জুমবাংলা ডেস্ক : সরকার ঘোষিত হজ প্যাকেজ নিয়ে এখন মুখোমুখি মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাব। আগামী বছর হজে যেতে সরকারিভাবে দুটি ও বেসরকারি একটি প্যাকেজ প্রত্যাখ্যান করেছে সংগঠনটি। সরকার ঘোষিত সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজে (মসজিদুল হারামের আশপাশের তিন কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি) চার লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা, আর অপর প্যাকেজে (মসজিদুল হারামের আশপাশের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি) পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে সাধারণ প্যাকেজে চার লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এসব প্যাকেজ প্রত্যাখ্যান করে হাব বলছে, এতে হাজিদের খরচ কমবে না; বরং বাড়বে। উল্টো ভোগান্তিতে পড়বেন তাঁরা। তাই সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা আজ (বুধবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
এজেন্সি মালিকদের একটি পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)’-এ প্রশাসক নিয়োগ করে। বিষয়টি নিয়ে মামলা চলছে।
হাবের সদ্য সাবেক কমিটির নেতারা বর্তমানে ‘সাধারণ হজ এজেন্সি মালিকবৃন্দ’ ব্যানারে প্রশাসক নিয়োগের বিরোধিতা করে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে তাঁরা মতবিনিময়সভায় মিলিত হন। সেখানে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ সারা দেশের অন্তত পাঁচ শতাধিক এজেন্সি মালিক উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন হাবের সদস্য সাবেক সভাপতি হেফাজত নেতা সরদার ফারুক আহমেদ, মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার, জামায়াতের মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন সাইদ, ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান, কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুলসহ অন্যরা।
তাঁরা বলেন, হাব নির্বাচনে পরাজিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিরা ধর্ম উপদেষ্টাকে ভুল বুঝিয়ে হাসিনার ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাদের প্ররোচনায় প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে, জাতির সামনে তা তুলে ধরা হবে। হজ নিয়ে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই হাবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরাও নতুন করে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবেন।
এ প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘সরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া হজ এজেন্সিকে সাধারণ হজ প্যাকেজের অতিরিক্ত সর্বোচ্চ একটি আপগ্রেডেড প্যাকেজ ঘোষণার সুযোগ রাখা হয়েছে। এরূপ আপগ্রেডেড প্যাকেজ ঘোষণা করতে হজ এজেন্সির কোনো বাধা নেই।’
গত ৩০ অক্টোবর আগামী বছর (২০২৫) পবিত্র হজে যাওয়ার খরচসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ হজ প্যাকেজ-১-এর খরচ ধরা হয় চার লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। গতবার ছিল পাঁচ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮৭ টাকা। বিস্তারিত প্যাকেজ তুলে ধরে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছিলেন, হজযাত্রীদের বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা ট্রেনযোগে যাতায়াতসহ অন্যসব ব্যবস্থা করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পর্বে বিমান ভাড়া ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা ও বিমান এজেন্ট কমিশন ৫০০০ টাকা কমানো হয়েছে। আর সৌদি পর্বে দূরে মক্কা-মদিনায় দূরে বাড়ি ভাড়া করায় ৪৮ হাজার টাকা, মিনায় দূরে (জোন-৫) তাঁবু ভাড়া করায় ১৬ হাজার ৩৮৪ টাকা এবং সার্ভিস কম্পানি বদল করায় ২২ হাজার ১১২ টাকাসহ মোট এক লাখ ১৮ হাজার ৪৭৬ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। কিন্তু সৌদি রিয়ালের মূল্য গত হজের চেয়ে (৩২.৫০-২৯.৭৪) = ২.৭৬ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ দেশি টাকায় অন্তত ৪০ হাজার টাকা বেড়েছে। ফলে হজের খরচ মূলত কমেছে ৭৮ হাজার ৪৭৬ টাকা। আর অন্যান্য বছর প্যাকেজে খাবারের টাকা ধরা হলেও বিমান টিকিট দেওয়ার সময়ই খাওয়া বাবদ টাকা প্রত্যেক হাজিদের ফেরত দেওয়া হয়। সে কারণে এবার খাবার টাকা প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘হাব’ মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘প্যাকেজ ঘোষণার বৈঠকে আমরা হাবের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছি, আপনারা বিমান ভাড়া আরো কমান। তা ছাড়া মক্কায় হাজিদের যাতায়াতের জন্য যে বাস থাকবে, তা মিস ফালাহ ব্রিজের নিচে নামিয়ে দেবে, সেখান থেকে হাজিদের প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটতে হবে। অনেকে পথ হারাবেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অনেকে জামাতে পড়তে পারবেন না। আর মিনায় পাথর মারতে প্রচণ্ড রৌদ্রে চার-পাঁচ কিলোমিটার হাঁটতে হবে হাজিদের। এতে অনেক কষ্ট হবে। আমাদের কথা উপেক্ষা করা হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে হজ ও ইসলামী দলগুলো নিউজ সংগ্রহকারী রিপোর্টারদের সংগঠন ‘রিলিজিয়ার্স রিপোর্টারস ফোরাম (আরআরএফ)’-এর সাবেক সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ভুইয়া বলেন, ‘গতবার দেড়-দুই কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ প্যাকেজে খাবারসহ খরচ ছিল পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। এবার একই প্যাকেজ খাবারের ৪০ হাজার টাকা ছাড়াই পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। খাবারের টাকা যোগ করলে দাঁড়ায় ছয় লাখ ১৫ হাজার ৬৮০ টাকা। এটাই হজের মূল প্যাকেজ। এই হিসাবে হজ প্যাকেজ মূল্য তো বাড়লই। সার্বিক বিচারে হজের খরচ কমেনি; বরং বেড়েছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।