লাইফস্টাইল ডেস্ক : নিজেকে আকর্ষণীয় রাখতে কে না চায়। মানুষের সৌন্দর্যের পথে বড় বাঁধা শরীরে ওজন বেড়ে যাওয়া। ব্যস্ত জীবনে ওজন বেড়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। অতিরিক্ত ওজন অনেক সমস্যা নিয়ে আসে। রোগা হওয়ার জন্য অনেকেই নানা পন্থা নিয়ে থাকেন। শরীরের ওজন কমানোর জন্য অনেকেই প্রথমে আলু খাওয়া বন্ধ করে দেন। মনে করা হয়, আলুই মেদবৃদ্ধির কারণ। তবে আলু খেলেই মোটা হয়, এই ধারণা সব ক্ষেত্রে সঠিক নয়। কারণ, পুষ্টিবিদ বা ডায়াটেশিয়ানদের মতে, আলু খেয়েও দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব। ডায়াটেশিয়ানদের মতে, সিদ্ধ আলু খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সিদ্ধ আলু ডায়েট যা আপনার ওজন কমাতেও সাহায্য করবে। অনেকের এটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই বাস্তব। আলু সহজলভ্য হওয়ায় সবার কাছে জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই থেকে শুরু করে সুস্বাদু পাকোড়া, আলু টিকিয়া, ভর্তা, সিদ্ধ এবং আরও নানা রকম মুখরোচক খাবার তৈরি হয় এই আলু থেকেই।
যদি আপনি স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা অনুসরণ করেন এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়া থেকে দূরে থাকেন, তাহলে আলু খেলে ওজন বাড়বে না। বরং সাদা এবং মিষ্টি আলু দুটিই ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া আলু কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফাইবারের দারুন উত্স।
শুধু তাই নয়, আলু হজম নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোলেস্টেরল কমায়। আলু ভিটামিন এ, সি, বি-কমপ্লেক্স এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ যা হাইপোগ্লাইসেমিক সূচক কমায়। এমনকি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আলু একটি দুর্দান্ত বিকল্প।
যুক্তরাজ্যের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম সাদা আলুতে ৭৭ ক্যালরি, ২ গ্রাম প্রোটিন এবং ২ গ্রাম ফাইবার থাকে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা পেশী তৈরির জন্য এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য। এতে চর্বির পরিমাণ খুব কম থাকে। আলুতে থাকা কার্বোহাইড্রেট ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সিদ্ধ ঠাণ্ডা আলু খেলে দীর্ঘক্ষণ খিদে পায় না। এই কারণে বারবার স্ন্যাকস বা অন্যান্য জিনিস খেতে ইচ্ছেও হয় না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সিদ্ধ ঠান্ডা আলুতে উচ্চ পরিমাণে প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টার্চ তৈরি হয়।
আলু মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর পাশাপাশি অন্যান্য উপায়ে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সেদ্ধ আলুতে মিষ্টি আলুর সমান ক্যালোরি থাকে, যা দ্রুত ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করে।
তবে আলু যদি ক্রিম, পনির, মাখন এবং এই ধরনের ফ্যাটি জাতীয় উপাদানের সঙ্গে খাওয়া হয় তাহলে নিশ্চিত ওজন বাড়ায়। এছাড়া চিপস, আলু ভাজাও ওজন বাড়ায়। আসলে আলু খেলে ওজন বাড়বে কিনা সেটা নির্ভর করে এটা আপনি কিভাবে খাচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে। রান্না কিংবা সিদ্ধ আলু কখনোই ওজন বাড়ায় না।
আমেরিকার সিনেমা নির্মাতা, কমেডিয়ান, অভিনেতা তথা লেখক কেভিন স্মিথ দু’সপ্তাহ শুধু আলু খেয়ে ডায়েট করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের পেন জিলেটির লেখা বেস্ট সেলার ‘প্রেস্টো! হাউ আই মেড ওভার হান্ড্রেড পাউন্ডস ডিজঅ্যাপিয়ার’ লেখাটি প্রকাশের পরে এই ডায়েট আরও প্রচলিত এবং জনপ্রিয় হয়। প্রাক্তন অস্ট্রেলিয় স্পোর্টসপার্সন অ্যান্ড্রু ফ্লিন্ডার্স টেলর দাবি করেছিলেন, এক বছর ধরে এই ডায়েট অনুসরন করে তিনি পঞ্চাশ কেজি ওজন কমিয়েছেন। এই ডায়েটে দিনের তিনবেলার খাবারেই আলু রাখতে হয়।
ওজন কমাতে বিশেষজ্ঞেরা এ জন্য ম্যাশড পটেটো, বেকড ও হার্বড পটেটোর মতো লো ক্যালোরি পদ খেতে বলেন। শরীরের ওজন কমাতে সিদ্ধ আলু ডায়েটে টানা পাঁচ দিন খেয়ে থাকতে হবে! কীভাবে সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাব আগেই দিয়ে রেখেছেন ‘ইয়োরোপিয়ান ফুড ইনফরমেশন কাউন্সিলের গবেষকরা। গবেষকরা বলছেন, ওজন কমাতে মাসের পর মাস জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানো, সকাল-বিকাল পার্কে দৌড়ানো, নানা ধরনের যন্ত্রাদি কিনে পয়সা খরচ করানো চাইতে পাঁচ দিন সিদ্ধ আলু খাওয়াটাই অনেক কম কষ্টের। আর বিষয়টি ফলদায়কও।
পটেটো ডায়েটেকে কাজে লাগিয়ে চার কেজি ওজন কমাতে চাইলে টানা পাঁচ দিন যেমন শুধু সিদ্ধ আলু খেতে হবে, তেমনি আরও কিছু নিয়ম মেনে চলার প্রয়োজন রয়েছে, না হলে কিন্তু সেভাবে সুফল মিলবে না। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা একান্ত জরুরি, সেগুলো হল-
আলু সিদ্ধ করার পর সম্পূর্ণ ঠান্ডা হতে দিন। তারপর সিদ্ধ আলু ভাল করে চটকে নিন বা ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। সিদ্ধ আলুর স্বাদ বাড়াতে এর সঙ্গে গোলমরিচও দিতে পারেন। দই বা বাটার মিল্কের সঙ্গে সিদ্ধ আলু মিশিয়ে সকালের নাশতায় বা লাঞ্চে খান।
আলু সিদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন । এটি করার ফলে, এই সবজির জিআই (গ্লাইসেমিক ইনডেক্স) হ্রাস পায় এবং তারপরে এটি স্থূলতা, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি ভাল বিকল্প হয়ে ওঠে। এবার সাদা ভিনেগারে আলু দিয়ে ব্লাঞ্চ করে নিন। এর মাধ্যমে জিআই কমাতেও সাহায্য করে। এতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মেশান। এতে আলুর হজম প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং গ্লুকোজের মাত্রাও হঠাৎ করে বাড়বে না।
আলু সিদ্ধ বানানোর সময় তাতে অল্প করে সামুদ্রিক লবণ মেশাতে পারেন। তবে যদি সম্ভব হয়, তাহলে একেবারে লবণ খাবেন না। কারণ এমনটা করলে ফল মিলবে দ্রুত।
আলু সিদ্ধ ছাড়া কিন্তু এই পাঁচদিন আর কিছু খাওয়া চলবে না। তবে ইচ্ছা হলে লাল চা, হার্বাল টি এবং কপি পান চলতেই পারে। কিন্তু এমন পানীয়তে ভুলেও দুধ বা চিনি মেশালে চলবে না কিন্তু!
আলু কিউব করে কেটে গরম পানিতে আধা ঘন্টা রেখে তারপর রান্নার জন্য ব্যবহার করুন। আপনি যদি মাইক্রোওয়েভ ওভেনে আলু গরম করে নেন তবে এই সবজিতে উপস্থিত চিনি, চর্বি এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যাবে যা সহজেই খেলে ওজন বৃদ্ধির কোনও সম্ভাবনা নেই।
এই বিশেষ ধরনের ডায়েট মেনে চলাকালীন প্রয়োজনীয় সব ওষুধই খেতে পারেন। কিন্তু ভুলেও ডায়াটারি সাপ্লিমেন্ট নেওয়া চলবে না।
টানা পাঁচ দিন আলু ছাড়া আর কিছু যে খাওয়া চলবে না, সে তো না হয় জেনে গেলেন! কিন্তু কতটা পরিমাণে আলু খেতে হবে জানেন কি? এক্ষেত্রে যতক্ষণ না পর্যন্ত পেট ভরছে, ততক্ষণ আলু সিদ্ধ খেতে পারেন। তবে ২টি সিদ্ধ আলু খাওয়ার পর দেখবেন পেট এমন ভরে যাবে যে আর খেতেই পারবেন না!
ডায়েটে এই নিয়মগুলো মেনে আলু সিদ্ধ খাওয়া শুরু করলে ওজন তো কমবেই, সেই সঙ্গে কিন্তু আরও একাধিক শারীরিক উপকারও মিলবে। শরীরের ওজন কমাতে নিয়মিত হালকা শরীরচর্চারও প্রয়োজন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।