জুমবাংলা ডেস্ক : এ পর্যন্ত যতগুলো স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেছেন, প্রায় প্রতিটি স্কুল থেকেই তার বিরুদ্ধে উঠেছে যৌ’ন হয়রানির অভিযোগ। বরগুনার একটি স্কুলের ছাত্রীরা এখনও তাকে নিয়ে বিপদে।
বর্তমানে তিনি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের নুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ইতোমধ্যে ওই স্কুলের অন্তত ২০ জন ছাত্রীকে যৌ’ন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে আবদুল হালিম নামের বিরুদ্ধে এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ।
এমন অভিযোগ ওঠার পরও তিনি ওই স্কুলেই স্বপদে বহাল থাকায় অভিযোগকারীসহ অনেক ছাত্রীই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। অভিভাবকরাও ছাত্রীদের স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না।
গত ২৮ জুলাই এক ছাত্রীর মা এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে যৌ’ন হয়রানির অভিযোগ এনে পাথরঘাটার উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
অভিযোগের সূত্র ধরে নূরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে বৃহস্পতিবার কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে। ৫ম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী জানান, প্রধান শিক্ষক নানা অজুহাতে তাদের গায়ে হাত দেন এবং অশ্লীল কথাবার্তা বলেন। প্রতিদিনই তিনি কাউকে না কাউকে লাইব্রেরিতে ডেকে নেন। কোচিং-প্রাইভেট পড়ানো কালেও চলে তার অসভ্যতা। অন্তত ২০জন ছাত্রী তার এমন বাজে আচরণের শিকার হয়েছে। আর এসব জানাজানি হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক নিজে ও তার অনুগত ডলি রাণী নামের একজন শিক্ষককে দিয়ে ছাত্রীদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও জানান তারা।
এইদিন দুপুর সাড়ে বারটার দিকে ডলি রানী নামের ওই শিক্ষককে স্কুলে পাওয়া যায়নি। বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষক হাজিরা খাতায় দেখা যায়, ডলি রাণীর আগমন সকাল ৯টায় থাকলেও ৪.৩০ মিনিট লিখে ওইদিন তিনি ছুটির আগেই স্কুল ত্যাগ করেছেন। অথচ নিয়মানুসারে বৃহস্পতিবার ২.৩০ মিনিটে স্কুল ছুটির কথা। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাচ্চা অসুস্থ থাকায় ছুটির আগেই তিনি প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে চলে এসেছেন।
একজন নারী অভিভাবক বলেন, ‘আমার নাতনী আমার কাছে থেকে লেখাপড়া করে, ওর বাবা মা চট্টগ্রামে থাকে। একদিন নাতনী স্কুল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে আসে। জানতে চাইলে আমার নাতনী বলে, হেডমাস্টার স্যার আমার গায়ে হাত দিয়েছে। পরে বিষয়টি আমি ওই স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষককে জানাই। পরের দিন নাতনী স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক নাতনীসহ অন্যদের লাইব্রেরিতে ডেকে কথা কাউকে বললে পিটিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার ভয় দেখান।
ওই বিদ্যালয়ের পিটিআই সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানার পর প্রধান শিক্ষক হালিমের সাথে কথা বলি। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তিনি আমার হাতে পায়ে ধরেন। টাকার প্রলোভনও দেখান। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের কারণে অভিভাবকদের অনেকেই বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না, বাচ্চারাও স্কুলে আসতে চায়না, আমরা বুঝিয়ে শুনিয়ে তাদের স্কুলে আনার চেষ্টা করছি।’
নুরুল ইসলাম ধলু, আহমেদ মোল্লা, বাদশা মিয়াসহ কয়েকজন অভিভাবক বললেন, ‘হেড মাস্টার সাহেবের স্বভাব চরিত্র ভালো নয়। এর আগেও তিনি যে সব স্কুলে ছিলেন সেখানেও একই ধরণের অভিযোগ ওঠায় থাকতে পারেননি’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে ৭০ নং হরিদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাথরঘাটা মডেল, পাথরঘাটা আদর্শ,বাদুরতলা, টেংরা, গাববাড়িায় ও পূর্ব ঘুটাবাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন ওই সব স্কুলে তার বিরুদ্ধে যৌ’ন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও ও পূর্ব কালীবাড়ি হাসানিয়া, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে যৌ’ন হয়রাণীর অভিযোগ ওঠায় তিনি বদলি হয়ে বর্তমান স্কুলে আসেন।
নূরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রিয়াজ উদ্দীনের এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার দুপুরে তিনি মুঠোফানে বলেন, অভিভাবকদের অভিযোগের ব্যাপারটি উর্ধতন কর্তপক্ষ তদন্ত করছেন। তার (প্রধান শিক্ষক) বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) মিজানুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেই। তদন্তে হালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আমি (বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা) স্যারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।