জুমবাংলা ডেস্ক : আফসোস আর কান্না আর অনুতাপে জরজর বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আরাফাত ও মহিউদ্দিন। এই হলেই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যতনে নিহত আবরার ফাহাদের মৃত্যুর আগ মুহূর্তের প্রত্যক্ষদর্শী তারা। তাদের আফসোস আর কয়েক মিনিট আগে বেরোলে তারা আবরারকে হয়তো বাঁচাতে পারতেন।
বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবরারকে পিটিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় সিঁড়িতে ফেলে রেখে যায়। কিছুক্ষণ পর মহিউদ্দিন তাকে দেখেন কাতরাতে। আর আরাফাত যখন আবরারকে দেখেন, তখন তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
গতকাল বেলা দেড়টার দিকে বুয়েটের এই দুই ছাত্র প্রতিবাদী বিক্ষোভ সমাবেশে ওই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় সেখানে উপস্থিত আরও অনেকে ফুপিয়ে ওঠেন।
আরাফাত ও মহিউদ্দিন পড়ালেখা করে রাত আড়াইটার দিকে কয়েক মিনিট আগে-পরে বেরিয়েছিলেন খাবারের জন্য। তারা সিঁড়ির কাছে দেখেন কেউ একজন কাতরাচ্ছেন। এ সময় ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘ও নাটক করতাছে’। তারা ভাবতেও পারেননি কাউকে মেরে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।
এখন আফসোস আর অনুতাপের অনলে জ্বলছেন দুজন। ঘুমাতে পারছেন না কেউ।
আবরারের জীবনের শেষ মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, ‘তখন রাত আড়াইটার মতো বাজে। খেতে বের হয়েছি। দেখি একজন কাতরাচ্ছেন। ছাত্রলীগ নেতা জিয়ন বলেন, ‘ও (আবরার) নাটক করতাছে।’
কাঁদতে কাঁদতে মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমি ওরে বাঁচাইতে পারিনি। মাফ করে দিস, ভাই। আমারে সবাই মাফ কইরা দিস। আমি জীবিত দেইখাও ওরে বাঁচাইতে পারি নাই।’
শেষ মুহর্তে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন আরাফাত। নিচে খাবার আনতে বেরিয়ে দেখেন তোশকের মধ্যে একজন পড়ে আছেন। তিনি ধারণা করেছিলেন হয়তো কেউ মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। যখন আবরারের হাত ধরেন, তখন হাত পুরো ঠান্ডা, পা ঠান্ডা। শার্ট-প্যান্ট ভেজা। তোশক ভেজা। মুখ থেকে ফেনা বের হয়েছে।
আরাফাত বলেন, ‘ওকে বাঁচানোর জন্য বুকে চাপ দিই। আশপাশের সবাইকে বলি, ডাক্তার ম্যানেজ করো। এরপর ডাক্তার এসে দেখে বলেন, ১৫ মিনিট আগেই সে (আবরার) মারা গেছে।’
আফসোস করে কাঁদতে কাঁদতে আরাফাত বলেন, ‘তিন-চারটা মিনিট আগে যদি খাবার আনতে যাইতাম, তাহলে পোলাডারে বাঁচাইয়া রাখতে পারতাম। এই তিন মিনিটের আফসোসে তিন দিনে তিন ঘণ্টাও ঘুমাইতে পারি নাই।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।