জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যায় অংশ নেয়ায় হতবাক অনিক সরকার এবং মেহেদী হাসান রবিনের পরিবার। এরা দুজনই বুয়েটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। অনিকের বিভাগ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। আর রবিনের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। দুজনেরই বাড়ি রাজশাহী। আবরার হত্যায় এরা দুজন গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই মুষড়ে পড়েছে তাদের পরিবার।
অনিক বুয়েট ছাত্রলীগের প্রচার ও গবেষণা সম্পাদক পদে ছিলেন। আর রবিন ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। ইতিমধ্যেই তাদের সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। আর এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়ায় চুরমার হয়ে গেছে তাদের বাবা মায়ের স্বপ্ন। মেধাবি এ দুই শিক্ষার্থী আরেক মেধাবি শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার মতো লোমহর্ষক ঘটনা ঘটিয়েছেন তা তারা এখনও মানতেই পারছেন না।
অনিক সরকারের বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বড়ইকুড়ি গ্রামে। আবরার ফাহাদকে মদ্যপ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি মারধর করেছে অনিক সরকার। অথচ এলাকার লোকজন তাকে ‘ভালো ছেলে’ হিসেবেই জানেন। অনিকের বাবা আনোয়ার হোসেন একজন ব্যবসায়ী। অনিকরা দুই ভাই। অনিক ছোট। তার বাবা আনোয়ার হোসেনের কাপড়ের দোকান রয়েছে। আছে পেট্রোল পাম্প এবং সারের ব্যবসা। সহজ-সরল প্রকৃতির আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে অনিককে নিয়েই ছিল বড় স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন ভেস্তে গেছে।
অনিকের বিষয়ে জানতে চাইলে তার বাবা বলেন, এই ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক আশা-ভরসা ছিল। সব ধুলোই মাটি হতে চলেছে। আমি ভাবতেও পারি না এমন মেধাবী একটা ছেলে আরেকজন মেধাবীকে হত্যা করবে। তিনি বলেন, ছেলের তো কোনো অভাব ছিল না। আমি তাকে কোনো অভাব বুঝতে দেইনি। কিন্তু কেন সে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লো? আবার কেনই বা আরেকজনকে হত্যা করতে গেলো? হয়তো সঙ্গদোষ ছিল। তাই ঘটনাটি আমি সঠিক তদন্তের দাবি জানাই।
আনোয়ার হোসেন জানান, অনিক মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়েছিল। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করে বুয়েটে ভর্তি হয়। ছেলে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে এটা জানতেন না আনোয়ার। এ বিষয়ে সতর্ক করতেন। মাস দুয়েক আগে শুনেছিলেন তার ছেলে ‘ক্যাপ্টেন’ হয়েছে। কিন্তু কিসের ক্যাপ্টেন হয়েছে সেটাও জানেন না আনোয়ার।
অন্যদিকে আবরার হত্যায় অভিযুক্তদের মধ্যে রবিনের বাড়িও রাজশাহীতে। তার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর কাটাখালি থানার কাপাশিয়া পূর্বপাড়াম মহল্লায়। এলাকাটি পড়েছে পবা উপজেলার কাটাখালি পৌরসভার এলাকার মধ্যে।
রবিনের বাবা মাকসুদ আলী পার্শ্ববর্তী পুঠিয়া উপজেলার ভরুয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। রবিন তার একমাত্র সন্তান। রবিন বাবার স্কুল থেকেই এসএসসি পাস করে। এরপর রাজশাহী নিউ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বুয়েটে ভর্তি হয়। আর মাত্র সাত মাস পরেই রবিন পাস করে বের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার খবরে রবিনের পরিবারেও নেমে এসেছে হতাশার ছাপ।
বাবা মাকসুদ আলী বলেন, শুনছি আমার ছেলে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু কেন সে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত হবে? একমাত্র ছেলে বলে তাকে নিয়ে আমাদের বড় স্বপ্ন ছিলো। এখন বিশ্বাস করতে পারছি না সে এমন একটি অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে। তাকে তো আমরা পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার করতে ঢাকায় পাঠিয়েছি। সে হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে এটা কখনোই ভাবতে পারিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।