রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: এক কামরার ছোট্ট ইমারত। দৈর্ঘ্য, প্রস্থে ৬ ফুট। ওপরে উঁচু গম্বুজ। তার চারপাশে চারটি ছোট মিনার। এটিকে বলা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ। এর ভেতরে ইমামসহ চার-পাঁচজনের নামাজ আদায়ের জায়গা রয়েছে।
মসজিদটির অবস্থান গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার নুনিয়াগাড়ী গ্রামে। তবে বগুড়ার আদমদিঘীতে দুটি ও মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায়ও এমন ছোট আকৃতির একটি মসজিদ রয়েছে।
পলাশবাড়ীর মসজিদটি ‘কাদির বক্স মণ্ডল মসজিদ’ নামে ২০১৩ সালের ২ জুন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত হয়েছে। যদিও এটার আদি নাম কেউ জানেন না। এটি কবে নির্মিত হয়েছে, সেটাও অজানা।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের লোকজন জানান, এই মসজিদের নির্মাণশৈলী পাশের গোবিন্দগঞ্জের লাল মসজিদ ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সৌর মসজিদের মতো। এ থেকে ধারণা করা হয়, এসব মসজিদ প্রায় পৌনে পাঁচ শ বছর আগে সুবাদার সুজাউদ্দৌলার শাসনামলে নির্মিত।
পলাশবাড়ী সদরের জিরো পয়েন্ট থেকে আধা কিলোমিটার দূরেই মসজিদটির অবস্থান।
সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের গায়ে প্রাচীন নকশা, আরবি হরফ উৎকীর্ণ। পূর্বপাশে একটিমাত্র দরজা। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে দুটি খিলান। ভেতরে ইমামের নামাজে দাঁড়ানোর জন্য মিহরাব ও তার পাশে খুতবা দেওয়ার মিম্বর রয়েছে। পেছনে এক সারিতে চাপাচাপি করে চারজন দাঁড়ানো যাবে।
স্থানীয় লোকজন জানান, ভেতরে মিহরাব ও মিম্বর দেখে এটিকে মসজিদ বলে চিহ্নিত করা যায়। তা ছাড়া এখানে বংশ পরম্পরায় নামাজ পড়েও আসছেন তাঁরা। পরে লোকজন বেড়ে গেলে এটির সামনে একই নামে নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়। পুরোনোটিতে আর নামাজ পড়া হয় না। এটি স্মৃতি হিসেবে রেখে দেওয়া হয়েছে।
এই মসজিদে প্রায় ২০ বছর ধরে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করছেন মো: বেলাল। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি পাশের সাদুল্যাপুর উপজেলায়। ছোটবেলায় এখানে বোনের বাড়িতে এসে মসজিদটিতে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব নেন। তখন মসজিদের সামনে চট বিছিয়ে নামাজ আদায় করা হতো। পরে এটির সামনে নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হলে সেখানে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, মসজিদটির চারপাশের তিনটি মিনারে কিছু সংস্কার করা হয়েছে। দেয়াল ঘষে পরিষ্কার করা হয়েছে।
এই ছোট মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সায়েদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মণ্ডল। তাঁরা জুমবাংলাকে জানান, মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় এটি সংস্কার করা হচ্ছে। এরপর মসজিদের মূল গম্বুজটি সবুজ রঙ করা হবে। চারপাশের মিনার চারটিতেও ভিন্ন রঙ দেওয়া হবে। দেয়ালে করা হবে সাদা রঙ।
সংস্কার কাজে সরকারের সহযোগিতা পেলে আরও সুন্দর হতো বলে জানান সায়েদ ও নুরুল।
নুরুল ও সায়েদুলের বাড়ি নুনিয়াগাড়ী গ্রামেই। দুজনই পঞ্চাশোর্ধ। তাঁরা বলেন, এই মসজিদ কবে নির্মাণ করা হয়েছে, তাঁদের দাদারাও জানতেন না। তবে তাঁরা এই মসজিদের সামনে টিনের ছাপড়ায় নামাজ পড়তেন। মসজিদটির ভেতরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ৬ ফুট করে।
এত ছোট মসজিদ কেন করা হয়েছিল বা এটিই দেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ কি না– এ বিষয়ে কেউ স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি। তবে সায়েদুল মিয়া ও নুরুল ইসলাম জানান, তখন এই অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের লোক কম ছিল। এ কারণে হয়ত এত ছোট মসজিদ করা হয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।