আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে আতঙ্ক তৈরে হয়েছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চীন ইতিমধ্যে দেশটির অন্তত ২০টি শহর বন্ধ ঘোষণা করেছে। দেশটির মধ্যাঞ্চলের উহানে এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়ার পর এখন এশিয়া ছেড়ে ইউরোপ এবং আমেরিকা মহাদেশেও পৌঁছে গেছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানের এই ভাইরাস এখনও মহামারি আকার ধারণ না করলেও ইতিমধ্যে থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, নেপালে পৌঁছেছে।
এদিকে, মার্কিন একদল বিজ্ঞানী বলেছেন, তারা নতুন এক ধরনের করোনাভাইরাস বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে তিন মাস আগে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে সাড়ে ছয় কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তারা।
চীনসহ যেসব দেশে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস
চীন: আজকের তথ্য অনুযায়ী, চীনে এই ভাইরাসে ১০৬ জন মারা গেছে। সংক্রমিত হয়েছে ৪ হাজারের বেশি মানুষ। চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাওয়ে আজ পর্যন্ত ৬ জনের সংক্রমিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া হংকংয়ে এই ভাইরাসে সংক্রমিত ৮ ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কম্বোডিয়া: কম্বোডিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে, তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজনকে শনাক্ত করেছে।
জাপান: জাপানের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ শনিবার জানায়, তারা সংক্রমিত চার ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে।
মালয়েশিয়া: রোববার মালয়েশিয়া জানায়, তারা সংক্রমিত চারজনকে শনাক্ত করেছে।
নেপাল: নেপাল জানায়, উহান থেকে আসা ৩২ বছর বয়সী এক সংক্রমিত ব্যক্তিকে তারা শনাক্ত করেছে। তাকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
সিঙ্গাপুর: সিঙ্গাপুর এখন পর্যন্ত সংক্রমিত পাঁচজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া: দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমে বলা হয়, সোমবার পর্যন্ত দেশটিতে সংক্রমিত চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কা: শ্রীলঙ্কা সোমবার জানায়, তারা সংক্রমিত এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে।
তাইওয়ান: তাইওয়ান এখন পর্যন্ত সংক্রমিত পাঁচজনকে শনাক্ত করেছে।
থাইল্যান্ড: থাইল্যান্ড এখন পর্যন্ত সংক্রমিত আটজনকে শনাক্ত করেছে। তাদের মধ্যে তিনজন চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকি পাঁচজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
ভিয়েতনাম: ভিয়েতনাম এখন পর্যন্ত সংক্রমিত দু’জনকে শনাক্ত করেছে।
কানাডা: সোমবার কানাডা জানায়, তারা সংক্রমিত এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে। তিনি পুরুষ। তিনি উহান ভ্রমণ করেছেন। তার স্ত্রীও সংক্রমিত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত সংক্রমিত পাঁচ ব্যক্তিকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে। সংক্রমিত ব্যক্তিরা সম্প্রতি উহান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।
ফ্রান্স: ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত তিন ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সেই প্রথম এই ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। তিনজনই সম্প্রতি চীন সফর করেছিলেন।
জার্মানি: মঙ্গলবার জার্মানি প্রথম জানায়, তারা সংক্রমিত এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে আমাদের সুস্থতার জন্য আগে প্রয়োজন এর ছড়ানোর প্রক্রিয়া এবং কীভাবে প্রাণনাশ হচ্ছে সে সম্পর্কে জানা।
করোনা ভাইরাস কী?
করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস – যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটি এক ধরণের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৭টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতিমধ্যেই ‘মিউটেট করছে’ অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে – যার ফলে এটি আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
এটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়াতে পারে এবং বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে এ ভাইরাস একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে ছড়াতে পারে।
এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ।
এক দশক আগে সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেটিও ছিল এক ধরনের করোনা ভাইরাস।
এতে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাজারের বেশি লোক।
আর একটি ভাইরাসজনিত রোগ ছিল মিডল ইস্টার্ন রেস্পিরেটরি সিনড্রোম বা মার্স।
২০১২ সালে এতে মৃত্যু হয় ৮৫৮ জনের।
কীভাবে ছড়াচ্ছে
ধারণা করা হচ্ছে, এই ভাইরাস প্রথম ছড়িয়েছে কোনো বন্যপ্রাণীর দ্বারা, হতে পারে সেটি কোনো সাপ। সাউথ চীনা সি ফুড হোলসেল মার্কেট এ এই সাপ খেয়েই একজনের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়েছে। আর ইতিমধ্যে জানা গেছে যে এই মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে হাঁচি এবং কাশির মাধ্যমে।
১) এটি মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়।
২) সাধারণত ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতো করেই এই ভাইরাস হাঁচি-কাশি, হ্যান্ডশেক এর মাধ্যমে রোগীর মধ্যে ছড়ায়।
৩) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে যদি কোন সুস্থ ব্যক্তি আসে সেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
৪) আক্রান্ত ব্যক্তি ছুঁয়েছে এমন কিছু স্পর্শ করার পর সেই হাত দিয়ে মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করলে সংক্রমণ হতে পারে।
এই ভাইরাসটি মূলত নাক এবং মুখ দিয়ে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে। পরে এটি শ্বাসযন্ত্রে একটি ‘হোস্ট সেল’ বা সহায়ক কোষকে বেছে নেয়। এরপর সেই সেলটি বিস্ফোরণ ঘটার মাধ্যমে কাছাকাছি কোষগুলোকে আক্রান্ত করতে শুরু করে।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
১. রোগীর কাছ থেকে আসার পর ভালো করে হাত ধুতে হবে।
২. নাক-মুখ ঢেকে হাঁচুন, কাশুন।
৩. ডিম, মাংস ভালো করে রান্না করুন। রোগীর থেকে দূরে থাকুন।
৪. নিয়মিত হাত ধুয়ে পরিচ্ছন্ন রাখুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।