আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো বিশ্বের সম্পদশালী ব্যক্তির পরিচয় গোপন করে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে। দেশটির ব্যাংকিং গোপনীয়তা নীতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পদশালীরা দেশটিতে টাকা জমাতে উৎসাহী হন।
সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করে না। টাকার উৎস কী, তা-ও তারা জানতে চায় না। এমনকি দেশটির সাংবাদিকেরা ব্যাংকের তথ্য দিয়ে কোনো প্রতিবেদনও প্রকাশ করতে পারেন না।
কিন্তু কীভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, নিষেধাজ্ঞার কবলে-পড়া ব্যবসায়ী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীসহ অন্য ব্যক্তিবর্গের সম্পদ আগলে রেখেছে, তারা কারা? এবার সেই তথ্য সামনে এসেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে আইকনিক ব্যাংকের ক্রেডিট সুইসের ফাঁস হওয়া নথিতে ১৮ হাজারের বেশি গ্রাহকের তথ্য রয়েছে। ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, তাদের অ্যাকাউন্টে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ সব মিলিয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
স্বঘোষিত এক ‘হুইসেল ব্লোয়ার’ এসব নথি সরবরাহ করে জার্মান সংবাদমাধ্যম সুইডডয়চে সেইটুংকে সরবরাহ করে। এরপর সেসব নথি বিশ্লেষণের কাজে যুক্ত হয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন অর্গানাইজিং ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট এবং নিউইয়র্ক টাইমসসহ ৪৬টি সংবাদ সংস্থা।
তারা ১৯৪০-এর দশক থেকে ২০১০ পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের তথ্য নিয়ে কাজ করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর তথ্য তাদের বিশ্লেষণে আসেনি।
রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পত্রিকাগুলো একযোগে প্রকাশ করে ‘সুইস সিক্রেটস’। প্রতিবেদনগুলোর মূল মেসেজ হলো, সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তার নীতি অনৈতিক এবং তারা অবৈধ অর্থ সুরক্ষা দিচ্ছে।
অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের মধ্যে রয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, তার দুই ছেলে এবং মিসরের সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মুবারকের নাম। জর্ডানের জেনারেল ইনটেলিজেন্স ডিরেক্টরেটের সাবেক প্রধান সাদ খাইর, পাকিস্তানের আইএসআই-এর সাবেক প্রধান জেনারেল আখতার আবদুর রহমান, মিশরের ওমর সুলেইমান, ইয়েমেনের গালিব আল কামিশ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের তথ্যও এসেছে সুইস সিক্রেটে।
সত্তরের দশকের শেষভাগে সিআইএ যখন আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী মুজাহিদিনদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আফগানিস্তানে নিতে সহযোগিতা করেন পাকিস্তানের আইএসআই-এর সাবেক প্রধান।
সুইস সিক্রেটস অনুসন্ধানে সাংবাদিকরা আরও অন্তত ৪০ জনের নাম পেয়েছেন, যারা ডজনখানেক দেশের গোয়েন্দা দফতরের কর্মকর্তা ছিলেন বিভিন্ন সময়ে।
এদের মধ্যে ভেনেজুয়েলার সাবেক আর্মি ক্যাপ্টেন কার্লোস লুই অ্যাগুইলেরা বোর্হাস, ইউক্রেনের সিকিউরিটি সার্ভিসের সাবেক প্রধান ভ্যালেরি খোরশকোভস্কি, মিসরের সাবেক গুপ্তচর আশরাফ মারওয়ানের নাম রয়েছে।
এ ছাড়া ভেনেজুয়েলা, ইউক্রেন, জার্মানি, নাইজেরিয়া, উজবেকিস্তান, ইরাক, জর্ডান, ইয়েমেনের বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার নাম এসেছে সুইস সিক্রেটসে।
ভেনেজুয়েলার সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী নের্ভিস ভিয়ালোবোস, আলজেরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালেদ নজর, বান্ধবীকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত মিশরীয় রাজনীতিবিদ হিশাম তালাত এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞায় থাকা জিম্বাবুয়ের এক ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে।
ভ্যাটিকানের মালিকানাধীন একটি অ্যাকাউন্টের তথ্যও এসেছে ফাঁস হওয়া নথিতে। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৫ কোটি ইউরো ব্যয় করা হয়েছে লন্ডনের একটি সম্পত্তি কিনতে, যেখানে দুর্নীতির অভিযোগে এক কার্ডিনালসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
গার্ডিয়ানে বলা হয়েছে, ক্রেডিট সুইসের ১৫ লাখ গ্রাহকের মধ্যে কেবল একটি অংশের তথ্যই এসেছে ফাঁস হওয়া নথিতে। অ্যাকাউন্ট মালিকদের অনেকে মারা গেছেন, অনেক অ্যাকাউন্ট বন্ধও হয়ে গেছে। অনেক অ্যাকাউন্ট এখনো চালু রয়েছে।
এক বিবৃতিতে নথি সরবরাহকারী হুইসেল ব্লোয়ার বলেন, সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তার নীতি অনৈতিক। অর্থ সুরক্ষা দিয়ে তারা লজ্জাজনক ভূমিকা পালন করে। কর ফাঁকিবাজদের তারা সহযোগিতা করে।
অবৈধ সম্পদের সুরক্ষা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ক্রেডিট সুইসের মুখপাত্র ক্যানডাইস সান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ফাঁস হওয়া অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের তথ্যগুলো কয়েক দশক আগের। সে সময় আইন, ব্যাংকিং নীতিমালা এবং আর্থিক খাতের কাছে প্রত্যাশা ও নিয়মের বিষয়গুলো ‘অন্যরকম’ ছিল।
অসুস্থ মাকে দেখছে না, এক সঙ্গে স্ত্রীদের তালাক দিলেন তিন ভাই!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।