আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংকটের এই সময়ে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, দেশটি নিজ ভূখণ্ডে মিসাইল ছুড়ে ইউক্রেনের একটি বেসামরিক বিমান ভূপাতিত করেছে। এই ঘটনায় মারা গেছেন ১৭৬ বিমানযাত্রী। যদিও পশ্চিমাদের দাবি ইরান অস্বীকার করেছে। কিন্তু সামরিক সংঘাতে বেসামরিক বিমান ভূপাতিত করার ইতিহাস নতুন কিছু নয়। এর আগেও, বহুবার সেনাদের গুলিতে বা মিসাইল হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে বিভিন্ন দেশের বেসামরিক বিমান। হতাহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। কখনো এই ঘটনা ঘটেছে ইচ্ছাকৃত, আবার কখনোবা অনিচ্ছায়। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস তেমন একটি তালিকা তৈরি করেছে।
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১৭: ১৭ জুলাই ২০১৪
মালয়েশিয়ার এই যাত্রীবাহী বিমানটি আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাচ্ছিল। উড়োজাহাজে যাত্রী ছিলেন ২৯৮ জন। পূর্ব ইউক্রেনের আকাশে থাকা অবস্থায় এটি বিস্ফোরিত হয়। মারা যান বিমানে থাকা সবাই। দৃশ্যত বিনা কারণে বিধ্বস্ত হওয়ায় এ নিয়ে বেশ রহস্য ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়।
তবে সে বছরই জুন মাসে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত দল জানায়, এমএইচ ১৭ বিমানটি আসলে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। রাশিয়াপন্থি স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
সাইবেরিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১৮১২: ৪ অক্টোবর ২০০১
এই উড়োজাহাজটিতে ছিলেন ৭৮ জন যাত্রী। তারা যাচ্ছিলেন ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে রাশিয়ার নোভোসিবিরস্ক শহরে। তবে ব্ল্যাক সি সাগরের রাশিয়া উপকূলে এটি বিস্ফোরিত হয় ও ডুবে যায়। পরবর্তীতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন, তার দেশের বিমান মহড়া থেকে ছোড়া গোলার আঘাতে ধ্বংস হয় রাশিয়ার যাত্রীবাহী বিমানটি। যা ছিল সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত।
ইরান এয়ার ফ্লাইট ৬৫৫: ৩ জুলাই ১৯৮৮
যুদ্ধবিমান ভেবে ইরানের বেসামরিক এই উড়োজাহাজ গুলি করে ভূপাতিত করে যুক্তরাষ্ট্র। মারা যান বিমানে থাকা ২৯০ যাত্রীর সবাই। পারস্য উপসাগরের ওপর দিয়ে চলছিল ইরানের এয়ার এয়ারবাস এ৩০০। তবে রাডারে এটিকে এফ-১৪ যুদ্ধবিমান ভেবে হামলে পড়ে মার্কিন বাহিনী।
কোরিয়ান এয়ার লাইন্স ফ্লাইট ০০৭: ১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আকাশসীমায় প্রবেশ করায় গুলি করা হয় কেএএল ০০৭ বিমানটিকে। মারা যান ২৬৯ বিমানযাত্রী। সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করে জানায়, তারা ভেবেছিল এটি কোনো গুপ্তচর মিশন। পরবর্তীতে অকস্তক সাগরে অনুসন্ধান চালিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি বিমানের ব্ল্যাক বক্স।
ইটাভিয়া ফ্লাইট ৮৭০: ২৭ জুন ১৯৮০
ইতালির এই বিমানটি কেন বিধ্বস্ত হয়েছিল তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল অনেক বছর। দেশটির বোলোগনা থেকে সিসিলি যাওয়ার পথে তাহহেনিয়ান সাগরে এটি ডুবে যায়। ২০১৩ সালে ইতালির সর্বোচ্চ আদালত রায়ে জানান, মিসাইলের আঘাতে দুই ইঞ্জিনের ম্যাকডোনেল ডগলাস ডিসি-৯ বিমানটির এমন পরিণতি হয়। সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য। তবে মিসাইলটি কারা ছুড়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এয়ার রোহডেশিয়া ফ্লাইট ৮২৫: ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ এবং এয়ার রোহডেশিয়া ফ্লাইট ৮২৭: ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯
রোহডেশিয়া হচ্ছে বর্তমান জিম্বাবুয়ে। কারিবা থেকে উড্ডয়নের পরপরই বিমান দুটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। এই উড়োজাহাজ দুটিতে আঘাত হানে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি স্ট্রেলা মিসাইল। দুই ঘটনায় মারা যায় ১০০ জন।
লিবিয়ান আরব এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১১৪: ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪
সিনাই উপত্যকা ঘিরে বিবাদের জেরে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান এই বেসামরিক উড়োজাহাজে গুলি ছোড়ে। ১১৩ যাত্রীর মধ্যে মাত্র ৫ জন বেঁচেছিলেন। বিমানটি লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে কায়রো যাচ্ছিল। ইসরায়েলের দাবি, সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহার করা হবে এমন আশঙ্কা থেকেই বিমানটি ধ্বংস করা হয়।
ইএল এএল ফ্লাইট ৪০২: ২৭ জুলাই ১৯৫৫
লন্ডন থেকে তেল আবিব যাওয়ার পথে নিজেদের আকাশসীমায় প্রবেশ করায় বুলগেরিয়ার যুদ্ধবিমান এই উড়োজাহাজকে ভূপাতিত করে। বুলগেরিয়া সে সময় সোভিয়েত ব্লকের সদস্য ছিল। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা ইসরায়েলকে ২ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়।
ক্যাথি প্যাসেফিক ভিআর-এইচইইউ: ২৩ জুলাই, ১৯৫৪
সে সময় ব্রিটিশ কলোনিভুক্ত ছিল হংকং। ক্যাথি প্যাসিফিক এয়ারলাইন্স হংকংভিত্তিক। চীনা যুদ্ধবিমান গুলি করে এই এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত করে। মারা যায় ১৮ বিমানযাত্রী। পরবর্তীতে চীন জানায় ভুলবশত এমনটি হয়েছে। তাই তারা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়। বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সঙ্গে চীনের আবার বিবাদ বাঁধে। মার্কিনিরা চীনের দুটি সামরিক বিমান ধ্বংস করে।
দ্য জিওলিন হামলা: ২৪ আগস্ট ১৯৩৮
হংকং থেকে চংকং যাচ্ছিল চীনা আমেরিকান ডিসি-২। সেসময় যুদ্ধে বেঁধেছিল চীন আর জাপানের মধ্যে। জাপানের যুদ্ধবিমান গুলি ছুড়ে এই উড়োজাহাজটিতে। মারা যান ১৪ জন। তবে বেঁচে গিয়েছিলেন মার্কিন পাইলট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



