জুমবাংলা ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু গতকাল শুক্রবার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল সফর শুরু করেছেন। তিনি ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ সফর করবেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী মঙ্গল ও বুধবার তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর গত শুক্রবার রাতে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর সফরের কথা ঘোষণা করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড লুর ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ সফর এই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা জোরদার করবে। লুর সফরে অবাধ, উন্মুক্ত ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ থাকবে।
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জোরদারে ডোনাল্ড লু চেন্নাইয়ে মার্কিন কনস্যুলেট কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর তিনি কলম্বোতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারি জোরদারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
ওই বৈঠকগুলোতে তিনি শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করবেন। উন্মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজের কেন্দ্র হিসেবে সক্রিয় নাগরিক সমাজের প্রতিও তিনি সমর্থন জানাবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু তাঁর এবারের দক্ষিণ এশিয়া সফর শেষ ধাপে ঢাকায় আসবেন। এখানে তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সহযোগিতার বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের নেতা ও অন্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের সময় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক হবে। মাসুদ বিন মোমেন গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচনের আগের প্রেক্ষাপটের চেয়ে এখনকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করতে আসছেন ডোনাল্ড লু।
পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত মনোনয়ন
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডেভিড মিলিকে মনোনয়ন দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউস এ মনোনয়নের কথা জানায়।
ডেভিড মিলি প্রায় ১০ বছর আগে ঢাকায় মার্কিন মিশন উপপ্রধান ছিলেন। বর্তমানে তিনি চীনে মার্কিন মিশন উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ডেভিড মিলিকে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মনোনীত করার বিষয়ে বাইডেনের সিদ্ধান্ত মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে এই মনোনয়নের বিষয়ে শুনানি হবে। মনোনীত রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর ভাবনা ও অগ্রাধিকার বিষয়ে সিনেট কমিটির সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেবেন। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সিনেট এ মনোনয়ন চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। মনোনয়ন অনুমোদন হলে ডেভিড মিলি বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে পিটার হাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, পিটার হাস আরো কয়েক মাস বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ডেভিড মিলির মনোনয়ন অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
হোয়াইট হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ডেভিড স্লেটন মিলি মার্কিন ফরেন সার্ভিসের মিনিস্টার-কাউন্সেলর পদমর্যাদার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি চীনের বেইজিংয়ে মার্কিন দূতাবাসে অন্তর্বর্তীকালীন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অর্থনৈতিক ও ব্যবসাবিষয়ক ব্যুরোর বাণিজ্য নীতিবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি নিষেধাজ্ঞা নীতি ও বাস্তবায়ন ব্যুরোর পরিচালক ছিলেন।
ডেভিড স্লেটন মিলি ওয়াশিংটন ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের লিডারশিপ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট স্কুলের সহযোগী ডিন, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন, ইউক্রেনের কিয়েভে মার্কিন দূতাবাসে অর্থনৈতিক বিষয়ের পরামর্শদাতা ও অর্থনৈতিক ব্যুরোতে মুদ্রাবিষয়ক অফিসের উপপরিচালক ছিলেন।
ভিসানীতি নিয়ে নতুন তথ্য নেই
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গত শুক্রবার রাতে বলেছে, ভিসানীতির বিষয়ে নতুন কিছু বলার নেই।
শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্র গত বছর প্রথমার্ধে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করে। ওই নীতির আওতায় শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেওয়া যেকোনো বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে ওয়াশিংটন ডিসি।
বিএনপির উপজেলা নির্বাচন বর্জন এবং অনিয়ম-হয়রানির অভিযোগ তুলে ভিসানীতি প্রয়োগের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে জানতে চান একজন সাংবাদিক। জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, ভিসানীতির বিষয়ে তাঁরা কখনো প্রকাশ্যে বলেন, কখনো আড়ালে রাখেন। এখন নতুন করে কিছু বলার নেই।
সীমান্তে হত্যা নিয়ে মন্তব্য নেই যুক্তরাষ্ট্রের
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার তথ্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন বাংলাদেশি এক সাংবাদিক। সীমান্তে বেসামরিক জনগণকে হত্যা উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে বলে তিনি জানান। তিনি প্রশ্ন করেন, এই অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতকে এসব হত্যাকাণ্ড পর্যালোচনা ও আইন লঙ্ঘনের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহবান জানাবে?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে অবগত। আমি বুঝতে পারি, ভারতীয় ও বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। গুলির ঘটনায় তাদের তদন্তের বিষয়ে তারাই কথা বলতে পারে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।