জুমবাংলা ডেস্ক : অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ। এবারের মার্চ বাঙালির জীবনে অন্যরকম আবহ নিয়ে এসেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অর্থাৎ ৫০ বছর উদ্যাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
মুক্তিকামী বাঙালির সব চেতনার যে সম্মিলন ১৯৭১ সালের মার্চে হয়েছিল, ৩০ লাখ শহিদ আর লাখো লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মাধ্যমে যে স্বাধীনতা এসেছিল, তা আরও একবার বিনম্রচিত্তে স্মরণ করবে জাতি। এ মাসেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার জন্মশতবার্ষিকীর এই সময়টিও যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা।
ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টির কয়েক মাস পরেই আশা ভঙ্গ হয় বাঙালিদের। তারা বুঝতে পারে এ রাষ্ট্র আসলে তাদের নয়। এটি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধুও।
১৯৪৮ পেরিয়ে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি অনুধাবন করে তার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। এরপর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা এবং উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান পেরিয়ে একাত্তরের মার্চ বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে নতুন বারতা। ওই বছরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধু আসলে বাঙালিকে ধাপে ধাপে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। নানা সময়ে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে নানা আন্দোলন ও সংগ্রাম-সেই কথাই বলে। স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা শুরু হয়েছিল মূলত ছয় দফার মধ্য দিয়েই। উনসত্তরের বিশাল গণ-আন্দোলনে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের পতন হলো।
নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধু সত্তরের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এ নির্বাচনে বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাকে অভূতপূর্ব একটি বিজয় উপহার দিয়েছিল।
৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে লাখো বাঙালির সামনে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি শাসকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।
মরতে যখন শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’
২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানিরা বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে বাঙালি নিধনে নামে। ঢাকার রাস্তায় বেরিয়ে সৈন্যরা নির্বিচারে হাজার হাজার লোককে হত্যা করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষককে হত্যা করে। রাত ১টার পর বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সৈন্যরা গ্রেফতার করে তার বাড়ি থেকে।
অবস্থা টের পেয়ে এর আগেই সুকৌশলে তিনি ঘোষণা করেন, ‘বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা’। পরের দিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার সেই ঘোষণা পুনরায় পাঠ করেন মেজর জিয়াউর রহমান ও এমএ হান্নান।
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা হয় একাত্তরের পহেলা মার্চ। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ওইদিন বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এ সময় ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল।
ইয়াহিয়া খানের ওই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সব দর্শক খেলা ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিক্ষোভে যোগ দেয়। ততক্ষণে হাজার হাজার মানুষ পল্টন-গুলিস্তানে বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছে। সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতাসংগ্রামে রূপ নেয়। সেদিন মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সেখানে গিয়ে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখর করে তোলে গোটা এলাকা। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশের স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, কল-কারখানা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। অচল হয়ে পড়ে দেশ। স্বাধীনতাসংগ্রামের আন্দোলন দিন দিন তীব্র হয়ে ওঠে।
১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বাঙালি যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্য ক্ষণ গুনছিল, তখন সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে এদিন জাতীয় পরিষদের ৩ মার্চের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করেন।
অধিবেশন বাতিলের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ফুঁসে উঠে বাংলাদেশ। বিক্ষোভে উত্তাল হয় রাজপথ। পহেলা মার্চ দুপুর থেকেই পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে সর্বাÍক অসহযোগ শুরু হয়।
তখন সারা দেশের মানুষ আশা-নিরাশা, আশঙ্কা ও সম্ভাবনার দোলাচলে দুলছিল। সচেতন তরুণরা মনে মনে তৈরি হচ্ছিল কঠিন সংগ্রামের সংকল্প গ্রহণে। মানুষের মনে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ ও ৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানে সর্বাÍক হরতাল পালনের ঘোষণা দেন এবং ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভার ঘোষণা দেন। সেই শুরু। একে একে পেরিয়ে আসে বিক্ষুব্ধ ২৫টি দিন। মার্চের উত্তাল দিনের হাত ধরেই নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয় এই বাংলাদেশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।