জুমবাংলা ডেস্ক: এশার নামাজ পড়ার কথা বলে গত ৮ মার্চ মাদরাসা পড়ুয়া ছেলে বিপ্লবকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন বাবা বাবুল হোসেন আকন্দ। পরে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে একটি কোদাল আনিয়ে একটি ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যান ছেলেকে। সেখানে সেভেন আপের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ান। অচেতন হয়ে পড়েলে ভাগ্নিজামাইকে সাথে নিয়ে ছেলেকে কোদাল দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে বাবা বাবুল।
বৃহস্পতিবার ভোরে বাবুল ও তার ভাগ্নিজামাই এমদাদকে গ্রেপ্তার করার পর গাজীপুরের আলোচিত মাদরাসাছাত্র বিপ্লব হোসেন আকন্দ (১৪) হত্যারহস্য উদঘাটন করে পিবিআই। পরে দ্বিতীয় স্ত্রীর প্ররোচনায় কীভাকে ছেলেকে হত্যা করেছেন পুলিশকে সে বর্ণনা দেন বাবুল। পরে আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
শুক্রবার (১১ জুন) বিকেলে প্রেস ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানান গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান।
গ্রেপ্তার বাবুল হোসেন আকন্দ (৪২) গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার পিরুজালী আকন্দপাড়া গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেন আকন্দের ছেলে। তার ভাগ্নিজামাই এমদাদুল হক (৩৫) একই গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, ৮ মার্চ রাতে এশার নামাজ পড়েতে মসজিদে গিয়ে নিখোঁজ হয় মাদরাসাছাত্র বিপ্লব। পরদিন সকালে পাশের একটি বাঁশঝাড়ের কাছ থেকে তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় নিহতের মা খাদিজা আক্তার বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। থানা পুলিশ হত্যারহস্য উদঘাটন করতে না পারায় দায়িত্ব পায় পিবিআই।
তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায়, বাবুল হোসেন ১২ বছর আগে তার আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জুলিয়াকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর জমি বিক্রি করে জুলিয়ার বাপের বাড়ি টাঙ্গাইলে ঘর তৈরী করে সেখানে বসবাস করতেন। কিন্তু জুলিয়া সেখানে বিভিন্ন ছেলেদের সঙ্গে উঠাবসা এবং টিকটকে অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন। কয়েকমাস আগে বাবুল তাকে নিয়ে পিরুজালীতে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। সেখানে এসে বাবুলের ভাগ্নিজামাই এমাদাদের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তুলেন জুলিয়া। প্রায়ই জুলিয়া বাবুলের প্রথম স্ত্রী খাদিজাকে মারধর করতেন। এ নিয়ে খাদিজার সঙ্গে জুলিয়ার ঝগড়াবিবাদ লেগেই থাকত। জুলিয়ার কথা মত চলত বাবুল। জুলিয়ার দুই মেয়ে থাকলেও ছেলে ছিল না। অপর দিকে খাদিজার দুই ছেলে। তাই সব সম্পত্তি হাত করার জন্য খাতিজার এক ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জুলিয়া। প্রথমে পরকীয়া প্রেমিক এমদাদকে হত্যায় রাজি করান। পরে এমদাদ ও জুলিয়ার প্ররোচনায় বড় ছেলে বিপ্লবকে হত্যা করতে রাজি হন বাবা বাবুল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ছেলেকে নিয়ে এশার নামাজ পড়েতে বের হয়ে ছোট স্ত্রীকে তাবিজ করার কথা বলে বিপ্লবকে দিয়ে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে একটি কোদাল আনান। ঘুমের ওষুধ মেশানো সেভেনআপ খাওয়ার পর ঝিমিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়লে বাবুল কোদাল দিয়ে ছেলের গলায় কোপ দেন। বিপ্লব লাফিয়ে উঠলে বাবুল পুনরায় কোদাল দিয়ে কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে বাবুলের কথা মত এমদাদ কোদালটি তার বাসায় লুকিয়ে রাখেন।
এ ঘটনায় জুলিয়াকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার মাকছুদের রহমান।