আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আজারবাইজানের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাদের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন খুদাফারিন সেতুর ওপর একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে আজারবাইজানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাচীন খুদাফারিন সেতুগুলোর ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। দেশটির জাবরাইল জেলায় অবস্থিত অনন্য এই স্থাপনাটি ৯০০ বছর আগে নির্মিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খুদাফারিন সেতু দুটি আজারবাইজান-ইরান সীমান্তে জাবরাইলে আরজ নদীর উত্তর এবং দক্ষিণ তীরে বিস্তৃত।
যার একটি একাদশ শতাব্দীতে ১১টি খিলান এবং অন্যটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ১৫টি খিলানসহ নির্মাণ করা হয়েছিল। নদীর স্তর থেকে ১২ মিটার উচ্চতার ছোট ওভারপাসটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০ মিটার এবং প্রস্থ ৬ মিটার।
খুদাফারিন সেতুগুলো আজারবাইজানের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। দক্ষিণ আজারবাইজান এবং উত্তর আজারবাইজানের মধ্যযুগীয় শহরগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী ক্যারাভান সড়কে সেতুগুলো নির্মিত হয়েছিল। পাথর দ্বারা বেষ্টিত আরজ নদীর সংকীর্ণ অংশে নির্মিত প্রথম সেতুটি একাদশ শতক থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত সচল ছিল। আর ইটের সেতুটি তৈরি হয়েছিল ১২ শতকে।
ইতিহাসে সেতুটি কে নির্মাণ করেছেন সে ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কয়েকজন গবেষক দাবি করেছেন, নদীর মাঝখানে প্রাকৃতিক পাথর দিয়ে ভিত্তি স্থাপন করার কারণে দুটি সেতুই খুদাফারিন নামে পরিচিত ছিল। তবে এদের গোপন রহস্য এখনো অজানা। কিছু ইতিহাসবিদ বলেছেন, সেতুগুলো ১০২৭ সালে ফাজল প্রথম তৈরি করেছিলেন। ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া এবং পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে আজারবাইজানের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের উন্নয়নে এই সেতুর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে একাদশ শতাব্দে তৈরি সেতুটি ১৯৩০ সাল পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে অক্ষত এবং ব্যবহারযোগ্য ছিল। কিন্তু পরে সেতুর উপকূলীয় খিলানগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এর পর থেকে স্থানীয় জনগণের কাছে সেতুটি ভাঙা সেতু হিসেবে পরিচত। বর্তমানে সেতুর ১১টি খিলানের মধ্যে মাত্র তিনটি অবশিষ্ট আছে।
১৯৯৩ সালে জাবরাইল দখলের পর আর্মেনিয়ার সাংস্কৃতিক ভাঙচুরের কারণে আজারবাইজানের ঐতিহাসিক ভবন এবং স্মৃতিস্তম্ভগুলো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। প্রায় ৩০ বছর ধরে অবহেলার কারণে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
২০২০ সালের অক্টোবরে খুদাফারিন সেতুটি ‘আকাঙ্ক্ষার সেতু’ হিসেবে পরিচিতি পায়। জাবরাইলকে আর্মেনীয়দের দখল থেকে আজারবাইজানীয় বাহিনী মুক্ত করার পর থেকে এটি শান্তি এবং আশার প্রতীক হয়ে ওঠে।
কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে এক দশকের দ্বন্দ্ব চলছিল। অঞ্চলটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের স্বীকৃত অঞ্চল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর আর্মেনিয়া আজারবাইজানের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে, যা ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আর্মেনিয়া আজারবাইজানের অঞ্চলগুলোর ২০ শতাংশ দখল করে নিয়েছিল। এ ঘটনায় ৩০ হাজারেরও বেশি জাতিগত আজারবাইজানিকে হত্যা করা হয়েছিল এবং ১০ লাখের বেশি মানুষকে ভূমিহীন করা হয়েছিল। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আজারবাইজান ৩০০টিরও বেশি জনবসতি মুক্ত করে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর আর্মেনিয়া, আজারবাইজান এবং রাশিয়ার মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। চুক্তির মাধ্যমে আর্মেনিয়ার দখলকৃত আগদাম, কালবাজর এবং লাচিন জেলাগুলো আজারবাইজান ফেরত পায়। সূত্র : ক্যাস্পিয়ান নিউজ।
m>
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।