধনিয়া।
থাইরয়েডে আক্রান্ত হলে যে লক্ষণ দেখা দেয়
থাইরয়েড সমস্যার লক্ষণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং এটি থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ বেশি না কম তার ওপর নির্ভর করে।
• হাইপারথাইরয়েডিজম (হরমোনের পরিমাণ বেশি): ওজন কমে যাওয়া, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, ঘাম বৃদ্ধি, উদ্বেগ, কাঁপুনি, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি।
• হাইপোথাইরয়েডিজম (হরমোনের পরিমাণ কম): ওজন বৃদ্ধি, ক্লান্তি, ঠান্ডা লাগা, ত্বক শুষ্ক হওয়া, চুল পড়া, মুখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
উল্লিখিত কোনো লক্ষণ অনুভব করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা, আলট্রাসাউন্ড ইত্যাদির মাধ্যমে থাইরয়েড সমস্যা নির্ণয় করতে পারেন। সমস্যা ধরা পড়লেও ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কারণ, হাতের কাছে কিছু প্রাকৃতিক উপায় আছে, যা দিয়ে নিজেকে সুস্থ রাখা সম্ভব।
থাইরয়েড সমস্যা হওয়ার সাধারণ কারণ
• আয়োডিনের অভাব: আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আয়োডিনের অভাব থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকলাপকে মন্থর করে দিতে পারে।
• অটোইমিউন রোগ: শরীরের নিজের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা থাইরয়েড গ্রন্থিকে আক্রমণ করলে এ সমস্যা হতে পারে। হাশিমোটোর ডিজিজ ও গ্রেভস ডিজিজ, এ রকম দুটি সাধারণ অটোইমিউন রোগ।
• পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারের কারও থাইরয়েড সমস্যা থাকে, তাহলে আপনারও এ সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
• গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন থাইরয়েড গ্রন্থিকে প্রভাবিত করতে পারে।
• অন্যান্য রোগ: ডায়াবেটিস, সিলিয়াক রোগ ইত্যাদি রোগ থাইরয়েড সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
• ওষুধ: কিছু ধরনের ওষুধ (যেমন লিথিয়াম) থাইরয়েডের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে।
• থাইরয়েড গ্রন্থির জন্মগত সমস্যা: কিছু মানুষের জন্মগতভাবে থাইরয়েড গ্রন্থির আকার ছোট বা বড় হতে পারে, যা হরমোন উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
• থাইরয়েড গ্রন্থির সার্জারি: থাইরয়েড গ্রন্থির সার্জারির পর হরমোন উৎপাদনে সমস্যা হতে পারে।
• রেডিয়েশন: রেডিয়েশন থাইরয়েড গ্রন্থিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। নানা কারণে অনেকের এক্স–রে করতে হয়, এতেও থাইরয়েডজনিত সমস্যা হতে পারে।
আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় থাইরয়েড সমস্যা হরমোনের পরিমাণ বেশি না কম, তার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দেওয়া হয় এবং হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বা সার্জারি করা হয়। এটা একটা চূড়ান্ত বিষয়, এ সমস্যায় আক্রান্ত হলে ধনিয়া খেলে উপকার মিলতে পারে।
দেশজ ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় হাজার বছর ধরে থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যার জন্য আস্ত ধনিয়ার পানি খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আপনি জেনে আশ্বর্য হবেন ধনিয়ায় থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিনের মাত্রা প্রাকৃতিকভাবে থাইরয়েড নিরাময়ে কাজ করে। এবং থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
ধনিয়ার পুষ্টি উপাদান
• ভিটামিন ও খনিজ: ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি।
• অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট: ধনিয়ায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট যেমন টেরপিনিন, কোরেসেটিন এবং টোকোফেরল। এই অ্যান্টি–অক্সিডেন্টগুলো শরীরের কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
• আঁশ ও এনজাইম: এগুলো থাকার কারণে হজমে সাহায্য করে ও পেট ভরা রাখে।
খাওয়ার নিয়ম
এক মুঠো (১০ গ্রাম) আস্ত ধনিয়া নিয়ে এক গ্লাস পরিমাণ পানিতে সেদ্ধ করতে হবে। তারপর গ্লাসে ঢেলে ঢেকে ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে ছেঁকে সকালে খালি পেটে পান করতে হবে। এর সঙ্গে কোনো কিছু মেশানো যাবে না। সাত দিন খাওয়ার পরই নিজেই অনুভব করা যাবে শরীরে ধনিয়া কাজ করা শুরু করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।