জুমবাংলা ডেস্ক : মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্স কোম্পানির একটি জনপ্রিয় উদ্যোগ স্টারলিংক। এটির উদ্দেশ্য পৃথিবীর প্রতিটি কোণে উচ্চগতির, স্থিতিশীল ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো। বিশেষ করে, এটি দূরবর্তী, গ্রাম্য বা নেটওয়ার্ক সুবিধাবিহীন অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করতে সক্ষম। এই প্রতিবেদনটিতে স্টারলিংক ইন্টারনেটের খরচ এবং ফিচার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
স্টারলিংক ইন্টারনেটের ফিচারস:
উচ্চগতির ইন্টারনেট: স্টারলিংক ইন্টারনেট গতি বেশ উচ্চ। বর্তমানে এটি ৫০ এমবিপিএস থেকে ২০০ এমবিপিএস পর্যন্ত ডাউনলোড স্পিড এবং ১০ এমবিপিএস থেকে ২০ এমবিপিএস পর্যন্ত আপলোড স্পিড প্রদান করে। কিছু অঞ্চলে আরো দ্রুত স্পিড পাওয়া যেতে পারে।
বিলম্ব (Latency): স্টারলিংকের লেটেন্সি বা বিলম্ব ২০ থেকে ৪০ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে থাকে, যা বেশ কিছু সাধারণ ব্রডব্যান্ড কানেকশনের তুলনায় অনেক কম। এই কম বিলম্ব ভিডিও কনফারেন্স, গেমিং এবং রিয়েল-টাইম অ্যাপ্লিকেশনে ভালো পারফর্ম্যান্স নিশ্চিত করে।
স্যাটেলাইট-ভিত্তিক কানেকশন: স্টারলিংক সেবা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়, অর্থাৎ এটি প্রচলিত গ্রাউন্ডলাইন (যেমন কেবল বা ফাইবার) ব্যবহার না করে আকাশ থেকে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে। এটি গ্রাম, পাহাড়ি অঞ্চল এবং দূরবর্তী স্থানগুলোতে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকর।
অটোমেটেড সেটআপ: স্টারলিংক সেবা ব্যবহারকারীকে খুব সহজে সেটআপ করার সুযোগ দেয়। গ্রাহককে একটি ডিশ অ্যান্টেনা (স্টারলিংক ডিশ) এবং একটি রাউটার প্রদান করা হয়, যা সঠিক স্থানে সেটআপ করলেই ইন্টারনেট কানেকশন চালু হয়ে যায়।
বিশ্বব্যাপী কভারেজ: স্টারলিংক বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে অনেক দেশে পরিষেবা প্রদান করছে, এবং এই সেবা আরো বেশি দেশে সম্প্রসারণ পেতে চলেছে। এটি এমন এক সেবা, যা গ্রাম্য, দুর্গম এবং এমনকি সামরিক এলাকায়ও ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে সক্ষম।
স্টারলিংক ইন্টারনেটের খরচ
স্টারলিংক ইন্টারনেটের খরচ দেশ ভেদে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে, তবে ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী এর কিছু মূল খরচ নিম্নরূপ:
স্টারলিংক সার্ভিসের জন্য আপনাকে প্রথমে একটি সেটআপ কীট কেনার প্রয়োজন হয়, যা অন্তর্ভুক্ত থাকে একটি স্যাটেলাইট ডিশ, রাউটার, ক্যাবল, এবং মাউন্টিং উপকরণ।
কিটের দাম: সাধারণত ৪৯৯ ডলার (প্রায় ৬০,০০০ টাকা) হয়ে থাকে। তবে এটি কিছু সময়ের জন্য ডিসকাউন্ট বা অফারের আওতায় পরিবর্তিত হতে পারে।
মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি: স্টারলিংকের সাধারণ মাসিক খরচ প্রায় ৯৯ (প্রায় ১১,৮২৫ টাকা)। কিছু দেশ বা অঞ্চলে এই দাম কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। বিশেষ করে বিকল্প সরবরাহের কারণে খরচের পার্থক্য দেখা দিতে পারে।
পরিবর্তনশীল খরচ: যদি স্টারলিংক সেবাটি কোনো ভ্রমণরত ব্যক্তি বা মোবাইল ব্যবহারকারী হিসেবে নিতে চান, তাহলে আলাদা খরচ এবং কভারেজ হতে পারে। অন্যদিকে বড় ব্যবসায়িক বা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য স্টারলিংক আলাদা প্যাকেজ অফার করে, যার খরচ আরও বেশি হতে পারে এবং প্রাথমিক বিনিয়োগও আলাদা হতে পারে।
স্টারলিংক বিভিন্ন পেমেন্ট মেথড সাপোর্ট করে যেমন ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম।
স্টারলিংক ব্যবহারে যত সুবিধা:
বিশ্বব্যাপী কভারেজ: পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায়।
সহজ সেটআপ: কোনো কেবলের প্রয়োজন নেই এবং ইন্টারনেট কানেকশন খুব দ্রুত শুরু হয়।
অত্যন্ত স্থিতিশীল: স্যাটেলাইট সিস্টেমের কারণে সেবা স্থিতিশীল এবং নেটওয়ার্ক ক্র্যাশ বা গতি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
স্টারলিংক ব্যবহারে যত অসুবিধা:
মূল্য: অন্যান্য ব্রডব্যান্ড সেবার তুলনায় স্টারলিংক এর খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।
বদলানো আবহাওয়া: কিছু সময়ে খারাপ আবহাওয়ায় সিগন্যাল দুর্বল হতে পারে, যেমন ভারী বৃষ্টি বা তুষারপাতের সময়।
গতি সীমাবদ্ধতা: যদিও গতি ভালো, কিন্তু অনেকক্ষেত্রে এটি ফাইবার ব্রডব্যান্ডের তুলনায় কিছুটা কম।
মোদ্দাকথা, স্টারলিংক ইন্টারনেট একটি দুর্দান্ত সেবা যা দূরবর্তী ও গ্রাম্য অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়। তবে এর খরচ কিছুটা বেশি হওয়ায়, সাধারণ গ্রাহক বা পরিবারের জন্য এটি একটি বড় বিনিয়োগ হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।