জুমবাংলা ডেস্ক : নতুন বছরের প্রথমদিন থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যের সব ধরনের শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে বাধ্যতামূলক ই-পেমেন্ট পদ্ধতিতে। ২০১৭ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করার আদেশ দিলেও তা সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করতে প্রায় তিন বছর সময় লেগেছে। তবে গত জুলাই থেকেই দুই লাখ টাকার বেশি পরিমাণ শুল্ককর ই-পেমেন্ট পদ্ধতিতে পরিশোধ করার কাজ শুরু হয়েছিল। ই-পেমেন্ট পদ্ধতি সবার কাছে সহজবোধ্য করার পর তা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, সর্বপ্রথম চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কমলাপুর আইসিডিতে সব ধরনের বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে শুল্ক-কর ই-পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধ কার্যকর করা হয়। সেই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফল হওয়ার পর চলতি বছরের জুলাই থেকে দেশের সব শুল্ক হাউস ও শুল্ক স্টেশনে ২ লাখ টাকার বেশি শুল্ক-কর হলে ই-পেমেন্ট পদ্ধতিতে পরিশোধ করার বিধানটিও কার্যকর করা হয়। এখন ২০২২ সালের প্রথম দিন থেকে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে শুল্ক-কর পরিশোধে আর সীমা রাখা হচ্ছে না। এ কারণে নতুন বছর থেকে আমদানি পর্যায়ের সব ধরনের শুল্ক-কর পরিশোধে ই- পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হলো।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস একটি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে দুই লাখ টাকার বেশি শুল্ক কর আরোপ হলে বাধ্যতামূলক ই-পেমেন্ট করতে হবে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সব আমদানিকারকের জন্য ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, আমদানিকারকরা ই-পেমেন্টর মাধ্যমে দ্রুত শুল্ক-কর পরিশোধ করতে পারবেন। এতে জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতাও কমে যাবে এবং আমদানিকারকরা তাদের পণ্যও দ্রুত ডেলিভারি নিতে পারবেন।
‘আগে দুই লাখ টাকার বেশি শুল্ক-কর ই-পেমেন্টে পরিশোধ করা হতো। নতুন বছর থেকে যে কোন পরিমাণের শুল্ক-কর হোক না কেন, তা ই-পেমেন্টের মাধ্যমেই পরিশোধ করতে হবে। ইতিমধ্যে এই পেমেন্ট পদ্ধতির সাথে স্টেকহোল্ডাররা পরিচিত হয়েছেন। এছাড়া এনবিআরও তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। সব মিলিয়ে নতুন বছরে শুল্কায়নে নতুন গতি আসবে।’
শাওমির ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্মার্টফোন এখন বাজারে
জানা যায়, ই-পেমেন্ট ব্যবস্থায় আমদানিকারক কিংবা সিএন্ডএফ এজেন্টের ব্যাংক হিসাব থেকে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি ট্রেজারিতে অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হবে। ফলে আমদানিকারক বা সিএন্ডএফ এজেন্ট নির্বিঘ্নে দ্রুত শুল্ককর পরিশোধ করতে পারবেন। এতে আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ককর পরিশোধে জালিয়াতির ঝুঁকি কমে যাবে।
সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘সব ধরনের কাজে ই-পেমেন্ট পদ্ধতি যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, সেটি খুব ভালো হবে। এতে শুল্কায়ন সহজ হবে। তবে ব্যাংক সার্ভার ডাউন থাকলে শুল্কায়ন কার্যক্রম যাতে বন্ধ হয়ে না যায়, তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। আমরা চাই, সব কাজই ই-মেইল ও ই-পেমেন্টের মাধ্যমে হোক।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্য মতে, প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে। এর মধ্যে ২ হাজার আমদানি পণ্যের এবং ৫ হাজার রপ্তানি পণ্যের। প্রতিদিন গড়ে ১২০ থেকে ১৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয় এই শুল্ক স্টেশনে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ই-পেমেন্ট ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুল্ক কর পরিশোধ করতেই ব্যবসায়ীদের অনেক সময়ক্ষেপণ হতো। এখন এই সংকট কেটে গেছে।
উল্লেখ্য, ই-পেমেন্ট সিস্টেমে আমদানিকারক দেশের যে কোনো ব্যাংক থেকে শুল্ক পরিশোধ করতে পারবেন। তফসিলি ব্যাংকের যে শাখা থেকে শুল্ক পরিশোধ করা হবে সেই ব্যাংকের সাথে সোনালী ব্যাংক চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ শাখার মধ্যে গেইটওয়ে হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরটিজিএস সিস্টেম। ই-পেমেন্টের একমাত্র গেইটওয়ে সোনালী ব্যাংক। এসাইকুডা সফটওয়্যারের মাধ্যমে (শুল্ক সংক্রান্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সফটওয়্যার) আমদানিকারকের ইউজার আইডি ব্যবহার করে এই প্রক্রিয়ায় শুল্ক পরিশোধ করতে সময় লাগবে দুই মিনিট।
ই-পেমেন্ট করতে ছয় ধরনের তথ্য প্রয়োজন হয়। বিল অব এন্ট্রি নম্বর, অর্থবছর, কাস্টম হাউজের অফিস কোড, পরিশোধকৃত শুল্কের পরিমাণ, এআইএন নম্বর এবং ফোন নম্বর। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শুল্ক পরিশোধ করা হলে আমদানিকারকের ফোন নম্বরে শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত কনফার্মেশন এসএমএস পৌছে যাবে। আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসাইকুডা সফটওয়্যার নেটওয়ার্কে শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য আপডেট হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।