বিনোদন ডেস্ক : গার্ডেনরিচের পরিবহণকর্মী আমির খানের বাড়ি, নিউটাউনের অফিস-সহ অন্যান্য অঞ্চলে তল্লাশি চালিয়ে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর আধিকারিকরা। টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য আনা হল একটি ট্রাক। সেই ট্রাকে মোট ১০টি সিন্দুক আছে বলে জানা গিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার সকালে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কলকাতা শহরের ছ’টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে ইডি। অভিযান শুরু হয় পরিবহণ ব্যবসায়ী আমির খানের গার্ডেনরিচের বাড়িতে। দীর্ঘ তল্লাশি অভিযানের পরে সেখান থেকে প্রায় এগারো কোটি টাকা উদ্ধার করেছেন ইডি আধিকারিকরা।
আমিরের বাড়িতে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ ব্যাঙ্কনোট গোনার জন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের স্থানীয় শাখার আধিকারিকদের ডাকা হয়। তাঁরা মোট আটটি টাকা গোনার যন্ত্র নিয়ে আসেন।
আমিরের দোতলা বাড়ির একটি ঘরের খাটের তলায় অসংখ্য প্লাস্টিকের থলিতে ভরা ছিল থরে থরে নোটের বান্ডিল। তাতে ৫০০ এবং ২০০০ টাকার নোট রাখা ছিল।
ইডির সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ‘ই-নাগেটস’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিতেন আমিররা। প্রাথমিক ভাবে ওই অ্যাপের মাধ্যমে খেলায় অংশগ্রহণকারী গ্রাহকেরা কমিশন পেতেন।
অ্যাপটির মাধ্যমে নিজেদের ওয়ালেটে অনায়াসে সেই টাকাও তুলতে পারতেন গ্রাহকরা। এ ভাবেই গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের পর আমিররা তার ফায়দা তুলতেন বলে ইডির দাবি। আরও মোটা কমিশনের লোভে গ্রাহকরা বড়সড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করলে আচমকাই টাকা তোলা বন্ধ হয়ে যেত বলে অভিযোগ।
শনিবার তল্লাশি অভিযানের সময় একাধিক ভুয়ো অ্যাকাউন্টের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ইডি। এই বিষয়ে আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে ইডির সূত্রে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আমির-সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পার্ক স্ট্রিট থানায় একটি এইআইআর দায়ের করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯-সহ প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গের একাধিক ধারা যুক্ত করা হয়।
শনিবার সকাল থেকেই নিউটাউন, পার্ক স্ট্রিট, মোমিনপুরের বন্দর এলাকা, গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল গলি-সহ ছয় জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালান ইডি আধিকারিকেরা। তবে আমিরের গার্ডনরিচের বাড়িতে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের পর যাবতীয় অভিযানের কেন্দ্রে চলে আসে শাহি আস্তাবল গলির আমিরের দোতলা বাড়িটি।
আমির খানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চলার সময় পরিবারের এক মহিলা সদস্য জ্ঞান হারান। বাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের দেখে এবং সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখে ঘাবড়ে যান ওই মহিলা। দৃশ্যতই তাঁকে দেখে বিধ্বস্ত মনে হচ্ছিল। তার পরেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই মহিলা।
ইডি আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয়েছে। তাঁদের অনুমান, এই বিপুল পরিমাণ টাকা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই কাজ শুরু হওয়ার আগেই তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি।
সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে নগদ টাকা উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের একাধিক ফ্ল্যাট থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৫২ কোটি টাকা এবং প্রভূত পরিমাণ সোনার গয়না উদ্ধারের ছবি দেখা গিয়েছে।
শনিবার শহরে ফের টাকা উদ্ধারের ঘটনা ঘটায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য জুড়ে। আমিরদের মাথায় কোনও রাজনৈতিক প্রভাবশালীর হাত আছে কি না, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতরও। তৃণমূলকে কটাক্ষ করে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী জানান, দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানীতে কালো টাকার রাজত্ব গড়ে তুলেছে তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী, কলকাতার মেয়র তথা স্থানীয় বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম অবশ্য সমগ্র ঘটনায় ‘বিজেপির হাত’ দেখেছেন।
এই বিপুল টাকার মালিক কে, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে ইডি আধিকারিকদের মধ্যেও। এই বিষয়ে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি আমির খান। দেখাতে পারেননি প্রয়োজনীয় নথিও। বিপুল অর্থের উৎস জানতে আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে ইডির তরফে। সূত্র : আনন্দবাজার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।