নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: টঙ্গীতে একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণের শিকার এক কিশোরী কন্যা সন্তানের মা হয়েছে। তবে এখনও জানা যায়নি মেয়েটির পিতৃ পরিচয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় শিশুটির পিতৃ পরিচয় নিশ্চিতের জন্য নবজাতক ও ধর্ষণ মামলায় জেলে থাকা অভিযুক্ত মামুনুর রশিদ (২৮) ও লিটন মিয়ার (১৭) ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দেওয়া হয়।
শুক্রবার (২৪ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টঙ্গী পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সজল হোসেন।
সরেজমিন ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২১ জুন সকাল ১০টায় টিফিন চলাকালে মাদরাসার দ্বিতীয় তলায় শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন মামুনুর রশিদ। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে একাধিকবার ভুক্তভোগীকে ওই কক্ষেই ধর্ষণ করেন তিনি। সর্বশেষ গত বছরের ১৬ নভেম্বর দুপুর ১২টায় একই কক্ষে ভুক্তভোগীকে পুনরায় ধর্ষণ করেন তিনি।
অপরদিকে, বগুড়া সদরের শওরদীঘি পশ্চিমপাড়ার লিটন মিয়া একই বাড়িতে বসবাসের সুবাদে প্রায়ই ভুক্তভোগীকে প্রেমের প্রস্তাব দিত ও রাস্তা-ঘাটে উত্ত্যক্ত করত।
গত বছরের ১৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় পরিবারের লোকজনের অনুপস্থিতিতে লিটন মিয়া ভুক্তভোগীর বাসায় প্রবেশ করে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে একই বাসায় তাকে একাধিক বার ধর্ষণ করে। সর্বশেষ গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় লিটন মিয়া একই বাসায় ভুক্তভোগীকে পুনরায় ধর্ষণ করে।
একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়ে ওই কিশোরী অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি জানতে পেরে গত বছরের ২৬ নভেম্বর ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় পৃথক দুইটি অভিযোগ দেন।
পরদিন অভিযুক্ত মামুনুর রশিদ ও লিটন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা রজু শেষে গাজীপুর জেলহাজতে ও নির্যাতিতা কিশোরীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করে পুলিশ। পরীক্ষায় জানা যায়, কিশোরীর গর্ভে ২৪ সপ্তাহ বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। পরে এ বছরের ১৯ এপ্রিল স্থানীয় হাসপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেয় ওই কিশোরী।
বর্তমানে অভিযুক্তরা জেলহাজতে থাকায় এবং পিতৃ পরিচয় দিতে অস্বীকার করায় নবজাতক সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীর গর্ভ হতে প্রসবকৃত নবজাতক উক্ত মামলার আসামিদের মধ্যে কারো ঔরসজাত কিনা তা নিশ্চিত হতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সজল হোসেন জেলে থাকা আসামিদের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতির জন্য আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত তা মঞ্জুর করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় অভিযুক্ত মামুনুর রশিদ ও লিটন মিয়া এবং নবজাতকের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বৃহস্পতিবার মালিবাগ সিআইডি ভবনে গিয়ে নমুনা দেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
কিশোরীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ের ধর্ষণের সুষ্ঠ বিচার চাই।’
কিশোরীর বাবা বলেন, ‘নবজাতকের বাবা যে হবে সে নিয়ে যাবে। তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমার মেয়ের স্বপ্ন ও জীবন যারা নষ্ট করেছে আমি তাদের বিচার চাই।’
যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য অভিযুক্তদ্বয় ও নবজাতকের নমুনা দেওয়া হয়েছে। ফলাফল নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।