জুমবাংলা ডেস্ক: ঝালকাঠির রাজাপুরে এক স্কুলশিক্ষিকা ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে ঢাকার ব্যবসায়ী আজিজুল হককে (৩৮) হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। নিহতের ছোট ভাই জাহিদুল ইসলাম সোহেল বাদী হয়ে শনিবার রাতে রাজাপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। অভিযুক্ত বাবা-মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতেই গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে তোলা হলে তাদের কারাগারে পাঠান বিচারক।
গত শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই স্কুলশিক্ষিকার রাজাপুর সদরের আদর্শপাড়া এলাকার ভাড়া বাসার সামনে থেকে আজিজুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযুক্ত শিক্ষিকার দাবি, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় অভিমান করে বাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন আজিজুল।
নিহত ব্যবসায়ী আজিজুল শরিয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ধোনাই গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে। তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজে প্রডাকশন এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁরা সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করতেন। ব্যক্তিজীবনে আজিজুল তিন ছেলের বাবা। অভিযুক্ত শিক্ষিকার বাড়ি রাজাপুরের বড়ইয়া ইউনিয়নের চর পালট গ্রামে। উপজেলার মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তিনি। বিশখালী নদীতে বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় তারা বরিশালে বসবাস করতেন। চাকরির সুবাদে তিনি রাজাপুরে ভাড়া বাসায় একা থাকতেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত।
নিহত আজিজুল ও অভিযুক্ত শিক্ষিকার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আট বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষিকার সঙ্গে আজিজুলের পরিচয় হয়। এরপর তিনি নিজের চিকিৎসার জন্য মাঝেমধ্যেই ঢাকায় যেতেন। এ সময় আজিজুল শিক্ষিকার চিকিৎসায় সহযোগিতা করতেন। এভাবেই দুই পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি আজিজুল ও শিক্ষিকা দীর্ঘ সময় মুঠোফোনে কথা বলতেন। এ নিয়ে আজিজুল ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে কলহ দেখা দেয়। এদিকে রাজিব নামে এক যুবকের সঙ্গে সম্প্রতি শিক্ষিকার বিয়ে ঠিক করে তাঁর পরিবার। রাজিব গত ২৬ নভেম্বর আজিজুলের মা শিক্ষিকার মোবাইলে ফোন দিয়ে আজিজুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করেন। যোগাযোগ করলে এর ফল ভালো হবে না বলে হুমকি দেন। এদিকে আজিজুল কাউকে কিছু না জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঈগল পরিবহনের একটি নৈশকোচে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে রাজাপুর সদরের আদর্শপাড়া এলাকায় শিক্ষিকার ভাড়া বাসায় পৌঁছেন। এ সময় শিক্ষিকার বাবা মেয়ের বাসায় ছিলেন। আজিজুল বাসায় এসে রাজিবকে বিয়ে না করার জন্য শিক্ষিকাকে অনুরোধ করেন। এতে রাজি না হওয়ায় মেয়ে ও তাঁর বাবার সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় আজিজুলের।
মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে আজিজুলকে হত্যা করে তিনতলা ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেন শিক্ষিকা ও তাঁর বাবা।
এদিকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আজিজুলের লাশ উদ্ধারের পর থেকেই পলাতক ছিলেন শিক্ষিকা ও তাঁর বাবা। তবে শুক্রবার গভীর রাতে বরিশাল থেকে শিক্ষিকা ও তাঁর বাবা শহিদুল বিশ্বাসকে আটক করে পুলিশ। পরে মামলা দায়ের হলে আটককৃতদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষিকা জানান, আজিজুল তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এতে রাজি না হওয়ায় অভিমান করে তিনতলা বাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন আজিজুল।
ওই শিক্ষিকা রাজাপুর সদরে যে ভবনে ভাড়া থাকতেন এবং এর আশপাশের বাসিন্দাদের ধারণা, আজিজুল-শিক্ষিকা-রাজিব এই ত্রিভুজ সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে পড়েই প্রাণ গেছে আজিজুলের।
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে স্কুলশিক্ষিকা ও তাঁর বাবাকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিকটিম আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, পুলিশি তদন্ত ও আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।