জুমবাংলা ডেস্ক : স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থায় আগামী জুলাই থেকে যোগ দেওয়া চাকুরীজীবীদের সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তারা বিদ্যমান পেনশনের বদলে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে প্রয়োজনে তারা আন্দোলনে যাবেন।
এ ব্যাপারে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতেই সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যেই কাজ করছে সরকার। সার্বিকভাবে বৃহত্তর স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা থেকে সরে আসবেন বলে আশা করছি।
নতুন এ সিদ্ধান্তে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষুব্ধ হলেও চাকরির ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হয়েছেন সরব। বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার এসআরওর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
তারা বলছেন, এ প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার হবেন। একই বেতন স্কেলের আওতাধীন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য সরকারের ভিন্ন নীতি সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। তারা প্রয়োজনে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য আন্দোলনে যাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলো এরই মধ্যে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিবৃতিতে দিয়েছে।
জানা গেছে, বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের পর শুক্রবার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন জরুরি সভায় বসে। সেখানে তারা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের বিশ্লেষণ করে। পরদিন শনিবার এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয়। ফেডারেশন সূত্র জানায়, আগামীকাল বুধবার সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর সমন্বয়ে অনলাইনে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এক সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখান থেকে ফেডারেশনের পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে।
কেন আপনারা সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন– এ প্রশ্নে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষকদের সম্মান করতেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে গেছেন। সেই শিক্ষকদের প্রদেয় সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হবে আর তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে, এটিই আমাদের জন্য লজ্জার। ৩০ জুনের পর আমাদের যে নতুন সহকর্মীরা আসবেন তারা জানবেন তারা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। তাহলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আর আসবে কি?
ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা আমাদের জন্য কিছু করছি না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার জন্য, মেধাবীদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতায় ধরে রাখার জন্য কাজ করছি। তিনি বলেন, যে ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। মেধাবীরা এ পেশায় আসবে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহেদ রানা বলেন, হঠাৎ করে এমন প্রজ্ঞাপনের ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে।
শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে আগে সব শিক্ষক সমিতির মতামত নেওয়া হবে। এ জন্যই সভা ডাকা হয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন সম্পূর্ণ স্থিতিশীল। পেনশনের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থিতিশীল করে তোলার পাঁয়তারা বলে আমরা মনে করছি। অবিলম্বে আমরা এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।