সকালে সবার পেট পরিষ্কার হয় না। অনেকেই এ সমস্যায় ভোগেন। আসলে সুস্থ শরীর চাইলে সকালে কোষ্ঠ বা পেট পরিষ্কার হতেই হবে। এর সহজ সমাধান হলো প্রতিদিন আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া। খেতে বসলে প্রোটিন বা আমিষের প্রতি দারুণ আগ্রহ কাজ করে আমাদের। প্রোটিন শুনলেই মাথায় চলে আসে মাংস কিংবা মাছ। আর জাংক ফুড তো আছেই।
জেন–জিদের দিনের খাদ্যতালিকার এগুলো শীর্ষেই থাকে বোধ হয়। বড়রাও বাদ যায় না। অথচ আমরা খেয়ালই রাখছি না, আমাদের পরিপাকতন্ত্র কী চাচ্ছে। আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণে অনেকেই অনীহা দেখাচ্ছি। বিশেষ করে বাচ্চা ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই সুপারফুডের প্রতি অনাগ্রহ বেশি দেখা যায়।
সুপারফুড হচ্ছে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার, যা আমাদের শরীর গঠনে সাহায্য করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পুষ্টিবিদদের মতে, সবুজ শাকসবজি, তরিতরকারি—এ সবই সুপারফুড। আমাদের শরীরে প্রোটিন, ফ্যাটজাতীয় খাবার যেমন দরকার তেমনি ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবারযুক্ত খাবারও অত্যন্ত প্রয়োজন। অর্থাৎ সবকিছুই দরকার, পরিমাণমতো। গবেষণায় জানা গেছে, ৯৫ শতাংশ মানুষই সঠিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ দরকারি খাবারের অভাবে ভোগে।
ফাইবারযুক্ত খাবার কেন দরকার
আমাদের সবার পরিচিত কিছু রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনিতে পাথর, শারীরিক দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, এ ছাড়া কলোরেকটাল ক্যানসারের কারণ হতে পারে এই আঁশযুক্ত খাবারের অভাব। রক্তে সুগারের ভারসাম্য রক্ষায় এর ভূমিকা তুলনাহীন। তা ছাড়া পাকস্থলীর কার্যকলাপ ঠিক রাখা তথা সুস্থ–স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতেও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরিপাকতন্ত্র সুস্থ–স্বাভাবিক থাকা মানে সমস্ত শরীর সুস্থ থাকা।
ডা. এমিলি লিমিং একজন মাইক্রোবায়োম সায়েন্টিস্ট ও পুষ্টিবিদ। তাঁর মতে, ‘আপনি আঁশযুক্ত খাবার নিলে আপনার হার্টে অনেক রোগেরই সমাধান মিলবে। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাবে। পাকস্থলীর পরিবেশ সুস্থ রাখতে হলে এর বিকল্প নেই। তা ছাড়া আঁশযুক্ত খাবার আপনি হজম করতে পারবেন না। আপনার পাকস্থলীতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া এই খাবার হজমে সাহায্য করে।
কারণ, আঁশযুক্ত এ খাবারগুলো আসলে এসব ব্যাকটেরিয়ার খাবার। এই ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীতে শর্ট চেইন ফ্যাটি এসিড উৎপন্ন করে; যা কিনা পাকস্থলীতে ক্ষতিকর প্রদাহ থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই প্রদাহ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ রোগের জন্য দায়ী। এ ছাড়া গাটের প্রয়োজনীয় কোষের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে, যা আমাদের মস্তিষ্ককে ক্ষুদ্র পার্টিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচায়।’ কিছু উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যেতে পারে। আর এসব খাবার খাদ্যতালিকায় রেখে নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ থাকবে।
প্রিবায়োটিক ফাইবার: এই খাবার অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য দরকারি। যেমন রসুন, পেঁয়াজ, আদা, জলপাই, ফুলকপি ইত্যাদি।
শস্যজাতীয় খাদ্য: রাই, গম, বার্লি, ওটস ইত্যাদি।
র্যাস্পবেরি: এগুলো কেবল সুস্বাদু নয়, উচ্চ আঁশযুক্ত। যেমন স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি। এগুলো ভিটামিন সি–যুক্ত এবং অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে।
বীজজাতীয় খাদ্য: চিয়া সিড, তোকমা, সানফ্লাওয়ার সিড, শুকনা নারকেল, চেস্টনাট, কাঠবাদাম ইত্যাদি।
শিমজাতীয় খাদ্য: কালো শিম, কিডনি বিন, পিন্টো শিম ইত্যাদিতে রয়েছে পর্যাপ্ত ফাইবার।
প্রতিদিনের আহারেই আঁশযুক্ত খাবার থাকতে হবে। কিন্তু কীভাবে সেটা নিশ্চিত করা যাবে বা কীভাবে খাওয়া যাবে, সেটা জেনে নেওয়া যেতে পারে। আপনাকে প্রতি বেলার খাবারেই যে আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার খেলেই হয়। তবে সকালের নাশতায় আঁশযুক্ত খাবার রাখা সবচেয়ে উপকারী। ডা. লিমিংয়ের মতে, প্রথমত জানুন এই খাবার আপনার জন্য কেন দরকার। দ্বিতীয়ত জানুন আপনার জন্য দরকারি আঁশযুক্ত খাবার কোনগুলো।
আমরা বেশির ভাগ মানুষই মনে করি, ফল ও শাকসবজি শুধু উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার। কিন্তু শস্যদানা, বিভিন্ন জাতের শিম, বাদাম আর বীজে আঁশের পরিমাণ, ফল ও শাকসবজির চেয়েও বেশি থাকে। যেমন লেটুসপাতায় প্রতি ১০০ গ্রামে আছে ১.৮ গ্রাম ফাইবার অথচ মটরশুঁটিতে আছে এর চেয়েও ৪ থেক ৫ গুণ বেশি ফাইবার।
বর্তমান সময়ে আমাদের শুধু স্বাদের কথা চিন্তা করলে হবে না। দরকার সচেতন থাকা। শরীরের অভ্যন্তরীণ কাজ সঠিক রাখতে আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য নিয়ে একটু খোঁজ নেওয়া উচিত। পরিমাণমতো উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার শুধু আমাদের শরীরের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য ঠিক রাখবে না, এর পাশাপাশি উন্নতি ঘটাবে মানসিক অবস্থারও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।