বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাকবুক, আইপডসহ বিভিন্ন ডিভাইস নষ্ট হওয়ার পর সেগুলো নিজ থেকে মেরামতের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অনুমতি প্রদানে Apple এর ভালো ইতিহাস নেই। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে Apple এর কম্পিউটার মেরামত বা পরিবর্তন গ্রাহকদের জন্য অনর্থক চেষ্টা। আইফোন ব্যবহারেও স্বস্তি নেই। ২০২১ সালের শুরুর দিকে আইফোন ১৩-এর ডিসপ্লে পরিবর্তনের ফলে ফেস আইডি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় ছিল। সম্প্রতি ডিভাইস মেরামতে গ্রাহকদের কাছে যন্ত্রাংশ ও টুল বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রযুক্তি জায়ান্টটি। হঠাৎ করেই দীর্ঘদিন থেকে প্রচলিত পদ্ধতিতে পরিবর্তন নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে।
অ্যাপলের এ সিদ্ধান্ত সেলফ রিপেয়ার নিয়ে আন্দোলনকারীদের জন্য বড় অর্জন। এ বিষয়ে জনস্বার্থ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রাইট টু রিপেয়ার ক্যাম্পেইনের সিনিয়র পরিচালক নাথান প্রক্টর বলেন, Apple এর সিদ্ধান্তে এটি প্রতীয়মান যে, সেলফ রিপেয়ার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা ও আইনজীবীরা যা বলে আসছিলেন তা করা সম্ভব। অ্যাপলের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আইফিক্সিট। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটি অ্যাপলের জন্য সঠিক।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বার্থ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (পিআইআরজি) জানায়, রাইট টু রিপেয়ার আইনের পক্ষে ১২টির বেশি প্রদেশে যে আলোচনা হয়েছে সেটির তুলনায় Apple এর পরিকল্পনা আরো সহজ ছিল। নতুন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাপলকে বাহ্বা দেয়ার আগে আইফিক্সিটের আইনি শর্তাবলি গবেষণা করতে চেয়েছিল ও প্রোগ্রামটি পরীক্ষা করতে চেয়েছিল।
এক ই-মেইল বার্তায় নাথান প্রক্টর বলেন, আমি মনে করি, গ্রাহক থেকে শুরু করে, আইনপ্রণেতা ও অংশীদারদের ক্রমাগত চাপের মুখে অ্যাপল তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে। সেই সঙ্গে Apple এর ভেতর থেকেও চাপ আসছিল বলেও জানান তিনি।
নাথান বলেন, ২০১৯ সালে Apple এর ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ ই-মেইলে দেখা যায়, ডিভাইস মেরামতের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি এতদিন যে বিরূপ বা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে আসছিল, Apple এর সঙ্গে জড়িত অনেকেই সেটি সমর্থন করেননি।
সম্প্রতি অ্যাপল তাদের কার্যক্রমে আরো কিছু পরিবর্তন এনেছে। সরকারি তদন্তের কারণে প্রতিষ্ঠানটি পরিবর্তন এনেছে বলে ধারণা করছেন প্রযুক্তিবিদরা। ২০২০ সালে অ্যাপল প্রথমবারের মতো ব্যবহারকারীদের আইফোন ও আইপ্যাডে আলাদা ব্রাউজার ও ই-মেইল অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা দেয়। পাশাপাশি গান শোনার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের পছন্দের বিষয়ে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট সিরিকে আরো উন্নত করেছে।
চলতি সপ্তাহে Apple এর সেলফ রিপেয়ার সার্ভিস প্রোগ্রামে সম্মতি প্রদানের বিষয়টিকে গত বছর চালু করা একটি প্রকল্পের বিস্তৃতি হিসেবেও ভাবা হচ্ছে। সে সময় অ্যাপল যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের শর্ত পূরণ করতে পারছিল, তাদের ডিভাইস মেরামতের প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি যন্ত্রাংশও সরবরাহ শুরু করেছিল। তবে সবার জন্য রিপেয়ার প্রোগ্রাম উন্মুক্ত করে দেয়ার বিষয়টি কয়েক বছরের পরিবর্তন হিসেবেই ভাবছেন প্রযুক্তিবিদরা।
নাথান বলেন, রাইট টু রিপেয়ার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা তাদের চাওয়ার বিষয়ে সচেতন। তাই সবার জন্য উন্মুক্ত রিপেয়ার ব্যবস্থা প্রণয়নের পরিবর্তে অন্য কিছু বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হলে সেটি কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।
এখন পর্যন্ত এটি নিশ্চিত যে এ সিদ্ধান্ত Apple এর প্রথম ধাপ। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মেরামত প্রকল্পের প্রথম ধাপে শুধু আইফোন ১২ ও ১২-এর ডিসপ্লে, ব্যাটারি ও ক্যামেরা ঠিক করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি যন্ত্রাংশও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।