লাইফস্টাইল ডেস্ক: রাস্তাঘাটে হাঁটাচলা করার সময় অনেক সময়ই হোঁচট খেয়ে পায়ের গোড়ালি মচকে যায়। গর্তে পড়ে গিয়ে, রিকশা বা বাস থেকে নামতে গিয়ে, সিঁড়ি থেকে নামার সময় ধাপে ঠিকমতো পা না পড়লে, খেলাধুলার সময়, জুতার সমস্যার কারণে, এমনকি বিছানা থেকে উঠতে গিয়েও গোড়ালি মচকাতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, আমাদের শরীরের প্রতিটি জয়েন্টের চারপাশে থাকে লিগামেন্ট। এগুলো জয়েন্টকে শক্ত করে ধরে রাখে। একটা নির্দিষ্ট কোণ পর্যন্ত নড়াচড়া করা যায় সহজেই কিন্তু এর বেশি করতে গেলে ব্যথা লাগে। কোনো কারণে সীমার বাইরে নড়াচড়া হলে লিগামেন্টে টান পড়ে বা কিছু অংশ ছিঁড়ে যায়। এটাকেই মচকে যাওয়া বলে।
পা যেহেতু আমাদের শরীরের পুরো ভার বহন করে তাই পা মচকে গেলে খুবই ব্যথা লাগে। এমনকি পা ফুলে যায়। যন্ত্রণার চোটে ঠিক করে দাঁড়ানোয় যায় না। তাই মচকে গেলে হেলাফেলা করা উচিত না। কারণ এখান থেকেই হতে পারে জটিল সমস্যা।
পা হালকাভাবে মচকালে ঘরোয়া যত্নে সেরে ওঠতে পারে, কিন্তু অবস্থা খারাপ হতে থাকলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।এমনকি সার্জারিও করতে হতে পারে। পায়ের গোড়ালি মচকে গেলে প্রাথমিক করণীয় এখানে তুলে ধরা হলো।
* বিশ্রাম নিন: গোড়ালি মচকে গেলে আপনাকে সেই কাজ তৎক্ষণাৎ বন্ধ করতে হবে যেকাজে এই ইনজুরি হয়েছে। বসে পড়ুন ও গোড়ালিকে বিশ্রামে রাখুন। পায়ের ওপর ভার পড়ে এমন কাজ ভুলেও করা যাবে না, অন্যথায় লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে। কাজে অথবা দুর্ঘটনায় যেভাবেই গোড়ালি মচকাক না কেন, আরো ক্ষতি এড়াতে বিশ্রামের বিকল্প নেই। যন্ত্রণা কমে গেলেও বিশ্রাম না নিয়ে হাঁটাহাঁটি, খাটাখাটুনি করলে গোড়ালির ফোলা থেকেই যাবে। তাই এ সময় অন্তত দুই থেকে তিন দিন বিশ্রাম নিন।
* বরফ সেঁক: পায়ের ফোলা ভাব কমাতে সবচেয়ে উপকারী বরফ। সরাসরি বরফ দেবেন না, একটা পরিষ্কার কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে সেটা দিয়ে সেঁক দেওয়াটা সঠিক উপায়। চোট পাওয়ার প্রথম ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা বা ফোলা না কমা পর্যন্ত প্রতি এক-দুই ঘণ্টা অন্তর ১০ থেকে ২০ মিনিট ধরে আইস প্যাক লাগান। এতে ফোলা ভাব অনেকাংশে কমে যাবে।
* ক্রেপ ব্যান্ডেজ: গোড়ালির ফোলা ভাব কমাতে যেমন সাহায্য করবে আইস প্যাক, তেমনই যন্ত্রণা উপশমে কাজে আসবে ক্রেপ বা ব্রেস। চোট পাওয়ার প্রথম ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা অবশ্যই ব্রেস লাগিয়ে রাখুন। এতে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
* পা ওপরে তুলে রাখুন: পা যত নিচে ঝুলিয়ে বসবেন তত ব্যথা বাড়বে। আর তাই পা চেয়ারের উপর রাখুন। বা চেয়ার না পেলেও টুলে রাখতে পারেন। ঘুমানোর সময় হার্টের থেকে উঁচুতে পা রাখবেন। কোল বালিশের উপর পা রাখুন। এতে খুব দ্রুত ফোলা ভাব কমে আসবে।
* রক্তপ্রবাহের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন: গোড়ালির ফোলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু বাধতে চাইলে খুব টাইট করবেন না। খুব টাইট করে ব্যান্ডেজ বাধলে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হতে পারে। পায়ের একটি নখকে সাদা না হওয়া পর্যন্ত চেপে ধরুন। তারপর ছেড়ে দিন। নখটি দ্রুত আগের রঙে ফিরে আসলে ব্যান্ডেজ বাধা সঠিক হয়েছে। পূর্বের রঙে ফিরে আসতে দেরি হলে বুঝতে হবে খুব টাইট হয়েছে। এরকম হলে ব্যান্ডেজটি খুলে আবার বাধুন। প্রতি ১০ মিনিট পরপর চেক করুন।
কখন চিকিৎসা জরুরি?
পা মচকানোর তিন ধরনের ঘটনা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতার ভিন্নতা রয়েছে। মৃদু পা মচকানো মানে হলো কেবল জয়েন্টের চারপাশের লিগামেন্ট স্ট্রেচ হওয়া বা টান লাগা; এ জন্য তেমন কোনো চিকিৎসারও দরকার নেই। মাঝারি তীব্রতার মানে হলো লিগামেন্ট খানিকটা ছিঁড়েও গেছে এবং গোড়ালির সন্ধিও গেছে মচকে। আর তীব্র মাত্রার মানে হলো লিগামেন্ট সম্পূর্ণই ছিঁড়ে যাওয়ার সঙ্গে গোড়ালির সন্ধি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। পরের দুটির জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা জরুরি।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।