জুমবাংলা ডেস্ক: সিরাজগঞ্জে মাঠের পর মাঠে আবাদ হয়েছে খিরার। উপযোগী আবহওয়া থাকায় খিরার বাম্পার ফলনও হয়েছে। এছাড়া এবার বাজার দর ভালো থাকায় খুশি কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে সারা দেশে এই জেলা থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ টন খিরা।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৬৬৬ হেক্টর জমিতে খিরার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে তাড়াশে ৪৩৯, উল্লাপাড়ায় ২০৪, কাজিপুরে ৫, বেলকুচিতে ৫, কামাখন্দে ৪, শাহজাদপুরে ১ ও সিরাজগঞ্জ সদরে ৬ হেক্টর জমিতে খিরার আবাদ হয়েছে। খিরা বিক্রির জন্য মৌসুমি হাট বসেছে ১৫টি স্থানে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অল্প খরচে বেশি লাভের আশায় কৃষকেরা খিরা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। খিরার বড় হাট এখন লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের চরবর্দ্ধনগাছা। এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খিরা বেচাকেনা চলে। সপ্তাহে ৭ দিনই বসে এই হাট। হাটে কৃষকরা ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমণ খিরা বিক্রি করছেন। বিক্রির জন্য কৃষকদের দিতে হয় না কোনো খাজনা।
তাড়াশ উপজেলার কোহিত, সড়াবাড়ি, তালম সাতপাড়া, সাচানদিঘি, সান্দুরিয়া, খোসালপুর, বারুহাস, নামো সিলট, দিঘুরিয়া, দিয়ারপাড়া, খাসপাড়া, তেঁতুলিয়া, ক্ষীরপোতা, বরগ্রাম গ্রামের বিশাল এলাকাজুড়ে খিরার আবাদ হয়েছে। ক্ষিরার বিক্রি করার জন্য দিঘরীয়া এলাকায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছে আড়ত। প্রতিদিন ভোর থেকে বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা খিরা আড়তে আনতে শুরু করেন। আর আড়ত থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা খিরা কিনতে আসেন। প্রতিদিন কয়েক মেট্রিক টন খিরা বেচা-কেনা হচ্ছে এখানে। দুপুরের পর শুরু হয় ট্রাক লোড। পরে ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক যোগে চলে যায় সিরাজগঞ্জের খিরা।
দিয়ারপাড়া গ্রামের কৃষক করিম হোসেন বলেন, ‘গত মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে খিরা চাষ করেছিলাম। আবহাওয়ার কারণে লাভের মুখ দেখিনি। এবার ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ফলনও বাম্পার হয়েছে। দামটাও খুব ভালো পেয়েছি।’
বারুহাস ইউনিয়নের দিঘড়িয়া গ্রামের বর্গা চাষি ফজর আলী বলেন, ‘গত বছর ১৫ শতাংশ জমির খিরা বিক্রি করে ভালোই লাভ হয়েছিল। এবারও ২৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে খিরার চাষ করেছি। ফলন খুবই ভালো হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছি।’
সান্দ্রা গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, ‘আমি তিন বছর ধরে খিরার চাষ করছি। আগে আবাদ কম হতো। কিন্তু অন্য ফসলের চেয়ে খিরা চাষে অধিক লাভের কারণে প্রতি বছর কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।’
উল্লাপাড়ার চলনবিল গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী বলেন, ‘প্রতি বছর আমি ধান ও সরিষা চাষ করি। এবার আড়াই বিঘা জমিতে খিরা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ১০০ থেকে ১২০ মণ ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে খিরা ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার দর এ রকম থাকলে আড়াই বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ হবে।’
আড়তদার ফজলুল করিম বলেন, ‘গত বারের তুলনায় এবার খিরার আমদানি দ্বিগুণ। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত খিরায় আড়ত ভরে যায়। চাহিদাও বেড়েছে, দামও ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক বস্তা খিরা ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই খিরা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে ট্রাক লোড করে নিয়ে যাচ্ছেন।’
ঢাকা থেকে আসা পাইকার আলতাব ও সোহরাব আলী বলেন, ‘খিরার প্রচুর আমদানি হয়েছে, কিন্তু দাম কমেনি। তবুও এক ট্রাক কিনেছি। ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (উপ-পরিচালক) বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, ‘জেলার ফসলি জমি খিরা চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক কৃষকদের খিরা চাষে উৎসাহ ও পরার্মশ দিয়ে সহযোগীতা করে আসছেন। চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৬৬ হেক্টর জমিতে ক্ষিরা চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৭৫ হেক্টর বেশি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।