নারীদের ওপর নতুন ফতোয়া জারি করল আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। এবার তাদের পুকুরে গোছল-কাপড় ধোঁয়াতেও নিষেধাজ্ঞা! এখন থেকে গৃহস্থালির কাজকর্মে আর জলাশয়ে যেতে পারবেন না নারীরা। এক কথায় পুকুরে নামা নিষেধ! চলতি মাসের ৫ তারিখ তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এ নির্দেশ দেন।
দেশটির কান্দাহার প্রদেশে খাল, পুকুর এবং জলাধারের মতো ‘পাবলিক প্লেসে’ গোসল, কাপড়, কার্পেট এবং গৃহস্থালির জিনিসপত্র ধোয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আদেশ লঙ্ঘন করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলেও কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। আফগান টাইমস।
পানি স্বল্পতার কারণে কান্দাহারের নারীরা প্রজন্ম ধরেই ঘরের ধোঁয়ামোছার কাছে জলাধারের পানি ব্যবহার করে। সেখানে তারা যে শুধুমাত্র ঘরের কাজে যান বিষয়টি তা নয়। সামাজিক মেলবন্ধনের জায়গা এটি। কাজের ফাঁকে একে অপরের সঙ্গে নিজেদের সুখ-দুঃখের গল্পগুলো ভাগাভাগি করে নেন। এতে পারস্পরিক সহায়তা এবং সম্প্রীতির বন্ধনও দৃঢ় হয়। কিন্তু নতুন এই নিষেধাজ্ঞায় অন্তপুরের গৃহিণীদের প্রতিদিনের মিলনমেলায় দেওয়াল হয়ে দাঁড়াল তালেবান!
স্থানীয় এক নারী আফগান টাইমসকে বলেন, ‘আমরা বাইরে গিয়ে খাল এবং পুকুরে কাপড় ধুতাম। এটি ছিল অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে দেখা করা, কথা বলা এবং আমাদের সমস্যাগুলো ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ। এখন আমাদের ঘরের ভেতরে গোসল করতে বাধ্য করা হয়। যেখানে খুব কম পানি এবং কোনো জায়গা নেই। এটি আমাদের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত করেছে।’ তিনি আরও বলেন, কান্দাহারে পানির অভাবে এই নিষেধাজ্ঞা অনেক বাড়িতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে।
আরেক নারী বলেন, ‘জলাধারে যাওয়া কেবল গোসল করা কেবল কাপড় পরিষ্কার করার জন্য ছিল না। এটি একটি সামাজিক মেলবন্ধনের বিষয় ছিল। এখন আমাদের কাছ থেকে সেই ছোট স্বাধীনতাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ নাগরিক সমাজের কর্মীরাও এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। কান্দাহারভিত্তিক কর্মী মোহাম্মদ ওয়াসিল নায়াব এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘জনসাধারণের জীবন থেকে নারীদের অদৃশ্য করে ফেলার আরেকটি প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞাগুলো কেবল নারীর স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে না এটি আমাদের সম্প্রদায়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে ভেঙে দেয়।’
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (ইউএনএএমএ) বারবার সতর্ক করেছে তালেবানের নীতিগুলো নিয়মতান্ত্রিক লিঙ্গ নির্যাতনের সমান।
তারা জানিয়েছে, তালেবানের এই পদক্ষেপ শুধু আন্তর্জাতিক আইনই লঙ্ঘন করে না, ইসলামী নীতিমালার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এখানেই শেষ নয়, প্রদেশটিতে আরও এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালেবান সরকার। নারীদের পোশাক সেলাই করতে পারবেন না পুরুষ দর্জি। গত মাসে গোপনে নারীদের কাপড় সেলাই করায় দশ দর্জিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। একই দশা উরুজগান প্রদেশেও। দাঁতের চিকিৎসার জন্য একজনও নারী ডেন্টিস্টও নেই। আবার তালেবানের নিষেধাজ্ঞায় অনেকে পরিবারই নারীদের পুরুষ ডেন্টিস্টদের কাছে যেতে দেন না। ফলে অসংখ্য নারী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ফোন রিস্টার্ট দিলে কী হয়? জানুন এর ৬টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা
উরুজগানের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ডা. মোহাম্মদুল্লাহ রোহানি বলেন, ‘পুরো প্রদেশে, আমাদের একজনও মহিলা দন্ত চিকিৎসক নেই। যাদের দাঁতের যত্নের প্রয়োজন, তারা বাধ্য হয়ে পুরুষ ডাক্তারের কাছে যেতে বাধ্য হন। তবে, বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে এই বিকল্পটিও নেই।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।