শীতের সময় মানেই শুষ্ক আবহাওয়া আর শীতের দিন আসা মানেই গায়ের রং কালো হয়ে যাওয়া আর ত্বক হয়ে পড়ে মলিন ও নিষ্প্রাণ। একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে শীতে শুষ্ক ত্বক এর ফর্সা ও উজ্জ্বল ভাবটা কেমন যেন হারিয়ে যায়। তবে একটু নিয়ম মেনে চললেই এই শীতকালেও ত্বক থাকবে ফর্সা উজ্জ্বল ও মসৃণ।
আমাদের শরীরে ও ত্বকে শীতকালের আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব এসে পরে। শীতে শুষ্ক ত্বক রুক্ষ হয়ে ত্বক তার উজ্জ্বলতা ও মসৃণ ভাব হারিয়ে ফেলে। আর শীতে ত্বকের শুষ্ক শুষ্কতার কারণে চামড়াতে আচোর লাগলে সাদা হয়ে যায়। যা দেখতে লাগে কুৎসিৎ ও বজে। তাই এই সময় আমাদের ত্বকের জন্য কিছু বাড়তি বিষয় ও সতর্কতা মাথায় রাখতে হবে।
কাঁচা টমেট: ত্বকের রং উজ্জ্বল ও চকচকে করার জন্য এক দিন অন্তর অন্তর ব্যবহার করুন কাচা টমেট। টমেটোর রস পুরোটা বের করে নিয়ে তার সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও সামান্য মুলতানি মাটি মিশিয়ে ব্যবহার করুন মুখে হাতে। গোটা শীত জুড়েই থাকবে ঝলমলে।
পাকা পেঁপে: এই শীতে ত্বক উজ্জ্বল চকচকে ও নরম মসৃন রাখতে ব্যাবহার করা যেতে পারে পাকা পেঁপে। পাকা পেঁপে পেস্ট করে নিয়ে তার সাথে মধু সামান্য কাঁচা হলুদ ও কাঁচা দুধ মিশিয়ে মুখে গলায় লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এটা করতে পারেন, ত্বক হয়ে উঠবে ঝলমলে।
সঠিক লোশন নির্বাচন: চেহারা মলিন ও কালো দেখানোর প্রথম কারণ ভুল ক্রিম নির্বাচন। বিশেষ করে যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের কে যেন কাল আর বেশি দেখায়। দেখে শুনে বুঝে নিজের জন্য এমন ক্রিম নির্বাচন করুন যেটা সহজে মুখের সাথে মিশে যায় ও চিটচিটে ভাব তৈরি না করে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ক্রিম পরিবেশের ধুলোবালি মুখে আটকে ফেলে। ফলে নষ্ট হয়ে যায় চেহারার সুন্দর্য্য। ত্বকে ময়লা জমে আপনাকে দেখায় কালো।
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি: এই শীতে ত্বক ভালো রাখতে আর একটি কার্যকরী কৌশল হলো ছাতার ব্যাবহার। রোদে বের হওয়ার আগে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করুন। শীতের রোদ অনুভব করতে যতই মিষ্টি লাগুক আসলে কিন্তু গীর্ষ্ম কালের মতোই ক্ষতিকর। আর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। আর খুব বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন না। এতে আপনার ত্বক সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক রঙ দুটোই হারাবে।
স্ক্রাবিং করুন: শীতের মৌসুমে ত্বকের মরা কোষ টাও বেশি জমে। তাই নিয়ম করে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার স্ক্রাবিং করুন। এক্ষেত্রে কফি ও চিনির রস ও সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কফি ত্বক উজ্জ্বল করেতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েল মাসাজ: গোসলের আগে মুখে ও পুরো শরীরে ভালো করে অলিভ অয়েল মাসাজ করুন। তারপর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ত্বককে সময় দিন তেল শুষে নেবার। তারপর গোসল সেরে ফেলুন, ত্বক একইসাথে থাকবে ঝলমলে ফর্সা ও নরম।
জল পান করুন: শীতকালে আমরা সকলেই জল খাওয়ার পরিমাণ একেবারেই কমিয়ে দেয়। ফলে ত্বক স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হ্রাস করতে থাকে। শীত কালে কম পরিমাণ জল পান করার কারণে শীতে শুষ্ক ত্বক হয়ে যেতে থাকে। তাই শীতকালে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করতে হবে। এই শীতে হাল্কা ও কুসুম গরম জল আর তার সাথে সামান্য পরিমান লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে তা খুব কার্যকারী ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য।
শাক-সবজি ও ফল-মূল: শীত কালে বিভিন্ন মৌসুমী শাক-সবজি ও ফল পাওয়া যায়। এই মৌসুমী উপাদান গুলো আপনার ত্বক উজ্জ্বল মসৃণ ও শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন খাবার তালিকায় শাক সবজি ও ফল যোগ করুন। নিয়মিত মৌসুমী শাক সবজি ও ফল আহার করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
গোলাপজল: শীতে হালকা কুসুম গরম জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন, এবং দিনে দুবার খাঁটি গোলাপ জল তুলা দিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। ত্বক হয়ে উঠবে নরম ও ফর্সা।
অ্যালোভেরা: আমরা সবাই জানি অ্যালোভেরা জেল ত্বকের জন্যে খুব কার্যকারী একটা উপাদান। এলোভেরা ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে খুব ভালো কাজ করে। কাঁচা অ্যালোভেরার জুস ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষন রেখে জল দিয়ে পরিষ্কার করে নিন, সপ্তাহে ২-৩ দিন এটি করলে ভালো ফল মিলবে।
বেসন ময়দা চিনি মধু: সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন বেসন বা ময়দার সাথে অল্প পরিমাণ চিনি ও মধু মিশিয়ে নিন। সম্ভব হলে এই মিশ্রণটি র সাথে সামান্য শসার রস ও দিতে পারেন ভালো ফল পাবেন। মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেলে ত্বকে লাগিয়ে নিন। শুখিয়ে গেলে আলতো করে ঘষে ভালো করে জল দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। এরপর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
সঠিক ফেসওয়াশ ব্যবহার করা: গরম কালে ব্যাবহার করা ফেসওয়াশটি শীতকালে বদলে ফেলুন। বেছে নিন আরও সফট ফেসওয়াশ অতিরিক্ত ক্ষার যুক্ত ফেস ওয়াস ও সাবান আপনাকে করে তুলবে কালো।
আলু ও শসা: ত্বকের যত্ন নিতে আলু ও শসার জুরি মেলা ভার। এই দুটি উপাদান ত্বকের জন্য অতি প্রাচীন একটি উপকরণ। আলু এবং শসা কে পাতলা করে কেটে নিতে হবে। এরপর মুখ পরিষ্কার করে নিয়ে ওই টুকরো গুলোকে মুখের চামড়ায় হলকা করে ঘষে নিন। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
রাতে ত্বকের যত্ন: আদ্রতা ধরে রাখতে রারেও ত্বকের যত্ন নেওয়া জরুরি। এ জন্য রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা কুসুম গরম জলে মুখ পরিষ্কার করে মঈশ্চারাইজার ব্যাবহার করুন।
শীতে শুষ্ক ত্বক আদ্রতা হারিয়ে হয় ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক। তাই এই শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে হয় অন্য যেকোনো সময়ের থেকে অনেক বেশি। এ সময় ত্বকের আদ্রতা ঠিক রাখতে অনেকে বিভিন্ন প্রকার ক্রিম ব্যাবহার করেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন ভুল উপায়ে ক্রিম ব্যাবহারের কারণে উপকারের থেকে ত্বকের ক্ষতি হয় বেশি। তাই শীতকালে ত্বকের সঠিক পরিচর্যার জন্য আরও কিছু কার্যকরী টিপস্ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
হাল্কা গরম জল: শীত কালে ত্বক ভালো রাখতে হাল্কা হাল্কা গরম জলে স্নান করুন। এবং চামড়া ভালো করে পরিষ্কার করতে কুসুম গরম জল কার্যকরী একটি বিশেষ উপায়।
মুখ পরিস্কার রাখা: দিনের যে কোনো সময়ই ক্রিম ব্যাবহার করা যেতে পারে। তাই প্রথমে ক্রিম লাগানোর আগে অবশ্যই মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। ত্বকে ধুলো বালি ও ঘাম জমে এগুলো ত্বকের লোমকূপ বন্ধ করে রাখে। যার ফলে ক্রিম ত্বকে প্রবেশ করতে পারেনা। তাই ক্লিনজার অথবা ফেসোয়াশ দিয়ে মুখের ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে।
হাল্কা ভেজা ত্বক: অনেকে মুখ পুরোপুরি সুখিয়ে যাওয়ার পর ক্রিম লাগান। বিশেষজ্ঞরা বলেন এটি সঠিক নই। শুকনো অবস্থায় ক্রিম লাগলে তা সঠিক ভাবে কাজ করেনা। তাই সবসময় হাল্কা ভেজা ত্বকে ক্রিম লাগানো উচিত।
পরিমাণে কম ক্রিম: অনেকে মনে করেন বেশি পরিমাণে ক্রিম ব্যাবহার করলে এর সুফল বেশি পাওয়া যায়। কিন্তুু এই ধারণা সঠিক নয়। ভালো ফল পেতে হলে বরং অল্প পরিমনে ক্রিম লাগানো উচিৎ। বেশি পরিমনে ক্রিম লাগলে দীর্ঘ সময় ধরে ম্যাসাজ করতে হবে। তাই অল্প পরিমাণে ক্রিম লাগানো ভালো। অল্প পরিমাণে ক্রিম হলে ত্বক তা শোষণ করে নিতে পারে সহজেই।
ম্যাসাজ আলতো ভাবে: ত্বকের বিভিন্ন স্থানে অল্প অল্প করে ক্রিম লাগিয়ে নিন। এবার ক্রিম গুলিকে আলতো ভাবে ম্যাসাজ করুন। এর ফলে ত্বকের সব অংশে ক্রিম সহজেই পৌঁছানো যায়।
ময়েশ্চারাইজার যুক্ত ক্রিম: শীতে শুষ্ক ত্বক থাকার কারণে এই সময় সাধারণ ক্রিম ত্বকের জন্য খুব একটা উপকারী না। তাই এই সময় অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার যুক্ত ক্রিম ব্যাবহার করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।